এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামী দল যখন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিসহ পাঁচ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে, ঠিক তখনই পাল্টা রাজনৈতিক কৌশলে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলটি মনে করছে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। সে অনুযায়ী নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক আবহ তৈরি করতে চায় বিএনপি।
গত সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, নির্বাচন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রায় পাঁচ মাস সময় হাতে রয়েছে। এই সময়কে কাজে লাগিয়ে মাঠে রাজনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।
দলটি মনে করছে, মাঠে সক্রিয় না থাকলে জনগণের আস্থা অর্জন সম্ভব নয়। তাই সম্ভাব্য প্রার্থীদের এখন থেকেই এলাকায় সক্রিয় হতে বলা হয়েছে। জনগণের পাশে থেকে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নারী নেতাকর্মীদেরও এই প্রচারণায় সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটের পরিবেশ তৈরির কথাও ভাবছেন নেতারা।
বিএনপি এখনও আলোচনার পক্ষেই রয়েছে। তবে ইসলামী দলগুলোর আলাদা আন্দোলন বাস্তবিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ
বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, প্রতিটি আসনে দলীয় একক প্রার্থী দেওয়া হবে। মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন থেকেই প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে এ প্রচারণাকে কেন্দ্র করে যেন কোনো কোন্দল বা গ্রুপিং না হয়, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের কাজ চলছে ৩১ দফা জাতীয় সনদের আলোকে। বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাজনৈতিক আলোচনার আহ্বান জানানো হলেও জামায়াতসহ কয়েকটি দল আলাদাভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি নিজের অবস্থানকে পরিষ্কার করতে মাঠে নামবে বলে জানিয়েছে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা বলেন, জামায়াত ও অন্যান্য ইসলামী দলগুলো পিআর পদ্ধতি এবং জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের দাবিকে সামনে রেখে রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় হচ্ছে। তারা আন্দোলনের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা তৈরি করতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি চায়, মাঠের লড়াই হোক মাঠেই। জনগণের কাছে যে যার রাজনৈতিক বক্তব্য তুলে ধরুক, এবং জনগণ যাকে গ্রহণ করবে, সেটাই মেনে নেওয়া হোক।
বিএনপি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির বিরোধী। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পিআর পদ্ধতি আমরা মানি না, তা সে সংসদের উচ্চকক্ষ হোক বা নিম্নকক্ষ— কোথাও নয়। তিনি বলেন, যারা এই পদ্ধতির পক্ষে, তারা যেন নির্বাচনী ইশতেহারে বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে জনগণের রায় নেয়। জনগণের ম্যান্ডেট পেলে তারা আইন প্রণয়ন করতে পারে।
বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু ও জাকসু) নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। নেতারা মনে করেন, এই নির্বাচন দুটি জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। কেন এই দুটি নির্বাচনে ছাত্রদল কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি, সে বিষয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পিআর পদ্ধতি আমরা মানি না, তা সে সংসদের উচ্চকক্ষ হোক বা নিম্নকক্ষ— কোথাও নয়। যারা এই পদ্ধতির পক্ষে, তারা যেন নির্বাচনী ইশতেহারে বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে জনগণের রায় নেয়। জনগণের ম্যান্ডেট পেলে তারা আইন প্রণয়ন করতে পারে।
এছাড়া, ৫ আগস্টের পর সারাদেশে বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। বৈঠকে এসব বিষয় পর্যালোচনা করে নেতারা বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাদের আবার স্বপদে ফিরিয়ে এনে সংগঠনকে শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত হয়।
স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতে, গত কয়েক মাসে সাংগঠনিকভাবে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এখন তা ধরে রেখে মাঠে কার্যকর উপস্থিতি বাড়াতে হবে। জনগণকে বুঝাতে হবে, বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে কী ধরনের গুণগত পরিবর্তন আনবে। ৩১ দফা জাতীয় সনদের আলোকে ভবিষ্যত রাষ্ট্র পরিচালনার রূপরেখা তুলে ধরতে হবে মানুষের সামনে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং জাতীয় সনদ নিয়ে বিএনপির আলোচনার সর্বশেষ অগ্রগতি বৈঠকে উপস্থাপন করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বিএনপি এখনও আলোচনার পক্ষেই রয়েছে। তবে ইসলামী দলগুলোর আলাদা আন্দোলন বাস্তবিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, আমরা রাজপথেই রাজপথের জবাব দেবো। কারও রাজনৈতিক দাবি থাকলে তারা মাঠে বলুক। আমরাও মাঠে বলবো। জনগণ যেটা গ্রহণ করবে, সেটাই চূড়ান্ত হবে।
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, এখন সময় মাঠে থাকার। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টে দিতে হলে জনসম্পৃক্ত কার্যক্রমের বিকল্প নেই। তাই তারা প্রতিটি এলাকায় সাংগঠনিক শক্তি বাড়িয়ে নির্বাচনমুখী পরিবেশ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে। অন্তবর্তী সরকারকে চাপ না দিয়ে তারা জনগণের সমর্থন আদায়ের কৌশলেই এগোতে চায়।