এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ‘নিজ চোখে দেখেছি, আমার ছেলে সেই আগুনের মধ্যে স্কুলের রুমে আটকে আছে। কতজনকে দেখি শরীরে আগুন নিয়ে দৌড়ে বের হচ্ছে, কিন্তু আমার ছেলেকে ঠিকমতো বের করতে পারিনি।’- বুক ভরা আর্তনাদ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র অগ্নিদগ্ধ আব্দুল মোসাব্বির মাকিনের মা সালেহা বেগম।
প্রতিদিনের মতোই ছোট ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলেন সালেহা বেগম।
সোমবার দুপুরে উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। ছুটি হয়ে গেছে, তবুও ছেলে বাইরে আসছে না। ভেবেছিলেন, হয়তো বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে গল্প করছে মাকিন। কিন্তু হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণ আর আগুনের লেলিহান শিখা কাঁপিয়ে দিল পুরো স্কুল চত্বর।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখতে পান, আগুনের মধ্যে আটকে আছে তার বুকের ধন।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ছেলের শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন তিনি। অশ্রুসিক্ত চোখে ছেলের যন্ত্রণার কথা বলতে বলতে হাহাকার করে উঠছিলেন, ‘বাবাটার শরীর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আল্লাহ, তুমি আমার জীবন নিয়ে হলেও ছেলেকে ভালো করে দাও। আল্লাহ, আমার বুকের ধনটাকে ফিরিয়ে দাও। আর পারছি না সহ্য করতে।’
গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে মাকিনকে প্রতিদিন স্কুলে আনা-নেওয়ার দায়িত্ব ছিল মায়েরই। সোমবারও দুপুর একটার দিকে স্কুল ছুটির পর ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ছুটির কিছুক্ষণ পরই ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
স্কুলের দ্বিতীয় তলায় কোচিং ক্লাস করছিল সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল মোসাব্বির মাকিন। ক্লাস শেষ হলেও সেই ভবন থেকে আর বের হয়ে আসা হয়নি তার।
ভয়ার্ত সেই মুহূর্তের কথা বলতে গিয়ে মাকিনের মামা সুমন বলেন, ‘প্রথম দেড় ঘণ্টা ছেলের কোনো খোঁজই ছিল না। পরে এক শিক্ষক জানালেন, মাকিন হাসপাতালে আছে। প্রথমে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, পরে বার্ন ইনস্টিটিউটে।’
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাকিনের শরীরের ৬৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালীও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কথা বলতেও পারছে না সে। আইসিইউতে রাখা হয়েছে তাকে।
মাকিনের মামাতো ভাই মাহি হায়দার দুর্জয় জানান, মাকিন দুই ভাইয়ের ছোট। বড় ভাই আব্দুল মোমিন মাহাদি একই স্কুল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।