বাচ্চাগুলো দৌড়ে আসছিল, ওদের সারা গায়ে আগুন: শিক্ষিকা পূর্ণিমা

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৭০ জন। ভয়াবহ এ ঘটনা নিজের চোখে দেখেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষিকা পূর্ণিমা দাস। নিজের চোখে দেখা সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা লিখেছেন ফেসবুকে।

শিক্ষিকা পূর্ণিমা দাসের ফেসবুক পোস্ট হুবুহু তুলে ধরা হলো-

স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১টায়। এরপর দুই ঘণ্টা কোচিংয়ের জন্য কিছু ছাত্রছাত্রী স্কুলে ছিল এবং যাদের অভিভাবক তখনও নিতে আসেনি তারা অপেক্ষা করছিল।

দুপুর ১টা ১০ কি ১৫ মিনিটে একটা জেট বিমান ক্র্যাশ হয়ে দিয়াবাড়ি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী বিল্ডিং এ আগুন ধরে।

ওই বিল্ডিং এ বাংলা ভার্সনের ক্লাস থ্রি থেকে ফাইভ আর ইংরেজি ভার্সনের ক্লাস সিক্স থেকে এইটের বাচ্চাদের ক্লাস হয়। আমিও ওখানেই ক্লাস নিই।

আমি ক্লাস শেষ করে ঠিক যেখানে আগুন লেগেছে ওই করিডোর পার হয়ে আমাদের টিচার্স রুমে গেছি। ততক্ষণে ওই বিল্ডিং এর আশিভাগ বাচ্চা বাড়ি চলে গেছে এবং তখন বিল্ডিং এ ভয়ানক শব্দ আমি কিছু বোঝার আগে দেখি ছোট ছোট বাচ্চাগুলো দৌড়ে আসছে দেখলাম তাদের সারাগায়ে আগুন।

আমি কোনো রকমে ওয়াশরুমে গিয়ে পানি ঢালছি দুই তিনজনের গায়ে। এমন সময় একজন টিচারের চিৎকার করে বলছে পূর্ণিমা বের হোন। বের হোন।

রুম থেকে বের হয়ে দেখি এত আগুন এত আগুন, সমস্ত করিডোরে আগুন, আমার থেকে দুইহাত দূরে আগুনের মধ্যে আমার একজন সহকর্মী ছুটতে ছুটতে এসে আমার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ে বলে, আমাকে বাঁচান। তার সারা শরীর পুড়ে গেছে।

আমি স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে আছি তখনো। কেউ একজন হ্যাঁচকা টান দিয়ে আমাকে ওই জায়গা থেকে সরায় এবং বিল্ডিং এর গ্রিল ভেঙে আমাদের বের করা হয়।

আমার বাচ্চাগুলোকে আমি পাঁচ মিনিট আগেও ভালো দেখে এসে পাঁচ মিনিট পরে তাদের পুড়ে যাওয়া শরীর দেখে এসেছি। ভগবান এ রকম দিন কেন দেখালো জানি না, কেন আমার কোনো আঁচড় ও লাগলো না আমার কেন কিছু হলো না আমি জানি না।

ওই ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর মুখ আমার চোখের সামনে ভাসছে। আমার সহকর্মীদের চেহারাগুলো চোখের সামনে ভাসছে। জানি না কাদের আর কখনো দেখতে পাবো না। জানি না। কিচ্ছু জানি না। কত মায়ের বুক আজ খালি হলো। কেন হলো, জানি না। কি নৃশংসতা! কি বিভৎসতা! হে ভগবান।