বৃহস্পতিবার, ০৩ মার্চ, ২০১৬, ১০:২৯:৩২

নিজের দুই সন্তানকে হত্যার পর কেঁদেছিলেন অনুতপ্ত মা

নিজের দুই সন্তানকে হত্যার পর কেঁদেছিলেন অনুতপ্ত মা

নিউজ ডেস্ক : মা-ই তো সন্তানের একমাত্র ভরসা।  কিন্তু সেই মায়ের কোল যদি নিরাপদ না হয় তাহলে কার কাছে যাবে সন্তানরা।  সেই গর্ভধারিণী মায়ের হাতেই প্রাণ গেল আদরের দুই সন্তানের।  

রামপুরার বনশ্রীর ঘটনা সবাইকে নাড়া দিয়েছে।  একজন মা হয়ে কি করে সন্তানকে হত্যা করতে পারে? নিজ হাতে আদরের ছেলেমেয়েকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করলেন মা।  পরে অনুতপ্ত হয়ে অঝোরে কাঁদলেন মা।  আবার নিজেকে বাঁচাতে নাটকও সাজালেন।

রাজধানীর রামপুরার বনশ্রীতে দুই ছেলেমেয়ে অরনী (১৪) ও আলভিকে (৬) হত্যার পর তাদের মা মাহফুজা মালেক জেসমিন অনুতপ্ত হন।  সেই অনুশোচনা থেকেই দুই ছেলেমেয়ের লাশের পাশে বসে কিছুক্ষণ কাঁদেন। এরপর শুরু করেন নিজেকে বাঁচানোর পরিকল্পনা।

সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, তার স্বামী আমান উল্লাহ আমানকে ফোন করে বলেন, অরনী ও আলভি কেমন যেন করছে।  তাদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।  পরে আমান উল্লাহর বাসায় আসতে দেরি হবে জেনে বোন মিলাকে ফোন করে বিষয়টি জানান।  

কয়েকজনের সহায়তায় নিহত দুই ছেলেমেয়ের নিথর দেহ নিয়ে যান স্থানীয় আল-রাজি হাসপাতালে।  সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়।  এরপর চিকিৎসক ময়নাতদন্তের জন্য অরনী ও আলভীর মরদেহ ঢামেক মর্গে পাঠায়।  দুই সন্তানের লাশ মর্গে নেয়া হলে বাবা-মা দুজনেই পালান।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জেসমিন জানিয়েছেন, খাদ্যের বিষক্রিয়ায় নয়, মা নিজেই তার দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন।  সন্তানদের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়েই তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানান।  ঘটনার দিন ২৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে অরনী ও আলভীকে তাদের শিক্ষিকা পড়িয়ে যাওয়ার পর মায়ের বেডরুমে ছেলে ঘুমিয়েছিল।

জেসমিন তখন মেয়ে অরনীকে ডেকে নেন তার রুমে।  বলেন তার সঙ্গে রেস্ট নিতে।  এরপর মেয়ের গলায় মা ওড়না পেঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন।  এ সময় অরনী বাধা দিলে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়।  একপর্যায়ে মেয়ে খাট থেকে নিচে পড়ে যায়।  এরপর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন মা জেসমিন।  মেয়েকে হত্যার পর ছেলে আলভীকে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি।

ছেলেমেয়েকে হত্যার পর জেসমিন অনুতপ্ত হয়ে কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করেন। পরে সন্তানদের বাবা আমান উল্লাহকে ফোন করে বলেন, সন্তানরা কেমন যেন করছে।  তাদের হাসপাতালে নিতে হবে।  আমান উল্লাহর আসতে দেরি হওয়ায় তার বোন নিলাকে খবর দেয়া।  পরে আমান উল্লাহর বন্ধুরা এসে দুই ছেলেমেয়েকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান।  সেখান থেকে নেয়া হয় ঢামেক হাসপাতালে।

ওই সময় মাহফুজা নাটক সাজিয়ে বলেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তাদের বিবাহবার্ষিকী ছিল।  এ উপলক্ষে তারা বনশ্রীর ক্যান্ট চায়নিজ রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খান।  খাওয়ার পর অবশিষ্ট অংশ সঙ্গে করে বাসায় নিয়ে আসেন।  পরদিন ওই খাবার খেয়ে দুই সন্তান অসুস্থ হয়ে ‘বিষক্রিয়ায়’ মারা গেছে।
৩ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে