শনিবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৫, ০৯:৪৪:৪৮

‘স্যার, আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন? আমাকে তো গ্রেপ্তার করার কথা না’

‘স্যার, আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন? আমাকে তো গ্রেপ্তার করার কথা না’

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ‘স্যার, আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন? আমাকে তো গ্রেপ্তার করার কথা না।’—গ্রেপ্তারের সময় এভাবেই র‍্যাবকে প্রশ্ন করেন ফরিদপুরের আলোচিত ‘ডন শরীফ’ খ্যাত শরীফুল ইসলাম (৩৮)।

র‍্যাব জানায়, অপরাধ জগতে তার দক্ষতা এতটাই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করবে—এটা কখনোই তিনি ভাবেননি। ফলে গ্রেপ্তারের সময় নিজেই অবাক হয়ে যান। এক পর্যায়ে বলেন, ‘আমার ছোট ভুল হয়েছে, আরওয়ানফাইভ মোটরসাইকেল থাকলে আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারতেন না, আপনাদের ওপর দিয়ে চালিয়ে চলে যেতাম।’

শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর র‍্যাব ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে শরীফুলকে গ্রেপ্তারের বিস্তারিত বর্ণনা দেন র‍্যাব-১০-এর অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

এর আগে, শুক্রবার সন্ধ্যায় ফরিদপুরের সালথা উপজেলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। শরীফুল শহরের কবিরপুর এলাকার মৃত ফারুক শেখের ছেলে।

এ ছাড়া, রায়হান মোল্যা (২৫) নামে তার এক সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় দেড় কেজি গাঁজা, ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি খেলনা পিস্তল (র‍্যাবের ভাষ্য), সুইচ গিয়ার, ক্ষুর, কাঁচি ও একটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত আরওয়ানফাইভ ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলটিও উদ্ধার করা হয়েছে। র‍্যাব জানায়, এটি সম্প্রতি পাবনা জেলা থেকে ক্রয়ের নামে ট্রায়ালের সময় পালিয়ে নিয়ে আসেন শরীফুল।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, গত ২১ অক্টোবর শহরের উত্তর শোভারামপুর এলাকায় এক গৃহবধূর কানের দুল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ ব্যাপক আলোচিত হয়। ওই ঘটনার পর কোতোয়ালি থানায় মামলা হয় এবং র‍্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে।

র‍্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, ছোটবেলা থেকেই শরীফুল অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ২০০৮ সালে একটি মাদক মামলার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পুলিশের খাতায় নাম আসে তার। এরপর থেকেই অপরাধ সাম্রাজ্যে জড়িয়ে পড়ে তিনি। মাদক ব্যবসা, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই ও চুরির মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন। এসব ঘটনায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় আটটি মামলাসহ মোট ১০টি মামলা রয়েছে তার নামে। এ ছাড়া, এখন পর্যন্ত চারবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি।

র‍্যাবের দেওয়া তথ্য ও তৎকালীন ঘটনাবলির সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলী এলাকায় ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ নার্স অরুণিমা ভৌমিক।

সেদিন ভোরে ডিউটি শেষে রিকশায় করে বাসায় ফিরছিলেন অরুণিমা। পথে শরীফুলসহ দুইজন ছিনতাইকারী তার হাতে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এতে তিনি রিকশা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন এবং পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ঘটনাটি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে এবং ব্যাপক আলোচিত হয়। এ ঘটনায় মামলা হলে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি শরীফুলসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

র‍্যাব জানায়, অরুণিমা হত্যা মামলায় দুই বছরের মধ্যেই জামিনে বের হয়ে আসেন শরীফুল। সর্বশেষ ২০২৩ সালেও আরেক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এরপর গত দুই বছর বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে পুনরায় জড়িয়ে পড়েন তিনি।

র‍্যাব আরও জানায়, গৃহবধূর কানের দুল ছিনতাই করতে ছিনতাইকারীরা যে পিস্তল ব্যবহার করেছিল সেটি ছিল খেলনা পিস্তল। ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি পাবনা থেকে ছিনতাই করে আনা হয়েছিল।

ঘটনার দিন গৃহবধূর স্বামী জানান, তার স্ত্রীর যে কানের দুল ছিনতাই করা হয়, সেটি সোনার নয়—ছিল ইমিটেশনের।

র‍্যাব কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়ে যায়। পরে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। পুলিশের অনুরোধে আসামি ধরতে মাঠে নামে র‍্যাব।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আব্দুল্লাহ বিশ্বাস বলেন, এ ঘটনায় ওই দুই ব্যক্তিকে আসামি করে শনিবার র‍্যাব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। বিকেলে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে