এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বাংলাদেশ সরকার তিন গার্মেন্টস মালিকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানানো হয়।
মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়, শ্রম অধিকার লঙ্ঘন ও সংশ্লিষ্ট আইনগত অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন আদালতে করা মামলার প্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মূলত শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়, মালিকপক্ষের গাফিলতি এবং দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থানরত অভিযুক্তদের দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই সরকার রেড নোটিশের আবেদন করেছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন টিএনজেড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাদাৎ হোসেন শামীম, ডার্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান ইত্তেমাদ উদ দৌলাহ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাবিল উদ দৌলাহ এবং রোর ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুনুল ইসলাম। এদের বিরুদ্ধে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দেশের বিভিন্ন আদালতে একাধিক মামলা চলছে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আদালতে দায়ের হওয়া মামলাকে ভিত্তি করেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল সদর দপ্তরে রেড নোটিশ জারির আবেদন পাঠানো হয়েছে। পুলিশের সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এনসিবি) স্বাক্ষরিত ওই পত্রে ইন্টারপোলের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করা হয়।
কেন রেড নোটিশ?
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত দেশের বৈদেশিক আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস। এই খাতে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা, সময়মতো বেতন-ভাতা প্রদান এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। কিন্তু একাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ এসব দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় মামলা গড়িয়েছে আদালতে। এরই ধারাবাহিকতায় দেখা যায়, অভিযুক্ত মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এবং শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে অনীহা দেখাচ্ছেন। এ অবস্থায় শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা চাইতে বাধ্য হয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে সরকার কঠোর অবস্থানে আছে। মালিকপক্ষের অবহেলার কারণে শ্রমিকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্যই এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মামলাগুলো বর্তমানে বিচারাধীন, এবং অভিযুক্তদের দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের মুখোমুখি করা জরুরি বলে মনে করছে সরকার।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে অতীতে শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন, বেতন-বকেয়া এবং নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলেও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, অভিযুক্ত মালিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের পদক্ষেপ একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এবং ভবিষ্যতে অন্য কোনো মালিক যাতে শ্রমিকদের অধিকার হরণ করতে সাহস না পায়, সেজন্য এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।