মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:০২:৩৫

হঠাৎ পাল্টে গেল, জানেন কেমন ইলিশ ধরা পড়ছে ইলিশের ভান্ডার বিষখালী নদীতে?

হঠাৎ পাল্টে গেল, জানেন কেমন ইলিশ ধরা পড়ছে ইলিশের ভান্ডার বিষখালী নদীতে?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : সাগর উপকূলীয় জেলা বরগুনা ইলিশের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত হলেও ভরা মৌসুমে অনেকটাই ইলিশ শূন্য অবস্থা বিরাজ করছে। ছিটেফোঁটা যৎসামান্য পাওয়া গেলেও দাম হাঁকা হচ্ছে আকাশচুম্বী। যা রয়েছে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা।

বঙ্গোপসাগরে মোহনায় মিলিত হওয়া প্রমত্তা পায়রা, বিষখালী এবং বলেশ্বর নদী থেকে প্রতিবছর লক্ষাধিক মেট্রিকটন ইলিশ আহরিত হলেও চলতি বছরে তা নেমে এসেছে অর্ধেকের নিচে। দাদন ও ঋণগ্রস্ত মৎস্যজীবীরা চোখে দেখছেন সর্ষেফুল। জেলেপল্লীর অনেকেই জীবনযাপন করতেছে খেয়ে না খেয়ে।

 উপকূলীয় জেলা বরগুনা থেকে আহরিত এক লক্ষাধিক মেট্রিক টন ইলিশ বাংলাদেশের উৎপাদনের একটি বড় অংশ ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আজ সেই ইলিশের রাজত্বে দেখা মিলছে ইলিশের শূন্যতা।

বরগুনার বিভিন্ন মৎস্য আহরণ পয়েন্ট ও পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সাম্প্রতিকালে ইলিশশূন্য হয়ে পড়েছে দেশের সবচেয়ে সুস্বাদু ইলিশের ভাণ্ডার বরগুনার বিষখালী নদী। শুধু বিষখালী নয়, পায়রা, বলেশ্বর ও আন্ধারমানিক নদীর মোহনায় ডুবোচর, পায়রা নদীতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের গরম পানি এবং পলিথিন বর্জ্যের কারণে ইলিশশূন্য হয়ে পড়েছে এই নদীগুলো। স্থানীয় জেলেরা বলেছেন, ঐতিহ্যবাহী বিষখালীর ইলিশের স্বাদ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে হলে এখনই সরকারি উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

 জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর মোহনায় তাপবিদ্যুৎ কোম্পানি স্থাপিত হওয়ায় ইলিশ প্রজননের সময় উপকূলে ভিড়তে পারে না মা ইলিশ। ইলিশ প্রজনন ব্যাহত হওয়ার কারণেই মূলত উপকূলীয় এলাকায় তীব্র মৎস্য সংকট দেখা দিয়েছে।

 আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশনের বরগুনা জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ মহিউদ্দিন এসমে মনে করেন, বঙ্গোপসাগরে ইলিশ মাছের সংকট উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যজীবী, জেলে ও ব্যবসায়ীদের জন্য চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবৈধ জালের ব্যবহার, মা ইলিশ নিধন এবং পরিবেশগত কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উপকূলীয় সাগর, নদনদীসমূহ ইলিশের নির্ভরযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের অনতিবিলম্বে দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন।

 মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিষখালী নদীর মোহনায় ডুবোচর উঠেছে ৬.৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে, বলেশ্বর নদীতে ১১.৪২ কিলোমিটার, আন্ধারমানিক নদীতে ১২ কিলোমিটার এবং পায়রা নদীতে ১৫ কিলোমিটার এলাকায়।

পায়রা নদীর জেলে মোখলেছুর রহমান বলেন, ইলিশ মাছ সাধারণত লবণাক্ত পানিতে থাকে। তবে প্রজননের সময় ডিম পাড়ার জন্য এরা নদীর মিষ্টি পানিতে আসে। সে সময় ডুবোচরে বাধাগ্রস্ত হয়ে আবার গভীর সমুদ্রে ফিরে যায়। ডুবোচরগুলো খনন না করলে নদীতে ফিরবে না ইলিশ।

 বিষখালী নদীর মোহনায় কয়েক কিলোমিটার এলাকায় জেগে উঠেছে ডুবোচর। তাই এই নদীতে প্রবেশে বাধাগ্রস্ত হয়ে গভীর সমুদ্রে ফিরে যাচ্ছে ইলিশ। জেলেরা বলছেন, জাল ফেললেই ইলিশের বদলে উঠে আসছে পলিথিন বর্জ্য।

 যুগ যুগ ধরে মৎস্য আহরণের সাথে জড়িত স্থানীয় জেলের আব্দুল সাত্তার বলেন, প্রতিদিন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে গরম পানি ও পলিথিন পায়রা নদীতে ফেলা হচ্ছে। তীব্র গরম পানির প্রভাবে পায়রার নদীর মোহনায় ইলিশ ভিড়তে পারে না। যার কারণে ইলিশ মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। জাল ফেললে মাছের পরিবর্তে উঠে আসে পলিথিন। জেলে পেশা ছেড়ে অনেকেই অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। এ অবস্থা শুধু বিষখালী নয়, ডুবোচর ও মানবসৃষ্ট কারণে ইলিশ কমেছে পায়রা, বলেশ্বর ও আন্ধারমানিক নদীতেও।

 বরগুনা সদরের বড়ইতলা গ্রামের জেলে আব্দুল আজিজ বলেন, দিনভর জাল ফেলে খরচের টাকাও তুলতে পারছেন না তারা। তাই অনেকেই লোকসানের মুখে ইলিশ শিকার বন্ধ করেছেন এবং অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন।

সচেতন মহল মনে করেন, ইলিশের অভয়ারণ্য হিসেবে পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীগুলো প্রস্তুত করা না হলে অচিরেই দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশ কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে।

 বরগুনা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রমত্তা পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর ও আন্দামানিক নদীতে অন্তত ৮০ হাজার জেলে ইলিশ শিকার করেন। আহরিত মাছের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসায় জেলের সংখ্যা অর্ধেকেরও কম হয়ে গেছে। নদী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন জেলেরা। প্রকৃতি ও মানবসৃষ্ট কারণে হুমকির মুখে ইলিশের ভাণ্ডার।

 জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মহসীন বলেন, মোহনা থেকে নদীর প্রবেশপথের গভীরতা অনেক কমে গেছে। যার কারণে ইলিশের বিচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বরগুনার চারটি নদীর খনন দরকার। তাই আমরা নদীগুলো খননের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে