এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। যার প্রভাবে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। এক্ষেত্রে বরাবরের মতো সরবরাহ কমের অজুহাত রয়েছে ব্যবসায়ীদের।
কিন্তু পাইকারি ও খুচরা বাজারে দৃশ্যমান কোনো সংকট নেই পেঁয়াজের। তবুও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেঁয়াজ আমদানি করতে চান ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আমদানির জন্য মিলছে না এলসি। এর কারণ জানতে গিয়ে সরকার পক্ষ বলছে, স্থানীয় কৃষকদের কথা ভেবে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহ নেই সরকারের।
এতে নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত দাম আরও বাড়ার কথা শোনাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) এ তথ্য জানান খাতুনগঞ্জ হামিদ উল্লাহ মিঞা মার্কেটের ব্যবসায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস। তিনি জানান, পেঁয়াজের দাম অনেকটা বেড়েছে। পাইকারিতে গত সপ্তাহে ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা হয়েছে। এখন ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টি হয়েছে। মোকাম থেকে আমাদের আড়তে পেঁয়াজ সেভাবে আসতে পারেনি। আমদানিও বন্ধ। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ অনেক কম। ফলে এ সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে ২৫-৩০ টাকা বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, মোকামের ওপর নির্ভর করে দেশি পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ কৃষকের সংরক্ষণ করা পেঁয়াজ দিয়ে বড়জোড় এক মাস চলবে। এ অবস্থায় পেঁয়াজ আমদানি শুরু না হলে দাম কমবে না। এছাড়া নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করলে দাম কমবে।
বিক্রেতারা জানান, গত ৩১ জুলাই খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৫৫ টাকা। একদিনের ব্যবধানে ১ আগস্ট কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হয় ৬০ টাকা। ৮ আগস্ট বিক্রি হয় ৮৫ টাকায়। রোববার বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। সোমবার বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়।
নগরীর মোমিন রোডের শরীফ স্টোরে বড় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। একই দোকানের সামনে সড়কে ভ্যানগাড়িতে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ছোট পেঁয়াজ। আবার নগরীর আসকারদিঘীর পাড়ে বিভিন্ন মুদি দোকানে ছোট-বড় পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
আসকার দিঘীর পাড়ের আলী স্টোরের মালিক আশরাফ আলী বলেন, আমাদের কাছে কয়েক মাস ধরে ভারতীয় কোনো পেঁয়াজ নেই। দেশি পেঁয়াজই শুধু বিক্রি করছি। গত সপ্তাহেও ৪৫ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে বিক্রি করেছি। এখন ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, আরও ভালো মানেরগুলো ৯৫-১০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। সোমবার থেকে না কি আড়তে দাম আরও বেড়েছে। সেগুলো বাজারে এলে দুয়েকদিনের মধ্যে আমাদের হয়তো প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করতে হবে।
খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আড়তে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত আছে। কিন্তু বৃষ্টি হলেই সরবরাহ সংকটের অজুহাতে তারা বিক্রি কমিয়ে দেয়। এতে বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে ভোক্তা সাধারণকে। পিষ্ঠ হচ্ছে গরিব মধ্যবিত্ত মানুষ। প্রশাসন তদারকি করলে লাগাম টেনে ধরা সম্ভব বলে মনে করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
কিন্তু আড়তদারদের দাবি, ভারি বর্ষণ ও মৌসুমের শেষের কারণে মোকামগুলোতে সরবরাহ কমে গেছে, পাশাপাশি বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় বাজার পুরোপুরি দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল। কুষ্টিয়া, ফরিদপুর ও পাবনাসহ উত্তরবঙ্গের জেলা থেকে সরবরাহ এলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া ট্রাক ভাড়া ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে।
বৃহত্তর চাক্তাই আড়তদার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফোরকান বলেন, দেশের পেঁয়াজ দিয়ে পুরোপুরি চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ভারতের মহারাষ্ট্র, কেরালার পেঁয়াজ দিয়েই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে মূল ব্যবসা চলে। এখন আমদানি বন্ধ হওয়ায় দেশি পেঁয়াজ দিয়ে অনেকটা একহাতের ব্যবসা চলছে। আর একহাতের ব্যবসা হলে তো ক্রাইসিস তৈরি করা সহজ। সুতরাং এই মুহূর্তে দাম কমাতে হলে পেঁয়াজ আমদানির কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি মিলছে না। সরকার স্থানীয় কৃষকদের কথা ভেবে এলসি বন্ধ রেখেছে। এখন ক্রাইসিস নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) এলসি খোলার কথা ছিল। কিন্তু না খোলার কারণে দাম বাড়তি আছে। এলসি খুললে পেঁয়াজের দাম আবার ৫০ টাকার মধ্যে চলে আসবে।
আমদানিকারকরা বলছেন, পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো আপত্তি না থাকলেও এলসি (ঋণপত্র) খোলায় স্থগিতাদেশ রেখেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ আদেশের কারণে দেশে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। অর্থাৎ দেশীয় পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছে।
এ নিয়ে কথা হয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজার সংযোগ, গবেষণা, রফতানি উন্নয়ন এবং কৃষি ব্যবসা শাখার পরিচালক মোহাম্মদ মুনসুর আলম খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, কৃষকদের কথা বিবেচনায় আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। আর পেঁয়াজের যে চাহিদা, সে অনুপাতে আমাদের উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু পেঁয়াজ শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ওজন কমে গেছে। এরপরও আশা করি কোনো ঘাটতি হবে না। তাই দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের মনিটরিংয়ে আনা হবে। অক্টোবরে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হবে। এরমধ্যে যদি ঘাটতি মনে হয়, সরকার যে কোনো মূহুর্তে এলসি খোলার সুযোগ করে দিবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আইন অধিশাখার যুগ্ম সচিব ড. মো. মোকতার হোসেন বলেন, স্থানীয় কৃষকদের কথা ভেবেই পেঁয়াজ আমদানিতে সরকার উৎসাহিত করছে না। তবে পেঁয়াজের মজুদ কি পরিমাণ আছে, তা বিবেচনা করে সরকার চাইলেই এলসি খুলে দিতে পারে। এলসি খুলতে ডলার সংক্রান্ত কোনো সমস্যা নাই। তাই সরকার যে কোনো মূহুর্তেই তা করতে পারে। এটি নিয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।