এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ভরা মৌসুমেও বাংলাদেশের বাজারে এবছর ইলিশের সরবারহ বেশ কম। বাজারে এবারের মতো ইলিশের সংকট নিকট অতীতে দেখা যায়নি বলে মত সংশ্লিষ্টদের। নদীতে ও সাগরে জেলেদের জালে মিলছে না কাঙিক্ষত পরিমাণের ইলিশ। যা মিলছে তার বেশিরভাগই আকারে ছোট। বাজারে সেগুলোর দামও চাড়া। আর বড় আকারের যেগুলো ধরা পড়ছে সেগুলোর দাম তো প্রায় আকাশছোঁয়া।
এদিকে, ইলিশ রফতানির জন্য দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু সরকার নির্ধারিত রফতানি মূল্যের চেয়ে দেশের বাজারে ইলিশের দাম অনেক বেশি। এমন পরিস্থিতিতে অনুমতি পেয়েও রফতানিতেতে অনীহা ইলিশ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর।
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ মাছ রফতানির জন্য দেশীয় ৩৭টি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানকে সরকার অনুমোদন দিয়েছে। এই অনুমোদনের আওতায় মোট ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি করা যাবে। রফতানির এই প্রক্রিয়া গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যন্ত।
রফতানির ক্ষেত্রে প্রতিকেজি ইলিশের সরকার নির্ধারিত দাম ১২ দশমিক ৫ ডলার (প্রতি ডলার ১২০ টাকা দরে বাংলাদেশের মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৫০০)।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতিকেজি ইলিশ ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৯০০ গ্রাম ওজনের প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকা দরে। এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ টাকা কেজি দরে। আর এক কেজি থেকে ১২শ গ্রাম ওজন সাইজের প্রতিকেজি ইলিশের দাম ২৪২৫ টাকা।
রফতানিকারকরা বলছেন, ভারতে রফতানি মূল্যের তুলনায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বেশি থাকায় জেলেরা ইলিশ বাইরে পাঠাতে চাইছেন না। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে এবছর ৫০০ টন ইলিশ রফতানি করাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। আবার ইলিশের দাম বেশি হওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গের বাজারের চাহিদাও কমেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। সবমিলিয়ে লোকসানের ভয়ে রফতানির সনদ নিয়েও অনেক ব্যবসায়ী ইলিশ মাছ না পাঠিয়ে বসে আছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিরোজপুরের পাড়েরহাটের ইলিশ ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এ বছর ইলিশের আকাল চলছে। নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না। যা মেলে তা নদীতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এ বছর প্রতিকেজি ইলিশ নদীতেই বিক্রি হচ্ছে ২০০০ টাকার বেশি দরে। আমরা রফতানির জন্য এবছর ২৩ টন ইলিশের অর্ডার পেয়েছি। এখন পর্যন্ত ১২ টন ইলিশও সরবরাহ করতে পারিনি। বাকি ১০ দিনে কতটুকু পারবো জানি না।’
এদিকে বেনাপোল বন্দর সুত্রে জানা গেছে, গত সাত দিনে মাত্র ২৩২ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি হয়েছে এই বন্দর দিয়ে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১৬০০ থেকে ২৪০০ টাকা কেজি দরে ইলিশ কেনার পরে তা রফতানির জন্য প্যাকেজিং ও বেনাপোল পর্যন্ত পরিবহনে আরও ১০০ থেকে ১৩০ টাকা খরচ পড়ে। তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ১২ দশমিক ৫ ডলার বা ১৫০০ টাকা কেজি দরে রফতানি করা হলে তাদের বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানী ঢাকার খিলগাঁওয়ের ইলিশ মাছ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বিডিএস এগ্রোর ম্যানেজার কাওছার মিয়া বলেন, ‘আমরা ৩০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির অনুমতি পেয়েছি। তবে দাম বেশি হওয়ায় এখন পর্যন্ত ৫ টনও রফতানি করতে পারিনি। আমরা পিরোজপুর ও পটুাখালীর মহিপুর থেকে ইলিশ সংগ্রহ করি। কিন্তু জেলেরা স্থানীয় বাজারে বেশি দর পেয়ে সেখানেই ইলিশ বিক্রি করে দিচ্ছেন।’
বরিশালের পোর্ট রোডের ইলিশ রফতানিকারক নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজের সেলিম হোসেন বলেন, ‘আসন্ন দুর্গাপূজায় আমরা ভারতে ৪০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির অনুমতি পেয়েছি। এ পর্যন্ত ১৩ টন ইলিশ রফতানি করতে পেরেছি। গতবছরে রফতানি শুরুর ৪ দিনে বরিশাল থেকে ভারতে ইলিশ গিয়েছিল ৬০ মণ, কিন্তু এবার ৪ দিনে রফতানি হয়েছে মাত্র ৪৮ মণ।’