নিউজ ডেস্ক : রাজধানী ঢাকার উত্তরার একটি বাসায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি গ্যাস লিকেজ থেকে ভয়াবহ আগুন লাগার ওই ঘটনায় আগুনে পুড়ে এরই মধ্যে মারা গেছেন সুমাইয়া আক্তারের স্বামী মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা শাহীন শাহনেওয়াজ এবং তাদের দু'সন্তান পনের বছরের শার্লিন আর ১৬ মাস বয়সী জায়ান।
সুমাইয়ার খালাতো ভাই খিরকিল নওয়াজ জানান, তারই আপন বড় ভাই নওশাদ জামান তাদের বোনের কথাগুলো রেকর্ড করেছেন। পরে পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। সুমাইয়া এখন ঢাকার একটি হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আর তুলনামূলক কম দগ্ধ হয়ে চিকিৎসা নেয়ার পর এখন স্বজনের বাসায় রয়েছেন শাহীন ও সুমাইয়ার আরেক সন্তান জারিফ।
স্বজনদের সাথে আলাপকালে সুমাইয়া আক্তার বলেন, চিৎকার দিয়ে নামতেছি- আগুন লাগছে সাহায্য করেন। বাঁচান বাঁচান। গায়ে তো আগুন। তিন আর চার নম্বর ফ্লোর থেকে দরজা খুলছে। আমাদের দেখে দরজা বন্ধ করে দিছে। স্পষ্ট মনে আছে। সাত তলা থেকে নামছি। তিন তলার লোকেরা একটা তোষক দিয়ে যদি জড়াইয়া ধরতো। একটা তোষক না হয় পুড়তো। আমার বাচ্চাগুলো তো বাঁচতো।
ফেসবুকে পাওয়া অডিওতে সুমাইয়া বলেন, বাসার চুলায় গ্যাসের পাওয়ার কম ছিল। বাসায় ওঠলাম সিলিন্ডার গ্যাস ছিল না। তিনদিন কিনে খেয়েছি খাবার। তারপর মিস্ত্রি এসে রাইজার বাড়িয়ে পাওয়ার ঠিক করে দিচ্ছে। তারপরও গ্যাস লিক করতো। গ্যাসের গন্ধ পাইছি। জানালা খোলা রাখতাম।
তিনি বলেন, গ্যাসের গন্ধ পেয়ে রাতেও তার স্বামী মোমবাতি জ্বালিয়ে চেক করেছেন। পরে বললো মনে হয় ওপরে ছাদ থেকে আসতেছে।
সুমাইয়া বলেন, চুলা অল্প জ্বালিয়ে চায়ের পানি দিছি। ওর আব্বু বললো ঘরে গ্যাসের গন্ধ আসছে, ফ্যানটা ছেড়ে দেই। ফ্যান ছেড়ে জানালা খুলে দেয়ার জন্য। জায়ান ওর বাবার কোলে। যেই ফ্যানটা ছেড়ে দেবার পরে দাউ দাউ করে আগুন। সেকেন্ডের মধ্যে, এতো আগুন।
তিনি বলেন, আসলে ডাইনিং রুমটাই গ্যাস ভরা ছিল। শার্লিনের রুম ছিল রান্না ঘরের পাশেই। একটা জানালা সম্ভবত বন্ধ ছিল।
তিনি বলেন, আমি আর শার্লিনের আব্বু নামছি। আগুন জ্বলতেছে গায়ে। চিৎকার দিয়ে নামতেছি- আগুন লাগছে সাহায্য করেন। বাঁচান বাঁচান। তিন আর চার নম্বর ফ্লোর থেকে দরজা খুলছে। আমাদের দেখে দরজা বন্ধ করে দিছে। একটা তোষক দিয়ে যদি জড়াইয়া ধরতো। একটা তোষক না হয় পুড়তো। আমার বাচ্চাগুলো তো বাঁচতো। কত মানুষ সব তাকাইয়া আছে। কেউ আগায়না।
সুমাইয়া বলেন, পরে নিচে নেমে, কাপড় তো পুড়ে গেল। নিচে ছিল ছালার চট। টাইনা গায়ে দিছি। কত মানুষ, সবাই তাকাইয়া আছে, কেউ আগায়না।
বলছি আমি মহিলা একটা চাদর দেন। কেউ দেয় না। বিল্ডিংয়ের মহিলারা কেউ দেয় না... আল্লাহ মাফ করুক সবাইকে।
তিনি বলেন, পরে নিচে নেমে চিৎকার দিয়ে দারোয়ানকে বললাম, আমার দু’ছেলে ওপরে আটকা পড়ছে, আপনারা তাড়াতাড়ি যান। তারা যেতে যেতে শালীন পুড়ে গেছে।
সুমাইয়া বলেন, শার্লিন পুড়েছে বেশি, গায়ে পা থকথক হয়ে গেছে। শার্লিন বলে আমি তো বাঁচবো না, আমাকে মাফ করে দিও আম্মু। আমি বলি, বাবা তুই বাঁচিস, আমি মইরা যাই। মানুষ এরকম হয়। একি খারাপ না? কেউ কাউরে একটু সাহায্য করে না। এটা কি কথা?
২ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম