নিউজ ডেস্ক : সন্তানের একমাত্র ভরসা হলো। সন্তানের সুখ-দুঃখের সর্বদা পাশে থাকেন। মায়ের কাছে যেমন সন্তান কলিজার টুকরো ঠিক তেমনি সন্তানের কাছে মা-ও কলিজার টুকরো। কিন্তু সেই মায়ের কোল যদি নিরাপদ না হয় তাহলে সন্তানের আপন বলতে আর কেউ থাকে না। সেই গর্ভধারিণী মায়ের হাতেই যদি প্রাণ যায় সন্তানের তবে এর চেয়ে দুঃখের আর কি আছে।
রামপুরার বনশ্রীতে এমন ঘটনাই ঘটেছে। একজন মা হয়ে কি করে সন্তানকে হত্যা করতে পারে তা ভেবে কেউ পাচ্ছেন না। নিজ হাতে আদরের ছেলেমেয়েকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করলেন এমনই এক মা। পরে অনুতপ্ত হয়ে অঝোরে কাঁদলেনও। আবার নিজেকে বাঁচাতে নাটকও সাজালেন।
কিন্তু সেই মায়ের হাত থেকে বাঁচতে কত চেষ্টাই না করেছে ছোট্ট মেয়ে অরনী (১৪)। বাঁচার জন্য শত চেষ্টা করেছে সে। মায়ের সাথে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে নিচে পড়ে যায় অরনী। কিন্তু পড়ে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তার। নিজের ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। এরপর ছোট্ট আলভিকেও (৬) হত্যা করেন সেই মা।
দুই ছেলেমেয়েকে হত্যার পর অনুতপ্ত হন মা মাহফুজা মালেক জেসমিন। সেই অনুশোচনা থেকেই লাশের পাশে বসে কিছুক্ষণ কাঁদেন তিনি। এরপর শুরু করেন নিজেকে বাঁচানোর পরিকল্পনা।
সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, তার স্বামী আমান উল্লাহ আমানকে ফোন করে বলেন, অরনী ও আলভি কেমন যেন করছে। তাদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। পরে আমান উল্লাহর বাসায় আসতে দেরি হবে জেনে বোন মিলাকে ফোন করে বিষয়টি জানান।
কয়েকজনের সহায়তায় নিহত দুই ছেলেমেয়ের নিথর দেহ নিয়ে যান স্থানীয় আল-রাজি হাসপাতালে। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর চিকিৎসক ময়নাতদন্তের জন্য অরনী ও আলভীর মরদেহ ঢামেক মর্গে পাঠায়। কিন্তু মর্গে নিতে বাধা দেন তাদের মা। দুই সন্তানের লাশ মর্গে নেয়া হলে বাবা-মা দুজনেই পালান। তবে বুঝতে পারেননি তাদের বাবা, এ ঘটনা যে তার স্ত্রীই ঘটিয়েছে।
ঘটনার দিন জেসমিন মেয়ে অরনীকে ডেকে নেন তার রুমে। বলেন, তার সঙ্গে রেস্ট নিতে। এরপর মেয়ের গলায় মা ওড়না পেঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। এ সময় অরনী বাধা দিলে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়। একপর্যায়ে মেয়ে খাট থেকে নিচে পড়ে যায়। এরপর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন মা জেসমিন। মেয়েকে হত্যার পর ছেলে আলভিকে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি।
ছেলেমেয়েকে হত্যার পর জেসমিন অনুতপ্ত হয়ে কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করেন। পরে সন্তানদের বাবা আমান উল্লাহকে ফোন করে বলেন, সন্তানরা কেমন যেন করছে। তাদের হাসপাতালে নিতে হবে। আমান উল্লাহর আসতে দেরি হওয়ায় তার বোন নিলাকে খবর দেয়া হয়। পরে আমান উল্লাহর বন্ধুরা এসে দুই ছেলেমেয়েকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে নেয়া হয় ঢামেক হাসপাতালে।
কিন্তু মাহফুজার নাটক তখনো বুঝতে পারেননি কেউ। সাজিয়ে তিনি বলেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তাদের বিবাহবার্ষিকী ছিল। এ উপলক্ষে তারা বনশ্রীর ক্যান্ট চায়নিজ রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খান। খাওয়ার পর অবশিষ্ট অংশ সঙ্গে করে বাসায় নিয়ে আসেন। পরদিন ওই খাবার খেয়ে দুই সন্তান অসুস্থ হয়ে ‘বিষক্রিয়ায়’ মারা গেছে বলে জানান তিনি।
এদিকে মা মাহফুজা জেসমিন একাই দুই সন্তানকে হত্যা করতে সক্ষম কি না এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।
ফরেনসিক রিপোর্টে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে জানিয়ে ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, আলামতে নাকে-মুখে ও গলায় চাপ দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। আমরা যে ধরনের আলামত পেয়েছি তার ভিত্তিতে বলা যায়, একজনের পক্ষে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা দুষ্কর। বিশেষ করে চৌদ্দ বছরের একটি মেয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় না থাকলে একজনের পক্ষে শ্বাসরোধে হত্যা করাটা কঠিন।
৩ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম