এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের নিহত পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামের বাড়ি রাজশাহীতে।
সোমবার (২১ জুলাই) বিকেলে নগরীর উপশহরের তিন নম্বর সেক্টরের ‘আশ্রয়’ নামের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনরা ওই বাড়িতে এসে ভিড় করছেন।
সেখানে কথা হয় গাড়িচালক আলী হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার খবরে স্যারেরা (নিহত পাইলটের পরিবারের সদস্যরা) বিশেষ বিমানে ঢাকায় গেছেন। বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে একটি বিশেষ ফ্লাইটে রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে তারা ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। সঙ্গে গেছেন তৌকিরের মা-বাবা, স্ত্রী এবং বোন সৃষ্টি খাতুন ও তার স্বামী ডা. তুহিন ইসলাম। এখন বাড়িতে তৌকিরের চাচাতো মামা রফিকুল ইসলাম ছাড়া কেউ নেই।
জানা গেছে, পাইলট তৌকিরের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের কানসার্ট এলাকায়। পরিবার নিয়ে রাজশাহী নগরীর উপশহরের তিন নম্বর সেক্টরের আশ্রয় নামের একটি বাড়ির তিন তলায় ভাড়া থাকেন। নিহত তৌকিরের বাবা তোহরুল ইসলাম। তিনি পেশায় সোনামসজিদ স্থলবন্দরে পাথর ব্যবসায়ী। আর মা সালেহা খাতুন গৃহীনি।
বিকেলে তৌকিরের উপশহরের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনার খবরে স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনরা এসে ভির করছেন। তারা বাড়ির বাইরে একে অপরের সঙ্গে কথা বলছে। এ ছাড়া গাড়িচালক আলী হাসান ও মামা রফিকুল ইসলামের থেকে যানতে চাচ্ছেন তৌকিরের সর্বশেষ অবস্থা। স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
দুর্ঘটনার খবরে তৌকিরের বাসায় এসেছেন বিমানবাহিনীর সাবেক ওয়ারেন্ট অফিসার মোস্তাক হোসেন। তিনি বলেন, তৌকির নম্র, ভদ্র ও স্মার্ট। একজন দক্ষ মানুষ। শুরু থেকেই তার পাইলট হওয়ার ইচ্ছা। সে পাইলট হিসেবেও ভালো। তাকে ছোট থেকে দেখছি। তার এমন খবরে আমি নিজেও মর্মাহত। গত একমাস আগেও তার সঙ্গে কথা হয়েছে। স্টাফ আমি আসতেছি, দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। তার শিক্ষাজীবন ভালো ছিল। পাবনা ক্যাডেট কলেজের আগে রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে।
মামা রফিকুল ইসলাম বলেন, বাড়িতে কেউ নেই। তৌকিরের দুর্ঘটনার খবরে সবাই ঢাকা গিয়েছে। তার জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। তারা সবাই মানুষ হিসেবে অনেক ভালো। তার মৃত্যুর খবরে স্বজনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই গ্রামের বাড়ি শিবগঞ্জ থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা করেছেন। জানি না সর্বশেষ পরিস্থিতি। ঢাকায় স্বজনরা রয়েছে।
বাসার মালিক আতিকুল ইসলাম বলেন, তৌকির ইসলাম সাগর প্রথমবারের মতো একা প্রশিক্ষণ বিমান চালাবেন এই খবরে পুরো পরিবারের সদস্যরা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত ছিলেন। দুপুরের পর তারা বিমান বিধ্বস্তের খবর পান। সে সময় জানতে পারেন সাগর ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সাগরকে দেখতে পরিবারের সদস্যরা বিমানযোগে ঢাকা যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে র্যাবের একটি মাইক্রোবাসে করে ভাড়া বাসা থেকে তাদেরকে রাজশাহী শাহমখদুম বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তারা ঢাকা রওনা হন।
আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের বাবা মা বোন ও বোন জামাই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে তার মৃত্যুর খবর জানতেন না। পরিবারের সদস্যরা জানেন সাগর জীবিত ও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নিহত পাইলটের বড় চাচা মতিউর রহমান বলেন, তার বাবা-মাকে এখনো তৌকীরের নিহতের খবর জানানো হয়নি। গতবছরে তৌকির ইসলাম বিয়ে করেন। এবছরেরর ফেব্রুয়ারি মাসে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। তার স্ত্রী ঢাকার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষিকা।