এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা বিশাল জয় পেয়েছেন। সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহ-সাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) ২৮টি পদের ২৩টিতেই বিজয়ী হয়েছে ছাত্রশিবির।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার পর ঢাবির সিনেট ভবনে ডাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন ফল ঘোষণা করেন। এ সময় অন্য নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট পেয়েছেন। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৮৪ ভোট পেয়েছেন।
হলভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, রোকেয়া হলে ডাকসুর ভিপি পদে সাদিক কায়েম সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ১ হাজার ৪৭২। এ ছাড়া উমামা ফাতেমা ৬১৪; আবিদুল ইসলাম ৫৭৫; শামীম হোসেন ৬৮৪ ভোট পেয়েছেন।
এদিকে ডাকসু নির্বাচনে জগন্নাথ হলে সহসভাপতি (ভিপি) পদে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন ছাত্রদলের প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের মেঘমল্লার বসু এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ছাত্রদলের প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। এই কেন্দ্রে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভিপি ও জিএস প্রার্থীরা সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, জগন্নাথ হলে ভিপি পদে ছাত্রদলের প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ১ হাজার ২৭৬ ভোট পেয়েছেন। আর ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম ১০ ভোট পেয়েছেন। এই হলে জিএস পদে শিবিরের প্রার্থী এস এম ফরহাদ পেয়েছেন ৫ ভোট। এ ছাড়া প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী তাসনিম আফরোজ ইমি পেয়েছেন ১১ ভোট।
এদিকে ডাকসু নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা। ভোট গণনা চলার মধ্যে গতকাল দিবাগত রাত সোয়া ২টার পর এক ফেসবুক পোস্টে আবিদ লেখেন, ‘পরিকল্পিত কারচুপির এই ফলাফল দুপুরের পরপরই অনুমান করেছি। নিজেদের মতো করে সংখ্যা বসিয়ে নিন। এই পরিকল্পিত প্রহসন প্রত্যাখ্যান করলাম।’
এর ঘণ্টাখানেক পর এক ফেসবুক পোস্টে ডাকসু বর্জনের ঘোষণা দেন উমামা ফাতেমা। তিনি লেখেন, ‘বয়কট! বয়কট! ডাকসু বর্জন করলাম।’ ডাকসু নির্বাচনকে ‘সম্পূর্ণ নির্লজ্জ কারচুপির নির্বাচন’ আখ্যায়িত করে উমামা ফাতেমা লেখেন, ‘৫ আগস্টের পরে জাতিকে লজ্জা উপহার দিল ঢাবি প্রশাসন। শিবির পালিত প্রশাসন।’
এর আগে, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে ডাকসু নির্বাচন। এবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আটটি কেন্দ্রে স্থাপিত ৮১০টি বুথে ডাকসু ও হল সংসদের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ভোটার ছিলেন ১৮ হাজার ৯৫৯ জন এবং ১৩টি ছাত্র হলে ভোটার সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৯১৫ জন।
ডাকসুর ২৮টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৪৭১ জন প্রার্থী। এ ছাড়া প্রতিটি হলে (১৮টি) ১৩টি করে মোট ২৩৪টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের সব মিলিয়ে ৪১টি পদে ভোট প্রদান করতে হয়েছে।