এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : এবার রাজধানীর গুলশান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বহিষ্কৃত চার নেতার সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, গ্রেফতার আসামিরা ন্যাশনাল চিলড্রেন পার্টি করেছে। তারা চাঁদাবাজি করে সেই চাঁদাবাজির দায় বিএনপির ওপর চাপাচ্ছে।
গতকাল রোববার (২৭ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে করা মামলায় তাদের রিমান্ডে পাঠানো হলো।
আসামিরা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম, সাদাব ও আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ। এদের মধ্যে রিয়াদ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। গ্রেফতারের পর গতকাল সংগঠন দুটি থেকে তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে চাঁদা নিতে গেলে ওই বাসা থেকে তাদের আটক করা হয়।
এদিন আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন। শুনানিতে তিনি বলেন, এই আসামিরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। এনসিপি নামে নতুন সংগঠন আমাদের ছোটভাইয়েরা করেছে। এদের মধ্যে কিছু লোক চাঁদাবাজি করে সেই চাঁদাবাজির দায় বিএনপির ওপর চাপাচ্ছে। এদের রিমান্ডে দিলে এনসিপির ভাবমূর্তি ফিরে আসবে। শহীদের আত্মা শান্তি পাবে।
এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, এরা ন্যাশনাল চিলড্রেন পার্টি করেছে। আগে এদের খাওয়ার টাকা ছিল না, এখন পাজেরো নিয়ে ঘোরে। এই চাঁদাবাজির মূল হোতাদের চিহ্নিত করার জন্য আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন। এরপর বিচারক আসামিদের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
এদিন আসামিদের আদালতে তোলার সময় তাদের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের। আসামিদের আদালতে তোলার সময় এসব আইনজীবী চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে নানান স্লোগান দিতে থাকেন। একই সঙ্গে আসামিদের লক্ষ্য করে ‘জুলাই ব্যবসার দিন শেষ’ সহ নানান স্লোগান দেন। এদিন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন।
জানা গেছে, সম্প্রতি শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন পাঁচ যুবক। তিনি পলাতক থাকায় তার স্বামীর কাছে এ চাঁদা দাবি করা হয়। কয়েক দিন আগে তারা ওই বাসায় গিয়ে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসেন। গতকাল রাত ৮টার দিকে তারা আবার ওই বাসায় যান স্বর্ণালঙ্কার আনতে। সে সময় বাড়ির লোকজন পুলিশকে খবর দিলে রিয়াদসহ সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় শাম্মি আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর গুলশান থানায় ছয় জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৭ জুলাই আসামি আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে বাদীর গুলশান- ২ এর বাসায় হুমকি ধমকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার চাঁদা দাবি করেন। অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে আওয়ামী লীগের ও স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেফতার করানোর হুমকি দেন। ভয়ে তাদের ১০ লাখ টাকা দেন তিনি। পরে ১৯ জুলাই পুনরায় বাকি ৪০ লাখ টাকার জন্য হুমকি দেন। এরপর ২৬ জুলাই চাঁদা নিতে আসলে গুলশান থানা পুলিশ তাদের আটক করে। তবে এর আগে কাজী গৌরব অপু পালিয়ে যায়।