এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। সেখানে সম্প্রতি বিমানবন্দরে হামলার শিকার হন এনসিপি নেতা আখতার হোসেন।
এসময় ঘটনাস্থলে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এনসিপি নেত্রী ডা. তাসনিম জারাও। প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেও বিমানবন্দরে কেন আলাদা আলাদাভাবে রাজনীতিবিদরা বের হলেন সে নিয়ে চলছে আলোচনা। বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলা সংবাদপত্র ‘ঠিকানা’য় সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
বিমানবন্দর থেকে আলাদা বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তাহের বলেন, আমাদেরকে প্রথমে চিফ এডভাইজারের বহরে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠানো হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা গেল দুরকম ভিসা। যারা সরকারি লোক তাদের ভিসা জি ওয়ান। আমাদের ভিসা ছিল রেগুলার ট্যুরিস্ট ভিসা। এখানে নিয়ম হলো যাদের জি ওয়ান ভিসা তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট লাগে না। কিন্তু আমাদের ভিসার ফিঙ্গার প্রিন্ট লাগে। এখানে কমিউনিকেশন গ্যাপ হয়েছে। পরে আমরা হেঁটে ইমিগ্রেশনে চলে আসি।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের জন্য ১০ মিনিটেরও বেশি সময় অপেক্ষা করেছেন।
বিমানবন্দরের ঘটনায় বাংলাদেশ মিশনের ত্রুটি ছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা যথাযথভাবে ইনফর্ম করা যে কী হচ্ছে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া, আমরা যদি একসাথে বের হতাম তাহলে আমাদের কাছে হয়তো ওরা (হামলাকারীরা) আসতো না।
প্রবাসী আওয়ামী লীগকর্মীরা যখন এনসিপি নেতা আখতার হোসেনকে ডিম মারছিল তখন তাসনিম জারাকে দেখা গেছে, পাশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ছিলেন কিন্তু এই ঘটনা যখন ঘটছিল তথন আপনি ছিলেন না। কেউ কেউ বলছেন আপনার কাছে হয় তো খবর ছিল বা আপনাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বিষয়টা আসলে কী? খালেদ মুহিউদ্দীনের এমন প্রশ্নে তাহের বলেন, আওয়ামী লীগ যে এমন কাজ করতে পারে এটা তো আমাদের আগেও দেখা ছিল। এমন ঘটনা ওরা আগেও করেছে। এমন আশঙ্কা ছিল। কিন্তু তারা আসলে এখানে কী করছে বা বাইরে কী ঘটছে তা বের হওয়ার আগে বুঝতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, আমিও উনাদের সাথে ছিলাম। উনারা ৮-১০ হাত আগে ছিলেন। এসময় আমাদের ছেলেরা তাহের ভাই, তাহের ভাই, জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ বলে স্লোগান দিচ্ছিল। ব্যানার ছিল, প্ল্যাকার্ড ছিল। আমি দুয়েকজনকে বললাম তোমরা ফখরুল সাহেবের নামেও স্লোগান দাও। কারণ একটু খারাপ লাগে। কিন্তু ছেলেরা খুব উত্তেজিত। স্লোগান দিচ্ছিল, কথা শুনছিল না। তখন আমি ভাবলাম যে ফখরুল ভাই মনে হয় বিব্রতবোধ করছেন। এ কারণে আমি একটু দূরত্ব বজায় রাখছিলাম। যাতে স্লোগানটা উনার কানে না যায়। পরে তারা আমাকে সংবর্ধনা দিলো, ফুল দিলো। আমিও সেখানে ৩-৪ মিনিট বক্তব্য দিয়েছি। এ কারণে টাইম গ্যাপটা একটু বেশি হয়ে গেছে। পরে ডিম মারার বিষয়টা আমি শুনতে পেলাম।
তিনি বলেন, তবে সেখানেও টিভিতে আপনারা দেখবেন যে আখতারকে যে দুজন ছেলে প্রোটেকশন দিয়ে রেখেছে আমাদেরই ছেলে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।
এর আগে নিউইয়র্কে বিএনপি ও এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছে যে গত সোমবার নিউইয়র্কে ঘটে যাওয়া একটি নিন্দনীয় ঘটনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ন্যাশনাল সিটিজেন্স পার্টি (এনসিপি)-এর নেতা আখতার হোসেন ও তাসনিম জারা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলার শিকার হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, এই হামলা ঘটিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও সমর্থকরা।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই জঘন্য ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই বিষাক্ত ও সহিংস রাজনৈতিক সংস্কৃতির কথা, যা হাসিনার শাসনামলে ছড়িয়ে পড়েছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ—এই অশুভ উত্তরাধিকার ভেঙে দিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।
এতে আরও বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একাধিক বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর প্রতিনিধি দলকে প্রথমে ভিভিআইপি গেট দিয়ে নেয়া হয় এবং নিরাপদ যানবাহনে তোলা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে শেষ মুহূর্তে বিকল্প পথে বের হতে বাধ্য হন তারা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ভিভিআইপি প্রটোকল ও নিরাপত্তা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানানো হলেও, দুঃখজনকভাবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে অভিযোগ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এর ফলে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ঝুঁকির মুখে পড়েন। ঘটনার পরপরই নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ইতোমধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রতিনিধি দলের সবার নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন ফেডারেল ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আবারও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছে—গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষায় আমাদের অঙ্গীকার অটল। বাংলাদেশ কিংবা দেশের বাইরে—যেখানেই হোক না কেন—রাজনৈতিক সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের কোনো ঘটনা বরদাশত করা হবে না। এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনি ও কূটনৈতিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।