বুধবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:৪৭:৫৯

ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে এত টাকা আছে জানতেনই না গ্রাহক!

ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে এত টাকা আছে জানতেনই না গ্রাহক!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : আব্দুল কাদের বেগ। ২০০৬ সালের দিকে যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন। সে সময় যশোর সোনালী ব্যাংকের কর্পোরেট শাখায় নিজ নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। 

সেখানে লেনদেনের একপর্যায়ে বদলি সূত্রে চলে যান অন্য জেলায়। পরে লেনদেন না করায় সেটি অচল অ্যাকাউন্টের তালিকায় চলে যায়। তবে অ্যাকাউন্টে ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। সেটি জানতেন না অ্যাকাউন্ট হোল্ডার আব্দুল কাদের বেগ। সম্প্রতি সেই টাকা তাকে ফেরত দিয়েছেন যশোর সোনালী ব্যাংক পিএলসি কর্পোরেট শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মনিরুজ্জামান।

শুধু কাদের বেগকেই নয় এমন ১৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মালিককে তাদের দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকা মোটা অঙ্কের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে একটি অ্যাকাউন্টে সর্বোচ্চ টাকা ছিল ৭ লাখ ৭৭ হাজার। সর্বনিম্ন একটিতে টাকা ছিল ৬০ হাজার ১৪১ টাকা। ব্যাংকটির এমন কর্মকাণ্ডে সাধারণ গ্রাহকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

আব্দুল কাদের বেগ জানান, সে সময় সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে আমাদের বেতন হতো। পরে পুলিশ কমিউনিটি ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন হওয়ায় সোনালী ব্যাংকের আর লেনদেন হয়নি। এক সময় আমার স্ত্রী মারা যায়, আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে সেই অ্যাকাউন্টের চেকবইসহ সকল কাগজপত্র হারিয়ে ফেলি।

তিনি বলেন, এই অ্যাকাউন্টে টাকা আছে আমি জানতাম না। কিছুদিন আগে যশোর সোনালী ব্যাংক থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমি সেখানে গিয়ে আমার টাকা বুঝে পেয়েছি। দীর্ঘদিন পরে এমন টাকা পেয়ে ব্যাংকের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেন তিনি।

তিন লাখ ৫৬ হাজার টাকা পাওয়া চিকিৎসক দেবালা মল্লিক জানান, ১৯৮১-৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি যশোর সদর হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। সে সময় সোনালী ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট ওপেন করেন। লেনদেনের একপর্যায়ে ধীরে ধীরে তিনি সেই অ্যাকাউন্টের কথা ভুলে যান।

যশোর সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাকে খুঁজে বের করতে অনেক কষ্ট করেছেন তিনি। সবাই এই কাজটি করে না। ওপরওয়ালা তাকে আরও বড় পর্যায়ে নিয়ে যাক।

আরেক সুবিধাভোগী জিএম নাসিরুজ্জামান। তার ছেলে নাইম হাসান শুভ বলেন, এটি ১৯৯২ সালের ঘটনা। আব্বু তখন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা। সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা আছে সেটি তার মনে ছিল না। আমরা ভেবেছি, দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় অ্যাকাউন্টটি ক্লোজ হয়ে গেছে। তবে ব্যাংক থেকে কল পেয়ে ব্যাংকে গিয়ে আমরা ৮৩ হাজার ৫৪৯ টাকা পেয়েছি। এদিকে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৯৫ টাকা পাওয়া গ্রাহক রবিউল আলম জানান, তিনি তার অ্যাকাউন্টে টাকা রেখেই পুনরায় চালু করতে চান।

সোনালী ব্যাংকের এক সাধারণ গ্রাহক প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, আমরা ব্যাংকে যে টাকা রাখি সেটি তাদের কাছে আমানত। দীর্ঘদিন পর তা ফেরত দিয়ে এক কথায় আমানত রক্ষা করেছে যশোর সোনালী ব্যাংক। এ কাজটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।

যশোর সোনালী ব্যাংক পিএলসি কর্পোরেট শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ১০ বছরের অধিক সময় ধরে ইন-অ্যাকটিভ গ্রাহকদের ক্লোজ করে অ্যাকাউন্টে থাকা ব্যালান্স বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে প্রদান করতে হবে। এটি আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। আমরা যশোর সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখায় এ রকম মোট ২ হাজার ৫০০ অ্যাকাউন্ট ট্রেস করি। এর মধ্যে ২ হাজার ৪০০ অ্যাকাউন্টে সামান্য পরিমাণে ব্যালান্স ছিল। বাকি ১০০টি অ্যাকাউন্টের মধ্যে ১৮টিতে মোটা অঙ্কের টাকা দেখতে পাই।

তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংক পিএলসি জেনারেল ম্যানেজারস অফিসের জেনারেল ম্যানেজার ইকবাল কবীর স্যারের নির্দেশনায় আমরা এই ১৮টি অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে খুঁজে বের করে টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন আগের অ্যাকাউন্ট হওয়ায় এবং সে সময় এনআইডি কার্ড না থাকায় তাদেরকে খুঁজে বের করা সহজ ব্যাপার ছিল না। অনেকটা দায়বদ্ধতা থেকেই যশোর ত্যাগ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাওয়া এ সব গ্রাহকদের খুঁজে বের করে টাকা ফেরত দিয়েছি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে