বুধবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০২:২৪:৪৪

সাবধান, এবার অভিনব প্রতারণা ফোন করে, নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা!

সাবধান, এবার অভিনব প্রতারণা ফোন করে, নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ‘হ্যালো, জেলখানা থেকে বলছি। আপনার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেন।’ গত ১ জুলাই একটি নম্বর থেকে ফোন করে এভাবেই একজন কথা বলেন গৃহবধূ রোকেয়া বেগমের সঙ্গে।

এ সময় পাশ থেকে আরেকজন তার স্বামী বলে কাঁদতে কাঁদতে রোকেয়াকে বলেন, তাকে কারাগার থেকে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়েছে। বাঁচাতে হলে খরচপাতি দিতে হবে ডিবিকে। এরপর মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) কয়েকটি নম্বর দেওয়া হয় রোকেয়াকে। সেসব নম্বরে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পাঠালেও স্বামীর দেখা পাননি রোকেয়া।

সম্প্রতি এমন অভিনব প্রতারণার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেক ঘটনায় ভয়, মিথ্যা তথ্য এবং আতঙ্কগ্রস্ত করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকচক্র। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব প্রতারক ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। কারণ বেশিরভাগ ভুক্তভোগী আইনের দ্বারস্থ হতে চান না।

তবে রোকেয়া বেগম ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় গেলে একটি লিখিত অভিযোগ নেওয়া হয়। এছাড়া টাকা হারানোর বিষয়ে সাতটি পৃথক জিডি নেওয়া হয়। ঘটনার চার মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতারকদের শনাক্ত বা আটক করতে পারেনি পুলিশ।

ভুক্তভোগী রোকেয়া বেগম কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা। তার স্বামী মোক্তার হোসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মামুন নামের এক যুবককে হত্যার ঘটনায় রাজধানীর কাফরুল থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন। প্রায় ছয় মাস কারাগারে থাকার পর গত ৬ সেপ্টেম্বর জামিন পান মোক্তার। তিনি যখন কারাগারে ছিলেন তখনই এই প্রতারণার শিকার হন তার স্ত্রী।

রোকেয়া বেগমের করা সবগুলো জিডির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহিদুর রহমানকে। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় জিডির ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরগুলোর বিপরীতে সাতটি জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছি। কিন্তু সেগুলো আমার থানা এলাকার না হওয়ায় আমি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। সপ্তাহখানেক আগে বিষয়টি সিআইডিতে পাঠিয়েছি।’

গৃহবধূ রোকেয়া বেগমের মতো প্রতিনিয়ত এরকম প্রতারণার শিকার হচ্ছেন লোকজন।

১০ লাখ টাকা না দিলে বাচ্চাকে মেরে ফেলা হবে
বেসরকারি চাকরিজীবী এক ব্যক্তির দুই শিশুসন্তান কোচিংয়ে যায়। তিনি অফিসে ছিলেন। প্রতারকচক্র ওই চাকরিজীবীর নম্বরে ফোন করে বলে, তার বড় মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে। ১০ লাখ টাকা না দিলে বাচ্চাকে মেরে ফেলা হবে। ফোনে কথা বলার সময় এক বাচ্চার কান্নাকাটির শব্দ ফোনের ওপাশ থেকে শোনানো হয়। প্রতারকরা হুমকি দেয়, যদি ফোন কেটে দেয় তাহলে বাচ্চাকে এখনই মেরে ফেলা হবে।

ভুক্তভোগী এ কথা শুনে ভয় পেয়ে যান এবং তিনি ফোন কাটেননি। ফোনে লাইনে থেকে অফিসের সহকর্মীদের কাছ থেকে নিয়ে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা তিনি এমএফএস নম্বরে পাঠান। এ কার্যক্রম করতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। টাকা পাওয়ার পর কল কেটে দেয় প্রতারকরা। পরে ভুক্তভোগী তার বাসায় খবর নিয়ে দেখেন বাচ্চারা কোচিং থেকে বাসায় চলে গেছে। অর্থাৎ প্রতারকরা তাকে বাসায় ফোন দেওয়ার সুযোগও দেয়নি।

আপনার ছেলেকে মাদকসহ ধরা হয়েছে, ১০ লাখ টাকা পাঠাতে হবে
অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন আসে রাজধানীর শীর্ষস্থানীয় এক ব্যবসায়ীর মোবাইলে। ফোনটি ধরার সঙ্গে সঙ্গেই অপরপ্রান্ত থেকে পুলিশের পরিচয়ে কথা বলেন এক ব্যক্তি। জানানো হয়, তার ছেলেকে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। ব্যবসায়ী হতভম্ব হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি আরও আতঙ্কজনক হয়ে ওঠে, যখন ফোনে পুলিশের গাড়ির সাইরেনের শব্দ শোনা যায়। থানায় না নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে চান কি না? এজন্য ১০ লাখ টাকা পাঠাতে হবে, সময় মাত্র ১৫ মিনিট।

এ সময় তিনি বারবার ছেলেকে ফোন করতে থাকেন, কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি। গভীর দুশ্চিন্তা ও তীব্র মানসিক চাপে, তিনি ম্যানেজারকে নির্দেশ দেন দ্রুত টাকা পাঠানোর জন্য। তার কথা অনুযায়ী, কয়েকটি এমএফএস নম্বরে মোট ১০ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। টাকা পাঠানোর পরপরই প্রতারকদের ফোন নম্বরগুলো বন্ধ হয়ে যায়।

এক ঘণ্টা পর তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা শেষে মোবাইল হাতে নেন। দেখেন, বাবাসহ আত্মীয়-স্বজনদের ৪২টি মিসড কল। এত কল দেখে ভয় পেয়ে যান। ছেলে তখনই বাবাকে ফোন করে যোগাযোগ করেন। পুরো ঘটনা শুনে অবাক। ছেলে পুলিশের কাছে মাদকসহ আটক হয়নি বিষয়টি বিশ্বাস করাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সঙ্গেও বাবার কথা বলিয়ে দেন। তখন বিষয়টি পরিষ্কার হয়, ছেলেকে আটকের ঘটনা সম্পূর্ণ ভুয়া, পুরোটা ছিল একটি পরিকল্পিত প্রতারণা।

পুলিশ পরিচয়ে ফোন দেওয়া প্রতারকদের নতুন কৌশল। তারা প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারককে শনাক্তের চেষ্টা করছেন। - হাটহাজারী থানার ওসি মনজুর কাদের ভূঁইয়া

‘থানা থেকে ওসি বলছি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
‘আমি থানার ওসি বলছি। আপনার মোবাইল ফোন হ্যাকড হয়েছে। আমাদের সাইবার টিম এটা নিয়ে কাজ করছে। হ্যাকারের পরিচয় শনাক্ত করতে আপনার হোয়াটসঅ্যাপে একটি লিংক পাঠানো হয়েছে, সেখানে ক্লিক করুন।’

এমন ফোন পেয়ে ঘাবড়ে গিয়ে কথামতো লিংকে ঢোকেন মোবাইলের মালিক। এরপর ফোনের মালিক জানতে পারেন, তার নম্বর থেকে পরিচিত বন্ধু, সহকর্মী ও স্বজনদের কাছ থেকে তার নাম করে টাকা চাওয়া হচ্ছে। যখন বুঝতে পারেন তিনি হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন, ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে তার।

মোবাইলে এমন প্রতারণা শিকার হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর তার হোয়াটসঅ্যাপ আইডি হ্যাক করা হয়। হ্যাকড হওয়ার পর থেকেই তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে বিভিন্নজনের কাছে টাকা চাওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় হাটহাজারী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন অধ্যাপক কামাল উদ্দিন।

জানতে চাইলে অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিচয়ে একজন তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল দেন। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একটা লিংক পাঠানো হয়। তিনি এই লিংকে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর হ্যাকড হয়। এরপর এ নম্বর থেকে বিভিন্নজনের কাছে টাকা চাওয়া হয়। তখনই তিনি হ্যাকড হওয়ার বিষয়টি টের পান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ওসি মনজুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, পুলিশ পরিচয়ে ফোন দেওয়া প্রতারকদের নতুন কৌশল। তারা প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারককে শনাক্তের চেষ্টা করছেন।

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও আক্কেলপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রহিম স্বাধীনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর একটি প্রতারকচক্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের ভয় দেখিয়ে তাদের কাছে চাঁদা চায়।

