শনিবার, ০৫ মার্চ, ২০১৬, ০২:৫০:২৫

দলের বিদ্রোহীদের নিয়ে মাথাব্যথা আওয়ামী লীগের

দলের বিদ্রোহীদের নিয়ে মাথাব্যথা আওয়ামী লীগের

রফিকুল ইসলাম রনি : প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না থাকলেও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলের বিদ্রোহীরা।

গত পৌরসভা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী ও তার মদদদাতাদের কঠোর শাস্তি না দেওয়ায় ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা। তৃণমূলের সুপারিশ গ্রহণ না করে, প্রভাবশালীদের বিশেষ তদবিরে চূড়ান্ত প্রার্থী করায় বিদ্রোহীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অনড়।

সূত্রমতে, স্থানীয়ভাবে ও কেন্দ্রীয়ভাবে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও আমলে নিচ্ছেন না অধিকাংশ বিদ্রোহীই। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছয় শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকছেন। কোনো কোনো জায়গায় বিএনপির প্রার্থী না থাকা এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীর চেয়ে ব্যক্তি ইমেজ ভালো থাকায় বিদ্রোহীরাই সুবিধায় রয়েছেন। ফলে নির্বাচনের মূল লড়াই হতে চলেছে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ।

তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে বিদ্রোহীরা শেষতক বসে যাবেন। যদি না বসেন, তাহলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয় থেকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিদ্রোহীদের তালিকা পাঠাতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সূত্র জানায়, দুই শতাধিক বিদ্রোহীর তালিকা গতকাল পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়ে জমা পড়েছে।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও দলের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিদ্রোহীদের ঠাঁই আওয়ামী লীগে হবে না। দলের শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে বিদ্রোহীদের সাংগঠনিক সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হবে।

দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিদ্রোহীদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তালিকা হাতে পেলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তিনি আশা করেন বিদ্রোহীরা দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে বসে পড়বেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কাইতলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ খালেদ আশিষ জানান, তিনি দীর্ঘদিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা তার পক্ষে মত দিয়েছেন। কিন্তু তদবির করতে পারেননি বলে মনোনয়ন পাননি।

ময়মনসিংহের ফুলপুরের ৮ নম্বর রূপসী ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান আমির উদ্দিন তালুকদার দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকছেন। ৯ নম্বর বালিয়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মোতালেব দেওয়ানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বলে জানান। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের ব্রাহ্মগাছা ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ নাজির। তিনি বলেন, আমি নির্বাচনে লড়ছি, ব্যক্তির বিরুদ্ধে, দলের বিরুদ্ধে নয়।

উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত আবদুস সালাম। বিদ্রোহী সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির খান। দুজনের কর্মী বাহিনী ও জনগণের মধ্যে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সেখানেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীর মধ্যে। ধুবিলে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম ভোলা। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল করিম মহরী। ধামাইনগর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ইসহাক হোসেনের ছেলে রাইসুল ইসলাম সুমন। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম রহমান।

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কালারুক ইউনিয়নে মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতা আফতাব উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, যিনি কিছু দিন আগে বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন, হঠাৎ আওয়ামী লীগের একাংশের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলে যোগ দিয়ে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে।

সিলেটের গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১৩ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৬ জন, গোপালগঞ্জ জেলার সদর ও কোটালিপাড়া উপজেলার ৩২ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৬৭ জন।

চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ ও মিরসরাই উপজেলার ৩০ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৫ জন, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ১১ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৮ জন, কুমিল্লার দুটি উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ২ জন, মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার ১৭ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৬ জন, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর ও দৌলতপুর উপজেলার ২০ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ২৭ জন।

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার ৭ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৪ জন, ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার ৩ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৪ জন, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার ১৯ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১৩ জন, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৩ জন।

হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ৫ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৮ জন, ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১৫ জন, নেত্রকোনার মদন ও আটপাড়া উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১৪ জন।

জামালপুর সদর মেলান্দহ উপজেলার ২৬ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৫ জন, শেরপুর সদর, নকলা ও শ্রীবরদী উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১৮ জন। সব মিলে দুই ধাপে ছয় শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকছেন। -বিডি প্রতিদিন
৫ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে