সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:১১:১০

কে হতে যাচ্ছে ডাকসুর ভিপি? শেষ মুহুর্তে আপনার ভবিষ্যদ্বাণী কী?

কে হতে যাচ্ছে ডাকসুর ভিপি? শেষ মুহুর্তে আপনার ভবিষ্যদ্বাণী কী?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর)। সর্বশেষ ভোটার তালিকা অনুযায়ী এবার ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৬৩৯। ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৫ জন, আর পুরো নির্বাচনে প্রার্থী সংখ্যা ৪৭১। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর ও রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ।

তবে এ উৎসবের আড়ালে ভোটের হিসাব-নিকাশ হয়ে উঠেছে বেশ জটিল। শেষ মুহূর্তে কেউই নিশ্চিত হতে পারছেন না কে কার দিকে থাকবেন। অরাজনৈতিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ এখনো সিদ্ধান্তহীন। ফলে সুইং ভোটারদের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন প্রার্থীরা।

বিশেষ করে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে এই ডাকসু নির্বাচনকে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ভবিষ্যৎ গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের পরীক্ষামূলক ক্ষেত্র হিসেবে দেখছে। প্রশাসনের জন্যও এটি বড় পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে বলছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ডাকসুর ফলাফলে স্পষ্ট হতে পারে ছাত্রসমাজের প্রবণতা ও মনোভাব।

তবে নির্বাচনের আগে ভিপি ও জিএস পদের লড়াই ঘিরে তৈরি হয়েছে গভীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ভিপি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী ৪৫ জনের মধ্যে কয়েকজনকে ঘিরেই মূল আলোচনা। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ছাত্রদের একটি বড় অংশের কাছে পরিচিত। তার কোচিং কেন্দ্রিক জনপ্রিয়তা রয়েছে, বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের বা অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে তার প্রভাব কতটা, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।

ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থী সাদিক কায়েমের অবস্থানও আলোচনায় রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিবির নিয়ে দ্বিধা থাকলেও তার প্রতি ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সাদিক কায়েম তার সংগঠনের বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে পারবেন বলে ধারনা তাদের। ইতোমধ্যে সেই প্রমাণ মিলেছে, তার কিছু কাজে। নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয় জুলাই আন্দোলনে সমন্বয়কদের সমন্বয় করা এই ছাত্রনেতা। 

অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা অরাজনৈতিক ও নারী ভোটারদের মাঝে তুলনামূলক এগিয়ে আছেন বলে অনেকে মনে করছেন। তবে সমস্যার জায়গা হলো, অনেক নারী ভোটারই হল থেকে ছুটিতে বাড়িতে চলে গেছেন। পরীক্ষাসংক্রান্ত ছুটি হওয়ায় তারা নির্বাচনের দিন উপস্থিত থাকতে পারবেন না, ফলে তাদের ভোট কীভাবে কাজে লাগবে তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।

ভিপি প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেনও। শেষ ক’দিনে তিনি প্রচারণায় বেশ আলোড়ন তুলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে পরিচিত শামীম হোসেন অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, তিনি শেষ সময়ে কোনো চমক দেখাতে পারেন।

জিএস পদের লড়াইয়েও রয়েছে ঘন প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ছাত্রদল সমর্থিত তানভীর বারী হামীম, ছাত্রশিবির সমর্থিত এসএম ফরহাদ এবং বাগছাস সমর্থিত আবু বাকের মজুমদার পরিচিত মুখ হিসেবে লড়াই করছেন। তিনজনেরই রয়েছে নিজ নিজ অবস্থান ও প্যানেল সমর্থন। তবে রাজনীতির বাইরে যারা ভোট দিতে চান কিংবা নারী ভোটারদের বড় একটি অংশ, তাদের সমর্থন পেতে পারেন সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থী ফাতেহা শারমিন এ্যানি।

নির্বাচনকে ঘিরে এবারের প্রচারণায় দেখা গেছে ব্যতিক্রমী সৃজনশীলতা ও কৌশলের সমন্বয়। প্রার্থীরা লিফলেট, হ্যান্ডবিল ও পোস্টার ছেপেছেন টাকা, ডলার, রিয়াল, এটিএম কার্ড, সিগারেটের প্যাকেট এমনকি মানচিত্রের আদলেও। প্রায় ১৫০০ প্রার্থী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। হলপাড়া ছিল সবচেয়ে সরগরম। বারবার রুমে রুমে গিয়ে ভোট চাওয়া, প্যারোডি গানের মাধ্যমে প্রচারণা, এবং ব্যানার-ফেস্টুনে ছিল সৃজনশীল উপস্থাপনা।

শেষ দিনে, ছাত্রদল সমর্থিত ‘আবিদ-হামীম-মায়েদ’ প্যানেল ঐতিহাসিক বটতলায় শপথ পাঠ করে। তারা প্রতিজ্ঞা করেন, ক্যাম্পাস থেকে গেস্টরুম-গণরুম নির্যাতন, জবরদস্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি চিরতরে বন্ধ করা হবে। তারা নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আবাসন ও স্বাস্থ্যসেবা, সাশ্রয়ী খাবার, কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেন। পাশাপাশি, সাইবার বুলিং ও ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও গবেষণায় অগ্রগতি আনার অঙ্গীকার করেন তারা। 

নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত প্রচারণা তুলনামূলক শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে সব প্যানেলের বিরুদ্ধেই। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সব পক্ষই। ছাত্রদল, শিবিরসহ বিভিন্ন পক্ষ অভিযোগ করেছে যে, নির্বাচন কমিশন নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিচ্ছে। আচরণবিধি একপাক্ষিকভাবে পাল্টানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে শেষ সময়ে তিনটি জরিপ প্রকাশ পেয়েছে, মানবাধিকার সংগঠন ‘সোচ্চার’, গবেষণা সংগঠন ‘ন্যারেটিভ’ ও ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ’। এর মধ্যে দুটি জরিপে দেখা গেছে শিবির সমর্থিত ঐক্যজোট ব্যাপক ব্যবধানে এগিয়ে। অন্য জরিপে তারা দ্বিতীয় স্থানে। তবে এসব জরিপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নিরপেক্ষতা ও তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি নিয়ে। অনেকে দাবি করেছেন, এসব জরিপে পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে।

জরিপ পরিচালকদের দাবি, মতামত গ্রহণে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রাখা হয়েছে। একক কোনো পক্ষের ছাত্রদের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহ করা হয়নি বরং সময়, স্থান ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষার্থীদের মতামত নেয়া হয়েছে।

যদিও জরিপে নানা ফলাফল আসছে, বাস্তবে নির্বাচনের ফল নির্ভর করছে মূলত সেই ৪০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীর ওপর যারা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। এই অংশের বড় একটি অংশ অনাবাসিক, শহুরে ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির শিক্ষার্থী। ফলে এদের ভোটের দিকেই তাকিয়ে আছে সব প্যানেল। কে হতে যাচ্ছে ডাকসুর ভিপি? শেষ মুহুর্তে আপনার ভবিষ্যদ্বাণী কী?

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে