এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : গরু-খাসি অনেক আগেই চলে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সবজির দর কয়েকদিন আগেও ছিল কিছুটা সহনীয়। কিন্তু সম্প্রতি সবজির দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে কোনো সবজিতেই হাত দেওয়ার জো নেই। সবজির তাপে যেন হাত পুড়ে যাওয়ার অবস্থা। এতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর সংসার চালানোই দায়।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শ্যামবাজার, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, ধূপখোলাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলু ছাড়া কোনো সবজির দাম ১০০ টাকার নিচে নেই। ফলে যে কোনো সবজি কিনতে গেলে ভোক্তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। এতে বেশিরভাগ ভোক্তাই অল্প পরিমাণে সবজি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। সবজির মধ্যে কম শুধু আলুর দামই, ২৫ টাকা কেজি।
বাজারে আসা ক্রেতাদের একজন মাহবুব শান্ত বলেন, ‘আমার মতো নিম্ন মধ্যবিত্তের এই বাড়তি দাম দিয়ে সবজি কিনে সংসার চালানো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাধ্য হয়ে আধাকেজি বা ২৫০ গ্রাম সবজি কিনতে হচ্ছে। মাসখানেক আগেও সবজির দাম কিছুটা সহনীয় ছিল। তখন মোটামুটি সংসার চালাতে পারছিলাম। এখন খুব টানাটানি হচ্ছে।’
আরেক ক্রেতা রিফাত খান বলেন, ‘শ্যামবাজার থেকে আমি সব সময় বাজার করি। কয়েকদিন আগে ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে ছিল সবজির দাম। এখন দেখি আর কোনো সবজি ১০০ টাকার নিচে নেই। তাই অল্প করলা ও দুই কেজি আলু কিনেই ফিরে যাচ্ছি। এ ছাড়া মাছের দামও বাড়তি থাকায় কোনো মাছ কিনতে পারছি না। আমার মতো মধ্যবিত্তদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন। তাই তাদেরও বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হওয়ায় সরবরাহও কম হচ্ছে, যার কারণেও বেড়েছে দাম।
সূত্রাপুর বাজারের মাছ বিক্রেতা সজল মিয়া বলেন, বছরের এই সময়টা স্বাভাবিকভাবেই সবজির উৎপাদন কম হয়। এ কারণে বাজারে সবজির দাম বেড়েছে।
সবজির দামে আগুন: বাজারে এখন গ্রীষ্মকালীন সবজি ঢ্যাঁড়শ-পটোল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। এ ছাড়া বরবটি, বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙার দাম বাজারভেদে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা পর্যন্ত, যেখানে মাসখানেক আগেও প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। প্রতি পিস চালকুমড়া ৭০ থেকে ১০০ টাকা, লাউ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির পাশাপাশি বেড়েছে ডিমের দামও। প্রতি ডজন ডিম বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে দাম ডজনপ্রতি আরও ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি। অথচ এক মাস আগেও প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা।
ডিমের চড়া দামের কারণ জানতে চাইলে গেন্ডারিয়ার ডিমবিক্রেতা মাসুদ বলেন, ‘বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে ডিমের দামেও। সবজির দাম বাড়লেই স্বাভাবিকভাবে ডিমের চাহিদা বেড়ে যায়। আমাদেরও বাড়তি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে।’
মাছ-মাংসও নাগালের বাইরে: মাছ-মাংসের দাম আগে থেকেই বাড়তি। সবজির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরও বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম। বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে।
বাজারে গরু ও খাসির মাংসের চড়া দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি কেজি হাড়সহ গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে প্রতি কেজি বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়, মাঝারি আকারের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতি কেজি চাষের রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০, কাতলা ৪৫০ থেকে ৫০০, কৈ ২০০ থেকে ২২০, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৪০, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০, শিং মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।