এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভিপি পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আবু তৈয়ব হাবিলদার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০১-০২ সেশনের এবং চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ইতিহাসের অংশ হতেই ডাকসুতে ভিপি হিসেবে লড়ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (২০ আগস্ট) নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে কেন তিনি নির্বাচনে ভিপি হিসেবে লড়বেন তার বর্ণনা দিয়েছেন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ১/১১ এর স্বৈরাচার ম ইউ আহমেদকে হঠাতে নেতৃত্ব দিয়েছি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অবিরত লড়েছি দীর্ঘকাল। ২০০৯ সালে ছাত্রলীগের নির্মমতার শিকার হয়ে আমার প্রিয় ইউনিভার্সিটি ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। শিক্ষাজীবন বিপন্ন হয়ে গেছে। পড়ালেখা শেষের সময়ে শেষ করতে দেয়নি ছাত্রলীগ। বিসিএসে অংশগ্রহণ করতে পারিনি, কোনো চাকরি করার সুযোগও মেলেনি শিক্ষা সনদ না থাকায়। তারপরও আশা ছাড়িনি। স্বৈরাচারের পতন ঘটাবো পণ করেছিলাম সেই ২০০৯ সাল থেকেই। পতন করেও ছেড়েছি।
ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের সব সংকটে আমি অবিরত লড়াইয়ে নিমগ্ন ছিলাম বিগত ১৬টা বছর।
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা যখনি ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার শিকার হয়েছে, তাদের রক্ষায় তখনই রাজপথে নেমে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়েছি। ঢাবির সব সংকটে তোমাদের পক্ষে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছি।
পোস্টে আবু তৈয়ব লিখেন, ‘১৮ সালের কোটা আন্দোলন থেকে ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নুরুল হক নুর, হাসান আল মামুন, রাশেদ খান, তারেক রহমান, আখতার হোসেন, নাহিদ হাসান, আসিফ মাহমুদ, আকরামসহ ১৮ ও ২৪ এর সব ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের যে কেউ জিগাইলেই ছাত্রদের জন্য, দেশের জন্যে আমার নিরলস অবিরত সংগ্রাম ও লড়াইয়ের সত্য ইতিহাস উঠে আসবে নিশ্চয়ই। আমার পুরো পরিবারটাই রাজপথকে বেঁচে নিয়েছিলাম স্বৈরাচার থেকে তোমাদের, সবার মুক্তির আশায়। ২৪ এর জুলাই বিপ্লবে আমি কি করেছি না করেছি অনলাইনের সূত্রে তা পুরো দেশবাসী দেখেছে। অনেকেই মনে করেছিল আমি মরে গেছি। আল্লাহ যারে বাঁচাইয়া রাখে তার মরণ সহজে হয় না। তার প্রমাণ আমি নিজেই। মানুষের দোয়ায় এখনো বেঁচে আছি।’
আবু তৈয়ব আরও লিখেন, ৮ আগস্ট ড. ইউনূস সরকার গঠন করার পরে রাষ্ট্র থেকে কোনো সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করিনি, অথচ যারা ক্ষমতায় বসেছে বা ক্ষমতা ভোগ করছে নাহিদ ইসলাম আখতার হোসেন, আসিফ মাহমুদসহ অনেকেই আমার জুনিয়র সহকর্মী, সহযোদ্ধা। তাদের কাছেও কোনো কিছুর জন্য আমি যাইনি, দেখাও করিনি। আমি জানতাম, তাদের কাছে আমি হাজির হলেই বা কিছু চাইলে তারা আমাকে না করবে না। তারপরও তাদের ক্ষমতাকে আমি কুর্ণিশ করিনি। উল্টো প্রতিনিয়ত তাদের ভুল পথকে কঠোর সমালোচনা করেছি ১২ মাস ধরে।
আমি এবারের ক্ষমতাকে এনজয় করতে পারতাম বা পারি কিন্তু ভোগবাদীতা, বিলাসিতা, অহংবোধের রাজনীতি আমার চরিত্রের সঙ্গে কখনো যায় না। তাই ক্ষমতাকে সবসময় এড়িয়ে চলেছি। যা যা করেছি, বিনাস্বার্থ ও বিনা শর্তে শিক্ষা্রথীদের জন্য, দেশ ও আপামর জনগণের স্বার্থেই করেছি।
অতীতে নির্যাতনে বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছরে ছাত্রলীগের নির্যাতন নিপীড়ন ও নির্মমতার শিকার ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকেই ঢাবির নিয়মানুযায়ী ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে পুনর্ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তার মধ্যে আমি ও একজন। সেই সূত্রে আমি এখন ঢাবির নিয়মিত ছাত্র হিসেবে ক্লাস ও পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষা জীবনের ইতি টানতে পারবো বলে আশা করছি।
ডাকসু নির্বাচনে আমি ও অংশগ্রহণ করছি ইতিহাসের অংশ হওয়ার লক্ষ্যে উল্লেখ করে তিনি লিখেন, ‘এখানে জেতা-হারার বিষয় নেই। গণতন্ত্রের বিকাশে অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভোটে দাঁড়াইছি, সেটা আমার অধিকার বটে। ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, তাদের পছন্দের প্রার্থীকে। আমাকে তাদের ভোট দিতে হবে কেন? তাদের কাছ থেকে আমাকে ভোট চাইতে হবেই বা কেন? সেটা আশা করা, কামনা করা আমার পক্ষে উচিতও নয়। আমি তোমাদের কাছে কোনো ভোট চাই না, তোমাদের কাছে বড়ভাই হিসেবে ভালোবাসা চাই।’