এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ রোববার রাত ১টা ৪০ মিনিটে ঢাকা ছাড়বেন মুহাম্মদ ইউনূসসহ তার সফরসঙ্গীরা।
স্থানীয় সময় এদিন রাতেই তাদের নিউইয়র্ক পৌঁছানোর কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানাতে এবং যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিমানবন্দর, হোটেল এবং জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে গণজমায়েতের ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার সফর কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য নিউইয়র্ক পুলিশ, মেয়র অফিস এবং ফরেন সার্ভিসের কাছে বাড়তি সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশের কনস্যুলার জেনারেল অফিস। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক কালবেলাকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সফর কেন্দ্র করে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিএনপি-জামায়াত আলাদাভাবে অবস্থান করবে বলে দল দুটির স্থানীয় নেতারা আমাদের জানিয়েছেন। তবে আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকব।
অন্যদিকে, কনস্যুলেট অফিস থেকে জানানো হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি কর্মসূচি চলাকালে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, কূটনৈতিক প্রটোকল মানা এবং যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলতে হবে। আরও বলা হয়েছে, কনস্যুলেট প্রাঙ্গণ বা অফিস সংলগ্ন এলাকায় অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের সমাবেশ বা বিক্ষোভ কার্যক্রমকে বেআইনি হিসেবে গণ্য করা হবে।
জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ কালবেলাকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। সেখানে তার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে তবে তা মোকাবিলা করবে সে দেশের কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে নিউইয়র্কের যুবদল নেতা মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস শান্তিতে নোবেল বিজয়ী একজন বিশ্বসমাদৃত ব্যক্তি। তার আগমন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সেজন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকব।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, ২২ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূস নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন। তার ভাষণে জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী গণতান্ত্রিক সংস্কার, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় এবং সাবেক স্বৈরাচারী শাসন-পরবর্তী বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি ভাষণে উঠে আসতে পারে রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু, অর্থায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ার ভূমিকাসহ নানা বিষয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ সফরে ড. ইউনূসের সঙ্গে থাকছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
ড. ইউনূস তার নিউইয়র্ক সফরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাইডলাইনে উচ্চপর্যায়ের কিছু বৈঠকে অংশ নেবেন এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধান নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে। ড. ইউনূসের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘ ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এ সম্মেলন থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে একটি কার্যকর ও সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা, যা এ দীর্ঘস্থায়ী সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।
জাতিসংঘের মিডিয়া অ্যাক্রেডিটেশন অ্যান্ড লিয়াজোঁ ইউনিট (মালু) জানিয়েছে, জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। ‘একসঙ্গে ভালো: শান্তি, উন্নয়ন ও মানবাধিকারের পথে ৮০ বছর ও আরও বেশি’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক মঞ্চে মিলিত হবেন ১৯৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা।
এদিকে শুক্রবার থেকে সাইডলাইনে বিভিন্ন বৈঠক শুরু হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন দেশের প্রধিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। এবারের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু এসডিজি অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা হবে। অধিবেশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) নৈতিক ব্যবহার এবং এর সুশাসন নিয়ে আলোচনা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ আলোচনায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে একটি প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে।