এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাজধানীর পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসাইনের হত্যার পরিকল্পনায় নাম উঠে এসেছে তারই ছাত্রী ও প্রেমিকা বারজিস সাবনাম বর্ষা। আর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন তার প্রথম প্রেমিক মাহীর রহমান।
পুলিশ বলছে, ঘাতক মাহীরের ছুরিকাঘাতে আহত জোবায়েদ তার ছাত্রী ও প্রেমিকা বর্ষার কাছে শেষ মুহূর্তে বাঁচার আকুতি জানিয়ে সিঁড়িতে যখন ছটফট করছিলেন, ওই সময় জোবায়েদের উদ্দেশ্যে বর্ষা বলেন, ‘তুমি না সরলে আমি মাহীরের হতে পারব না’। এর কিছু সময় পরেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এসএন নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়েদ পুরান ঢাকার বংশাল থানার নুরবক্স লেনের একটি বাসায় ছাত্রীকে পড়াতে গিয়ে হত্যার শিকার হন। নিহত জোবায়েদ বর্ষাকে পড়াতে গিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমিকা বর্ষা একই সময়ে মাহীর ও তার জোবায়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিল। ত্রিভুজ প্রেম থেকে বের হতে নিজেই হত্যার পরিকল্পনা সাজান বর্ষা। এই ঘটনায় ছাত্রী বর্ষা, তার প্রথম প্রেমিক মো. মাহীর ও তার বন্ধু ফারদিন আহমেদ আইলানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম আরও বলেন, বর্ষা একই সময়ে তার গৃহশিক্ষক জোবায়েদ ও মাহীরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর বর্ষার প্রথম প্রেমিক মাহীর বিষয়টি নিয়ে বর্ষাকে চাপ দিলে সেদিনই গৃহশিক্ষক জোবায়েদকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা।
পরবর্তীতে মাহীর ও তার বন্ধু আইলান মিলে চাকু কিনে গত ১৯ অক্টোবর বর্ষার বাসায় অবস্থান নেন। আর বর্ষা তার শিক্ষক ও প্রেমিক জোবায়েদকে ডেকে আনেন। এরপরই বর্ষার বাসার সিঁড়িতে জোবায়েদকে বলা হয় বর্ষার থেকে সরে আসতে। এ নিয়ে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে জোবায়েদকে ছুরি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে পালিয়ে যান তারা।
এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আমরা তদন্তে পেয়েছি মাহীর একই বাসায় ভাড়া থাকতেন। মাহীর ও বর্ষার দীর্ঘদিনের পরিচয়। তবে তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে দেড় বছর আগে। নিহত জোবায়েদ এক বছর ধরে বর্ষাকে পড়াতেন। মেয়েটা জোবায়েদের প্রতি দুর্বল হয়ে যায়।
মেয়েটার অবস্থা ছিল এমন যে সে যখন যার কাছে যেত তার কথা বলতো। এমন অবস্থায় মাহীরকে তার প্রেমিকা বর্ষা বলেছে- জোবায়েদকে না সরাতে পারলে আমি তোমার হতে পারব না। এভাবেই তারা জোবায়েদকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। মাহীরের এক আঘাতেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান জোবায়েদ।
মাহীরকে তার মা থানায় হস্তান্তরের বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, আসলে আসামি গ্রেফতারে পুলিশের নানা ধরনের কৌশল থাকে। আগে চট্টগ্রামের রাউজানে নিয়মিত শিক্ষার্থী অপহরণ করতো, মুক্তিপণ আদায় করতো। আমরা তখন অপহরণকারীদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসে তাদের ব্যবহার করে সমঝোতার চেষ্টা করতাম। ঠিক এভাবেই আমরা মাহীরকে থানায় দিয়ে যেতে চাপ প্রয়োগ করেছি। এটা আমাদের কৌশলের অংশ। স্বেচ্ছায় থানায় হস্তান্তর করা হয়নি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হত্যার বিষয়টি পুরো পরিকল্পনা বর্ষার। বরগুনার মিন্নির ঘটনার সঙ্গে অনেকাংশ মিল রয়েছে। মেয়েটা দুজনের কারো কাছ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। ফলে সে নিজেই হত্যার পরিকল্পনা সাজায়।
হত্যার পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক কোনো বিষয় ছিল কিনা- জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, মাহীর ও বর্ষা ২৬ সেপ্টেম্বর হত্যার পরিকল্পনা করে। এখানে রাজনৈতিক কোনো বিষয় নেই। এটা ত্রিভুজ প্রেমের ঘটনা।
হত্যার মুহূর্তে জোবায়েদের প্রেমিকা বর্ষার শেষ কথার বিষয়ে লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী বলেন, বর্ষা আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে জোবায়েদ মারা যাওয়ার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন।
তদন্তে জানা গেছে, জোবায়েদের শেষ কথা ছিল বর্ষাকে উদ্দেশ্য করে ‘আমাকে বাঁচাও’। বর্ষা তখন জোবায়েদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তুমি না সরলে আমি মাহীরের হব না’। তদন্তে প্রকাশ পায় যে, দোতলার সিঁড়িতে জোবায়েদকে ছুড়িকাঘাত করা হয়। এ সময় তিনি বাঁচার চেষ্টা করছিলেন। বর্ষাদের বাসা পাঁচতলায় হলেও ঘটনার সময় তিনি তিনতলার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে নিচের হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেন।
জুবায়েদ দোতলার কলিংবেল বাজিয়ে দরজায় ধাক্কা দেন এবং দরজা থেকে রক্ত নিচে গড়িয়ে পড়ছিল।
প্রসঙ্গত, জোবায়েদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষা বর্ষের ছাত্র ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনায় কৃষ্ণপুর গ্রামে। সোমবার জোবায়েদকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।