এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : চাকরি শেষে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন ও নতুন সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকারি চাকরিজীবী পেনশন ভোগরত অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করলে মৃত্যুর পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী অথবা স্বামীও নিয়ম অনুযায়ী পেনশন পাবেন। পাশাপাশি শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী কর্মকর্তাদের পেনশন পুনঃস্থাপনের নির্ধারিত অপেক্ষাকাল ১৫ বছর থেকে কমিয়ে ১০ বছর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জটিল রোগে আক্রান্ত হলে পেনশনাররাও সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড থেকে চিকিৎসা সহায়তা পাবেন।
সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় পেনশন গ্রহীতাদের নানা সমস্যার বিষয় তুলে ধরেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব আ ক ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পেনশন ভোগরত অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করলে মৃত্যুর পর দ্বিতীয় স্ত্রীকেও পারিবারিক পেনশন দেওয়ার প্রস্তাব জাতীয় বেতন কমিশনে পাঠানো হবে। একইসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত প্রবাসী কর্মকর্তাদের জন্য বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে পেনশন সংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষরদান ও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের বিষয়টি অর্থ বিভাগ পর্যালোচনা করবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, পেনশনভোগী কর্মকর্তা মারা গেলে তার প্রথম স্ত্রী বা স্বামী আজীবন পেনশন পান। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের ক্ষেত্রে পুনঃস্থাপনের জন্য অপেক্ষাকাল ১৫ বছর। এছাড়া এখন পর্যন্ত জটিল রোগে আক্রান্ত হলে পেনশনাররা সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড থেকে চিকিৎসা সহায়তা পেতেন না।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীরা সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পেনশন পুনঃস্থাপন না করে মারা গেলে তাদের স্বামী/স্ত্রী বা যোগ্য উত্তরাধিকারীদের অনুকূলে পেনশন মঞ্জুরের বিষয়টি অর্থবিভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। সরকারি কর্মচারীরা অবসরের পর মাসিক পেনশন পান। পেনশনভোগী মারা গেলে তার স্ত্রী বা স্বামী আজীবন বা কোনও ক্ষেত্রে যোগ্য পোষ্যরা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত পেনশন পান।
১৯৮০ সাল থেকে সরকার পেনশনের পুরো টাকা একসঙ্গে তোলার সুযোগ দেয়। অনেকেই সেই টাকা পারিবারিক কাজে ব্যয় করেন বা সন্তানের হাতে তুলে দেন এবং পরবর্তীতে আর্থিক সংকটে পড়েন। এতে বিপাকে পড়া অনেক পেনশনার একটি সংগঠন গড়ে তুলে সরকারের কাছে দাবি জানাতে থাকেন।
২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাদের মাসিক পেনশন পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। অর্থ বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, অবসর গ্রহণের ১৫ বছর পর এ সুবিধা পাওয়া যায়। বর্তমানে যারা একসঙ্গে পুরো টাকা তুলেছেন তারা মাসিক পেনশন পান না, বরং বছরে দুটি উৎসব ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা পান।
তবে পেনশন পুনঃস্থাপনের আগেই কেউ মারা গেলে তার স্ত্রী বা স্বামী বা উত্তরাধিকারীরা কোনও সুবিধা পান না। সম্প্রতি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এ ক্ষেত্রে অর্থবিভাগ বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখবে। এছাড়া অপেক্ষাকাল ১৫ বছর থেকে কমিয়ে ১০ বছর করার প্রস্তাব জাতীয় বেতন কমিশনে পাঠানো হবে।
২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের উৎসব ভাতা ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট হিসেবে দেওয়া হলেও পেনশন পুনঃস্থাপিত হলে এই ইনক্রিমেন্টের অর্থ যোগ হচ্ছে না। বৈঠকে বিষয়টি সমাধানের জন্য অর্থ বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের মতো অবসরপ্রাপ্ত পেনশনাররাও জটিল রোগে আক্রান্ত হলে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড থেকে চিকিৎসা সহায়তা পাবেন- এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি কমিটিতে জনপ্রশাসন সচিবকে সদস্য করার বিষয়টি অর্থ বিভাগকে পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়েও ব্যাপক প্রচারণা চালাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।