এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : চট্টগ্রামের আনোয়ারার ইলিশকেন্দ্রিক বাজার পারকি। সাগরঘেঁষা এই বাজারে গতকাল শুক্রবার ১৫০ গ্রাম সাইজের এক কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকায়। দাম শুনে রিকশাচালক আবদুল আলিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “সারাদিন রিকশা চালিয়ে ৫০০–৬০০ টাকা আয় করি। এক কেজি ছোট ইলিশ কিনতেই তার চেয়ে বেশি টাকা লাগে—এ কেমন সময় এল!”
নিম্নবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্তের ঘরেও এখন ইলিশ তেমন জায়গা পাচ্ছে না। আড়তদারদের তথ্য অনুযায়ী, সাগরতীরের বাজারে প্রতি কেজি ৬–৭টি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০–৮০০ টাকায়, ৪টি আকারের ইলিশের দাম ৯০০–১০০০ টাকা, আর এক কেজির ওপরে ওজনের ইলিশ মিলছে ১৮০০–২০০০ টাকায়। সাগরপাড়েই যদি এমন দাম হয়, তবে সাধারণ ভোক্তার নাগালে পৌঁছানোর পর মূল্য কতটা বেড়ে যায় তা সহজেই অনুমেয়।
আনোয়ারার গহিরা উঠান মাঝি ঘাটের জেলে লোকমান জানান, এখন ইলিশ ধরার মৌসুম। ভাদ্র–আশ্বিন মাসজুড়েই ধরা পড়বে ইলিশ। তবে সাম্প্রতিক নিম্নচাপ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত কয়েক দিনে জালে প্রত্যাশিত মাছ ধরা পড়ছে না। পূর্ণিমার সময় তুলনামূলক বেশি মাছ পাওয়া গিয়েছিল বলে জানান তিনি।
বর্তমানে আনোয়ারার সমুদ্র উপকূলে দুই হাজারেরও বেশি জেলে ইলিশ ধরায় ব্যস্ত। শুক্রবার রায়পুর ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় ইলিশঘাট—গহিরা উঠান মাঝি ঘাটে গিয়ে দেখা যায় জেলে ও ব্যবসায়ীদের তৎপরতা। বঙ্গোপসাগরের পাশাপাশি সাঙ্গু নদীর গহিরা, জুঁইদন্ডি, বরুমচড়া ও তৈলারদ্বীপ এলাকাতেও ইলিশ ধরা পড়ছে। তবে চাহিদার তুলনায় তা খুবই কম। ফলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার দাম অনেক বেশি। নিম্নবিত্ত তো দূরে থাক, মধ্যবিত্তের জন্যও ইলিশ এখন স্বপ্নের খাবার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারা উপজেলার ১১ ইউনিয়নের পাঁচ হাজারের বেশি জেলের মধ্যে দুই হাজারেরও বেশি জেলে সাগরে ইলিশ ধরার কাজে যুক্ত। ধরা মাছ উপকূলের বিভিন্ন ঘাটে আনা হয়—উঠান মাঝি ঘাট, পড়ুয়াপাড়া, গলাকাটা, ফকিরহাট, খুইল্যা মিয়া ঘাট, পারকি ও জুঁইদন্ডি সহ আরও অনেক জায়গায়। এর পরপরই শুরু হয় পাইকারি বেচাকেনা। অধিকাংশ ইলিশ সরাসরি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। এসব ঘাটের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো গহিরা উঠান মাঝি ঘাট, যেখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলেদের ব্যস্ততা লেগেই থাকে।
জেলে আবদুল মজিদ জানান, গত পূর্ণিমায় ভালো ইলিশ পাওয়া গেলেও এবার অমাবস্যার সময়ে সাগরের খারাপ আবহাওয়ার কারণে মাছ ধরা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। ফিশারি ঘাটের আড়তদারদের হিসাব অনুযায়ী, শুক্রবার ৫–৬টি ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ২১ হাজার টাকায়, ৩–৪টি আকারের বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৩৬–৩৭ হাজার টাকায়, আর এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মিলেছে মণপ্রতি ৬০–৭০ হাজার টাকায়।
জেলেদের ভাষ্য, সাধারণত অমাবস্যায় পূর্ণিমার চেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। কিন্তু সাগরে নিম্নচাপ থাকায় এবার উল্টো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আনোয়ারা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. রাশিদুল হক জানান, সাগর উত্তাল থাকায় আরও কয়েকদিন কম মাছ ধরা পড়বে। তবে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে দ্রুত জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে তিনি আশাবাদী।