প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোমিন বলেন, অপরিচিত একটি নম্বর থেকে পুলিশ পরিচয়ে ফোন করা হয়। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে জয়পুরহাট সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পরিচয়ে আমাকে মামলার ভয় দেখিয়ে বলেন, আব্দুর রহিম স্বাধীন গ্রেফতারের পর তথ্য দিয়েছে, আপনিও আওয়ামী লীগ করেন। সেই সূত্র ধরে আপনার বিরুদ্ধে থানায় মামলা ফাইল হচ্ছে। মামলা থেকে বাঁচতে হলে এখনই ৭০ হাজার টাকা পাঠান। এ টাকা না পাঠালে এক্ষুনি আপনাকেও গ্রেফতার করা হবে।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাজমুল কাদের বলেন, ‘আমার মোবাইল ফোন থেকে টাকা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র এগুলো অপকর্ম করছে। পুলিশ তৎপর রয়েছে।’ পুলিশ পরিচয়ে কেউ ফোন করে টাকা দাবি করলে তাদের টাকা না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেন তিনি।

পুলিশ-সেনাবাহিনীতে চাকরির নামে প্রতারণা
এক ভুক্তভোগীর ছোট ভাই গত ১৪ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের সফিপুর আনসার ব্যাটালিয়ন একাডেমির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে বাদ পড়েন। পরে অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি মোবাইলে যোগাযোগ করে নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর সোহেল হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি দাবি করেন, তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, ১২ লাখ টাকা দিলে তিনি চাকরি নিশ্চিত করতে পারবেন। পরে ঢাকার শাহ আলী থানা এলাকার একটি হোটেলে ভুক্তভোগীর সঙ্গে দেখা করেন সোহেল রানা। সেখানে ঘটনার মূল হোতা সোহেল রানা নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর ও তার সহযোগী তৈয়বুর রহমানকে কর্নেল হিসেবে পরিচয় করান। চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে তারা ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রথমে ব্যাংকের মাধ্যমে চার লাখ টাকা ও পরে কয়েকটি এমএফএস নম্বরে আরও এক লাখ টাকা নেন। নিয়োগপত্র দেওয়ার পর ভুক্তভোগী কাগজপত্র যাচাই করে দেখতে পান সেটি ভুয়া।

অভিযোগ পাওয়ার পর র‌্যাব-৪ তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে ঢাকা ও সাভারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। এ সময় প্রতারকচক্রের মূলহোতাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়।

সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুয়া গ্রেফতার দেখিয়ে বা পুলিশ পরিচয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের ঘটনা এখন নতুন এক প্রতারণার ট্রেন্ড। এতে সাধারণত শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী বা প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যদের টার্গেট করা হয়। এসব চক্র মানুষের ভীতি ও আবেগকে পুঁজি করে অল্প সময়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ভুক্তভোগীরা তখন এতটাই মানসিক চাপে থাকেন যে যাচাই করারও সুযোগ পান না।

অপরাধীরা আশপাশের প্রতিবেশী অথবা জানাশোনা লোকজন। টার্গেট করা ব্যক্তির সন্তান কতক্ষণ স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকছে, স্কুল থেকে বের হয়ে কোচিংয়ে কতক্ষণ থাকছেন এসব বিষয় মনিটর করার পরে ফাইনাল কাজ করছে অপরাধীরা। এমন ঘটনার সময় বাবা-মায়েরা ট্রমার মধ্যে পড়ে যায়।- অপরাধ বিশ্লেষক অধ্যাপক ওমর ফারুক

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেসবুক হ্যাক করে প্রতারণা, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের ওটিপি প্রতারণা ও বিকাশের প্রতারণাগুলো অনেক আগে থেকে হয়ে আসছে। এখন মানুষ অনেক বেশি সচেতন। এজন্য প্রতারণার ধরন বদলাচ্ছে চক্রগুলো।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, প্রতারকরা প্রথমে টার্গেট করে আদ্যপান্ত জেনে নেয়। পরে অত্যন্ত কৌশলে প্রতারণার কাজটি করে। উদ্বেগের বিষয় হলো প্রতারণার শিকার হয়েছেন-হচ্ছেন অনেকেই কিন্তু বেশিরভাগ ভুক্তভোগী অভিযোগ করতে চান না। এজন্য পুলিশের পক্ষেও জানা সম্ভব হয় না কারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রতারণার ঘটনা ছোট কিংবা বড় যেটাই হোক পুলিশের কাছে যেতে হবে। যাতে প্রতারকরা আইনের আওতায় আসতে পারে।

কেন প্রতারণার শিকার হয়েও আইনগত ব্যবস্থা নেন না অনেকে
অপরাধ বিশ্লেষক টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, অপরাধীরা পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের অপরাধ করছে। টার্গেট অনুযায়ী করছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অপরাধীরা আশপাশের প্রতিবেশী অথবা জানাশোনা লোকজন। টার্গেট করা ব্যক্তির সন্তান কতক্ষণ স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকছে, স্কুল থেকে বের হয়ে কোচিংয়ে কতক্ষণ থাকছেন এসব বিষয় মনিটর করার পরে ফাইনাল কাজ করছে অপরাধীরা। এমন ঘটনার সময় বাবা-মায়েরা ট্রমার মধ্যে পড়ে যায়। আবেগজনিত কারণে তারা মনে করে আগে তার সন্তানকে উদ্ধার করতে যত টাকা লাগে দেবে এরপর আইনগত ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু পরে যখন দেখে প্রতারণার শিকার হয়েছেন কিন্তু সন্তান ঠিক আছে এরপর অধিকাংশ বাবা-মা আইনগত ব্যবস্থা নিতে চান না ঝামেলার কারণে।

তিনি বলেন, অপরাধীরা মোবাইল সিমগুলো একবারই ব্যবহার করে। এরপর ফেলে দেয়। সিমগুলো বেশিরভাগই ভুয়া নামে কেনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের ট্রেস করে পায় না। সিম কোম্পানিগুলোর আরও বেশি যাচাই-বাছাই করে সিম বিক্রি করা প্রয়োজন। মুদির দোকানে গেলেও এমএফএস অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। এত বেশি সহজ সিস্টেম না দিয়ে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে সরকারের মনিটরিং করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

হঠাৎ কেউ পুলিশ পরিচয়ে ফোন করে টাকা চাইলেই প্রথমে আতঙ্কিত না হয়ে যাচাই করুন। টাকা পাঠানোর আগে ঘটনাস্থল থানায় ফোন করে তথ্য মিলিয়ে নিন। কল রেকর্ড করুন, নম্বর স্ক্রিনশট রাখুন। এমন প্রতারণা সংক্রান্ত তথ্য থাকলে র‌্যাবকে জানান। - র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার ইন্তেখাব চৌধুরী

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কী বলছেন?
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, মূলত কেউ অপহরণ হলে ঢাকা মহানগর পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে অপহরণকারী চক্রকে আইনের আওতায় আনে। এসব ঘটনায় পুলিশকে আগে থেকে জানালে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। পুলিশ পরিচয়ে কিংবা অন্য কোনো পরিচয়ে প্রতারণা করলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কিংবা নিকটস্থ পুলিশকে জানালে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতারকরা বিভিন্ন কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। যারা পুলিশ পরিচয়ে কাউকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে টাকা দাবি করে তারা আসলে প্রতারক। এসব প্রতারককে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তৎপর। তবে এক্ষেত্রে জনসাধারণকে আরও সচেতন হতে হবে। কেউ পুলিশ পরিচয় দিলেই তাড়াহুড়ো না করে মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি বুঝতে হবে। এরপর দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, হঠাৎ কেউ পুলিশ পরিচয়ে ফোন করে টাকা চাইলেই প্রথমে আতঙ্কিত না হয়ে যাচাই করুন। টাকা পাঠানোর আগে ঘটনাস্থল থানায় ফোন করে তথ্য মিলিয়ে নিন। কল রেকর্ড করুন, নম্বর স্ক্রিনশট রাখুন। এমন প্রতারণা সংক্রান্ত তথ্য থাকলে র‌্যাবকে জানান।

প্রতারকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হয় উল্লেখ করে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, দেশে র‌্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়নে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিতে পারে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব সদর দপ্তরের সাইবার ইউনিটের সহায়তায় প্রতারকদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে