এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : কালো বোরকা পরে মুখ ঢাকা অবস্থায় গুটি গুটি পায়ে করিডোর ধরে এগিয়ে আসে তারা। হাতে ছিল তালা ভাঙার বিভিন্ন সরঞ্জাম, পায়ে জুতা নেই। শম্পা জুয়েলার্সের সামনে গিয়ে কলাপসিবল গেট দেখিয়ে নিজেদের মধ্যে কিছু আলোচনা করে তারা।
সিসি ক্যামেরার সময় অনুযায়ী, তখন সময় রাত ৩টা ৭ মিনিট। ৯ অক্টোবর ২০২৫। মার্কেটের করিডোরে জ্বলছে আলো। সব দোকান বন্ধ। রাজধানীর মালিবাগের ফরচুন শপিংমলের দ্বিতীয় তলায় শম্পা জুয়েলার্সের একপাশের কোনায় জায়গাটিতে এসে বোরকা পরা দুজনের সামনের জন থেমে যান। উঁকি দিয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখেন, কেউ আছে কি না।
বোরকা পরা অন্যজনও পরে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখেন। তারা শম্পা জুয়েলার্সের কলাপসিবল গেটের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেন। আশপাশে ঘোরেন। একপর্যায়ে তারা করিডোরের যেদিকে আলো কিছুটা কম, সেদিকে গিয়ে শম্পা জুয়েলার্সের কলাপসিবল গেটের তালা ভাঙার কাজে লেগে পড়েন। মাঝে একজন সেখানে থাকা সিসি ক্যামেরা ভাঙার চেষ্টা করেন।
পুলিশের ধারণা, শপিংমলের পেছনের তৃতীয় তলায় বাথরুমের জানালার গ্রিল কেটে চোর শপিংমলে ঢোকে। পরে তারা দ্বিতীয় তলার শম্পা জুয়েলার্সের ফটক ভাঙে। দোকানের ভেতরে ঢুকে শোকেসে রাখা স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে যায়।
জুয়েলার্সের মালিক অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাস বলেন, গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে তিনি ও তার কর্মচারীরা দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যান। আজ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মীর কাছ থেকে খবর পেয়ে দোকানে যান। গিয়ে দেখেন, তার সবকিছু শেষ। দোকানের তালা ভাঙা। দোকানে থাকা ৪০০ ভরি নিজস্ব স্বর্ণালংকার এবং ১০০ ভরি বন্ধকি সোনা নেই।
এছাড়া দোকানের ক্যাশে থাকা নগদ ৪০ হাজার টাকাও নেই। সব চুরি হয়ে গেছে। ঘটনার সঙ্গে মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মীরা জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করছেন অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাস।
বর্তমানে দেশের বাজারে প্রতি ভরি সোনার দাম দুই লাখ টাকার বেশি। সে হিসাবে অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাসের দোকানের ৪০০ ভরি নিজস্ব সোনার দাম ৮ কোটি টাকার বেশি বলে জানান তিনি। এছাড়া ১০০ ভরি বন্ধকি সোনা চুরি হওয়ার আর্থিক ক্ষতি তো আছেই।
পুলিশ বলছে, চুরি হওয়া সোনার পরিমাণ নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। তবে তারা শপিংমলের সব কটি সিসি ক্যামেরা দেখে চোর শনাক্তের চেষ্টা করছে।
পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম বলেন, শপিংমলের সামনে নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্বরত ছিলেন। বুধবার রাতে মার্কেট বন্ধ করে দোকান মালিক-কর্মচারীরা বাসায় চলে যান। এরপরই চোর শপিংমলের পেছনের জানালার গ্রিল কেটে ভেতরে ঢোকে।
জানতে চাইলে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক বলেন, সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, শপিংমলের পেছনের তৃতীয় তলার জানালার গ্রিল কাটে। ধারণা করা হচ্ছে, ওখান দিয়েই চোর শপিংমলের ভেতরে ঢোকে। পরে তারা দ্বিতীয় তলার শম্পা জুয়েলার্সের ফটক ভাঙে। দোকানের ভেতরে ঢুকে শোকেসে রাখা স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে যায় তারা। শপিংমলের সব সিসি ক্যামেরা দেখে চোর শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
গত ৫ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর একটি জুয়েলারি দোকান থেকে ১২৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় ৭ অক্টোবর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়।