এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করে একটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রস্তাবনায় নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এ জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দেবে সরকার।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হলে ব্যাংক কর্মীদের চাকরি নিয়ে কী হবে? এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা।
যে পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে নতুন ব্যাংক গঠিত হবে সেগুলো হলো : ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, দুর্বল পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একত্র করে একটি ব্যাংকে রূপান্তরের অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এ জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দেবে সরকার।
এসব ব্যাংকে কর্মরত কর্মীদের চাকরি নিয়ে তিনি জানান, একীভূত হওয়া কোনো ব্যাংকের কর্মীদের চাকরিচ্যুত করা হবে না।
একই সঙ্গে কোনো গ্রাহক তার আমানত হারাবে না বলেও জানান তিনি।
ব্যাংক সূত্রেও জানা গেছে, ব্যাংকটি প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন থাকবে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থাকবে এর মালিকানায়। পরে সঠিক সময়ে ব্যাংকটি বেসরকারি মালিকানায় হস্তান্তর করা হবে। এ ছাড়া একীভূত হওয়া কোনো ব্যাংকের কর্মীদের চাকরিচ্যুত করা হবে না এবং কোনো গ্রাহক তাঁর আমানত হারাবেন না।
উপদেষ্টা পরিষদে ব্যাংক ও বীমা খাতে আমানত সুরক্ষা আইনকে যুগোপযোগী করে সংশোধনেরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রেসসচিব শফিকুল আলম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকের ৪০ হাজার কোটি টাকার ‘অনুমোদিত মূলধনের’ বিপরীতে ‘পরিশোধিত মূলধন’ হিসেবে আনুমানিক ৩৫ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকটির মূলধন বিষয়ে প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, বেইল ইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার আমানত মূলধনে রূপান্তর করা যেতে পারে এবং অবশিষ্ট ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার মূলধন হিসেবে প্রদান করতে পারে।
যেভাবে টাকা ফেরত পাবেন আমানতকারীরা
একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীদের মধ্যে ২ লাখ টাকার কম যাদের আমানত, তারা আগে টাকা ফেরত পাবেন। ব্যাংকগুলোতে প্রশাসক নিয়োগের পর সরকারি তহবিল জোগান দেওয়া হলেই এসব আমানতকারীর টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
২ লাখ টাকা বা তার কম আমানত যাদের, তারা একবারে পুরো টাকা তোলার সুযোগ পাবেন। বাকি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে ধাপে ধাপে।
৫ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির শেয়ার অভিহিত মূল্য ১০ টাকা ও বাজার মূল্য মাত্র ১.৬০ টাকা। এনএভি-১১৭.৭২ টাকা, শেয়ার বাজার মূল্য এবং ন্যূনতম মূল্য ক্রমাগত কমে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার অভিহিত মূল্য ১০ টাকা, বাজার মূল্য ১.৭০ টাকা এবং নিট অ্যাসেট ভ্যালু-২২৪.৯৭ টাকা। ব্যাংকটি ঋণের শ্রেণিকরণ এবং মূলধন ঘাটতির কারণে সংকটের মুখোমুখি।
এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার অভিহিত মূল্য ১০ টাকা, বাজার মূল্য ৩.৪০ টাকা এবং এনএভি-৭৫.৭৪ টাকা। যদিও এর শেয়ার বাজার মূল্য কিছুটা বেশি, তবে ব্যাংকটি মূলধন ঘাটতি এবং মন্দ ঋণের পরিমাণ বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এটি ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, যা ব্যাংকটির ভবিষ্যতের জন্য বড় একটি সংকেত।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার অভিহিত মূল্য ১০ টাকা, বাজার মূল্য ৩.৭০ টাকা এবং এনএভি-২১৩.৫১ টাকা।