এম এ নোমান, নিউ ইয়র্ক থেকে: জাতিসংঘের সামনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে হেনস্তা করতে বিভিন্ন দেশ থেকে দলবল নিয়ে নিউইয়র্কে এসে ঘাঁটি গেড়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা নিঝুম মজুমদার।
উল্টো এখন মামলার আসামি হয়ে নিউ ইয়র্কে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী বুদ্ধিজীবী হিসেবে 'হারপিক মজুমদার' নামে পরিচিতি পাওয়া নিঝুম মজুমদার। ঘনঘন ঠিকানাও বদল করতে হচ্ছে তাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী এবং নিউ ইয়র্কে কর্মরত বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে অজ্ঞাত স্থানে নিজের পছন্দের কয়েকজন সাংবাদিককে ডেকে মতবিনিময় করেছেন নিঝুম মজুমদার। সেখানে তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে শেখ হাসিনার দাবির বিষয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলে এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন,
'দেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা হতে পারে কেবলমাত্র শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে গঠিত তত্ত্ববধায়ক সরকারে হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে। কারণ, তিনি (শেখ হাসিনা) এখনো সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।'
মজুমদার বলেন, 'আমি মনে করি- শেখ হাসিনা একটা ইলেকশন দিবেন, এবং যদি তত্ত্বাবধাক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসে তখন তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করবেন।'
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের জাতিসংঘের ৮০তম সাধারন অধিবেশনে সরকারের উপদেষ্টা ও কূটনীতিকদের বাইরেও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির ছয়জন নেতা অংশ নেওয়ার ঘটনা রাজনৈতিক দলগুলো বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতাদের নাজেহাল করার জন্য আওয়ামী লীগ ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়।
দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতের আশ্রয়ে থাকা দলটির নেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার নেতাদের ফোন করে প্রকাশ্যে হামলা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির নির্দেশ দেন। জেকসন হাইটস, জামেইকা ও মেনহাটন এলাকায় আয়োজিত সমাবেশগুলোতে শেখ হাসিনার ভিডিও কল দিয়ে নেতাকর্মীদের ড. ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীরা যাতে অক্ষত ফিরতে না পারে সে বিষয়ে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ও ফোনে নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ও অর্থের যোগান দেন।
সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনার বিশেষ এসাইনমেন্ট নিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে নিউ ইয়র্কে আসেন নিঝুম মজুমদারও।
মেনহাটনের একটি হোটেলে অবস্থান করে নিজুম মজুমদার হামলা ও জাতিসংঘের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ছক আকেন। জেকসন হাইটস এলাকা ও জনএফকে বিমানবন্দবিএনপিসহ রাজনৈতিক নেতাদের নাজেহাল করে আওয়ামী লীগ। এ দুটি হামলার ঘটনার সময় নিজুম মজুমদার পেছনে থেকে নেতৃত্ব দিলেও ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে মেনহাটনের গ্রেন্ড হায়াত হোটেলে হামলার ঘটনায় সামমে থেকে তাকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। এ হোটেলটিতে প্রধান উপদেষ্টাসহ রাজনৈতিক নেতারা অবস্থান করেন।
হোটেলটিতে হামলার পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে মার্কিন স্টেটডিপার্টমেন্টকে অনুরোধ জানানো হয়। নিউ ইয়র্ক পুলিশের পরামর্শে এনসিপি নেতা আখতার হোসেন বাদি হয়ে একটি মামলা করেন। আলামত হিসেবে নিজুমদারের নেতৃত্বে হামলা ও মহড়ার ভিডিও ফুটেজ দেওয়া হয়।
২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার ভাষনের দিন জাতিসংঘের সদরদপ্তরের সামনে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটায় বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। এতে পিছু হটতে বাধ্য হয় আওয়ামী লীগ।
ওইদিন জাতিসংঘের সামনে সমাবেশ করতে এসে নাজেহাল হন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
ওইদিনের আওয়ামী লীগের সমাবেশ সম্পর্কে বিএনপির এক নেতা বলেন, আপনারা সবাই অবগত আছেন গত তিন-চার দিন ধরে নিউ ইয়র্কে আওয়ামী লীগ নজিরবিহীন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। তারা আমাদের নেতাদের ওপর বর্বর হামলা করেছে। হোটেলে এসেও আমাদের নেতাদের হত্যার হুমকি দিয়েছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। তাদের নেত্রী ভারতের আশ্রয়ে থেকে ফোনে তার নেতাকর্মী নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের নেতাদের নাজেহাল করার জন্য।
এর সব রেকর্ড, নথি, ভিডিও ফুটেজ আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে জমা দিয়েছি। এছাড়াও এনসিপি নেতা আখতার হোসেন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন। এখন ওরা গা ঢাকা দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে বলেও জানান বিএনপির এ নেতা।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা দেশে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় বেশ কিছু বই ও লিফলেট ছাপিয়েছিলাম। বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মীদের নিয়ে নিঝুম দা জাতিসংঘের সামনে এগুলো বিতরণ করবেন, এমন পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু দাদা আসতে পারেননি। তার আগেই আমাদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
জাতি সংঘের সদরদপ্তরের অনেক দূরের একটি সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে নিজুম মজুমদার ওইদিন ভারতীয় দুইজন সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দেন। এতে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে দশ লাখ হিন্দু ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।- আমার দেশ