রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫, ১০:৪২:৫৫

জুলাই আন্দোলনের নায়ক ছিল তারেক রহমান: আমীর খসরু

জুলাই আন্দোলনের নায়ক ছিল তারেক রহমান: আমীর খসরু

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, একাত্তর-পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের কৃতিত্ব শেখ হাসিনা ও তার পরিবার নিজেদের বলে দাবি করেছিল। অথচ মুক্তিযুদ্ধ করল কারা, আর কৃতিত্বের ভাগ জোর করে নিয়ে গেল কারা, সবটাই দেশের মানুষ বোঝে।

তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের নায়ক ছিল তারেক রহমান। ১ জুলাইয়ের আন্দোলন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেখানেও সবচেয়ে বেশি ভূমিকা বিএনপির। যুবদল, ছাত্রদলসহ বিএনপির সব অঙ্গসংগঠনের। এ আন্দোলনে ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপির মানুষ। তবে এ আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে বিএনপি বিভাজন করতে চায় না।

শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেলে নগরের জিইসি মোড়ের জিইসি কনভেনশন হলে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আলোচনা সভা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে পেশাজীবীদের ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের চট্টগ্রাম শাখার উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের সময় জেলে বসে ভেবেছিলাম বাকি জীবন কীভাবে কাটাব। তখন ১০ হাজার মানুষ গ্রেপ্তার করেছিল আওয়ামী লীগ। যার মধ্যে ৯ হাজারই আমাদের দলের নেতাকর্মী। তবে এ বিপ্লব-আন্দোলনকে আমরা বিএনপির কৃতিত্ব হিসেবে দেখাতে চাই না। তারেক রহমানও কখনো সে বিষয়ে বলেননি। শুধু ডকুমেন্টস ও নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে আমরা কথাগুলো বলেছি। কারণ আমরা চেয়েছি, এ আন্দোলন দেশের ১৮ কোটি মানুষের আন্দোলন হিসেবে সামনে আনতে। ফলে আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে আমরা কখনোই বিভাজন করতে চাই না।

যাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে গত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ভূমিকা জোরালো ছিল তাদের আমরা ভুলে যাচ্ছি মন্তব্য করে বিএনপির এ নেতা বলেন, জেলখানায় আমাদের সবচেয়ে বড় ভয় ছিল, কোনো বড় অসুস্থতা হলে আমরা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাব। কারণ জেলে চিকিৎসার অনুমতি কোনো দিন আসেনি। চরম কঠিন সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা অতিবাহিত করেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, জুলাই-আগস্টের আলোচনায় ঢাকার কোথাও ওয়াসিমের নাম আসেনি। শুধু নতুন বাংলাদেশ বললেই হবে না। অনেক কিছু আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। যাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে গত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ভূমিকা হয়েছে, তাদের আমরা ভুলে যাচ্ছি। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে গেছে, পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে; কোণঠাসা হয়ে গেছে। অনেক স্ত্রী বছরের পর বছর স্বামীকে কাছে না পেয়ে তাকে ত্যাগ করে চলে গেছে।

আমীর খসরু বলেন, জুলাই-আগস্ট নিয়ে আমাদের আগ্রহ থাকবে। এ আন্দোলনে যাদের অবদান, তাদের এক নম্বর বেগম খালেদা জিয়া। তারেক রহমানের জীবনের বিনিময়ে আজকের এ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হয়েছে। সেই কথাগুলো আন্দোলনের আলোচনাগুলোতে কম আসছে।

তারেক রহমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন দাবি করে তিনি বলেন, সবকিছু মিলিয়ে আমাদের এখন দেশ গড়ার সময়। সেজন্য যা করণীয়, সেগুলোকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সহনশীলতা আনতে রাজনীতির সংস্কৃতি বদলাতে চাচ্ছেন তারেক রহমান। অন্যের প্রতি দ্বিমত থাকলেও তার প্রতি সহনশীল থাকতে হবে। আগামীর বাংলাদেশে তরুণদের ভূমিকা কী থাকবে, সেগুলো ৩১ দফার মাধ্যমে সামনে আনা হয়েছে।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৮ মাসে ১ কোটি মানুষের চাকরি কীভাবে দেওয়া যায় সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করব। সেগুলো কীভাবে পরিবর্তন করব, সেগুলোর নীতিমালাও আমরা ঠিক করেছি। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের নিয়ে সব খাতে কীভাবে কী ভূমিকা রাখবে বিএনপি, এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। জনগণ আমাদের নির্বাচিত করলে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সব জনগণকে বুঝিয়ে দেব।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে এতে প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক।

বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ভুয়া মামলার আমদানিকারক ছিল আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার আগে কম্বলচোর শব্দ সম্পর্কে আমরা জানতাম না। সেগুলো এনে দিয়েছে তারাই। আজ যারা মাসে মাসে টাকা নেয়, সেটা হয় অগ্নি টিকিট। আর কেউ যদি অনুষ্ঠানের জন্য টাকা নেয় সেটার আরেকটা নাম হয়ে যায়। আমাদেরও জানার আগ্রহ হয়, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য বদলানোর নামে একটি দল বিদেশিসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা নিয়েছে। কিন্তু মানুষের কোনো ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। পাল্টেছে সেই দল ও তাদের ভাগ্য। ফলে ’৭১-পরবর্তী স্বৈরাচারের দোসর কারা ছিল, সেগুলো কি ভুলে গেছেন? মানুষ ভোলেনি। উনারাই ’৯৬ সালে আমাদের বিরুদ্ধে হরতাল করেছিল।

তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারকে পুনর্বাসন করার জন্য পূর্বের ইতিহাসে যাদের ভূমিকা ছিল তারাই ওরা। তারাই এখন বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলেন। কাজেই বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে নিজেদের চেহারা আগে একবার আয়নায় দেখবেন। প্রতিযোগিতা থাকা ভালো, প্রতিহিংসা ভালো না। আমরা রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা দিয়েছি। আপনারাও দেন। কিন্তু গায়ের জোরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা যারা করছে, তাদের কথা আমরা বলতে পারি না—সেই সিদ্ধান্ত জনগণ নেবে। ঐক্যের ডাক বিএনপিই দিয়েছে। ফলে অনৈক্য করলে জনগণই আপনাদের পেছনে ফেলে দেবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে না গেলেও ১৬ বছর বিএনপি যেভাবে আন্দোলন করেছিল, সেভাবে তারা তাদের আন্দোলন চলমান রাখত। ’৮৬ সালেও ছাত্র-জনতা কঠোর আন্দোলন করেছিল। সময়ের প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি, তারেক রহমানে যেভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, ফলে আগামীতে বিএনপি নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে ক্ষমতায় আসবে।

তিনি আরও বলেন, আগামীতে বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গঠন করা হবে। ওয়াসিম আকরামের নামে একটা ফ্লাইওভার হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে একটি পার্ক করা হবে। ওয়াসিম আকরামরা সারা দেশের মানুষের মনে থাকবে।

আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট হাসান আলী চৌধুরী এবং মহানগর ড্যাবের সাধারণ সম্পাদক ডা. ইফতেখার ইসলাম লিটন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। আলোচনা সভা শুরুর আগে আওয়ামী দুঃশাসন ও জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

সমাবেশে বক্তব্য দেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. এস এম নসরুল কাদির, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার জানে আলম সেলিম, সিএমইউজের সাবেক সভাপতি শামসুল হক হায়দরী, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সহকারী মহাসচিব মুস্তাফা নঈম এবং বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট এ এস এম বদরুল আনোয়ার।

আরও বক্তব্য দেন সিএমইউজের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, জেলা ড্যাবের সাবেক সভাপতি ডা. আশরাফুল কবির ভূঁইয়া, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল সাত্তার, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তারিক আহমেদ, মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট মুফিজুল হক ভূঁইয়া, ড্যাব নেতা ডা. ঈসা চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মেজবাউল আলম, সিটি করপোরেশন কলেজ শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক আবদুল হক, ব্যাংকার মেহরাব হোসেন খান, ইঞ্জিনিয়ার মো. ওসমান ও সিদ্দিক আল মামুন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে