এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : গত বছরের বাজারে নভেম্বরে আলুর দাম ছিল চড়া। সেই আশায় রংপুরের নবদিগঞ্জের কৃষক খায়রুল ইসলাম এ বছর ১০ লাখ ৯২ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেন।
কেবল খায়রুল ইসলাম নয়, দেশের হাজারো কৃষক এ বছর আলু চাষে বেশি বিনিয়োগ করেছেন। ফলে আলুর রেকর্ড ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারে চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত সরবরাহ থাকায় প্রত্যাশিত দামের চেয়ে কমে আলু বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে দেশে ১ কোটি ১৫ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে, যেখানে বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন।
অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে খায়রুলের মতো কৃষকদের এখন ক্ষতির অঙ্ক কষতে হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের পাইকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'বর্তমান আলুর দাম খুবই কম। এই দামে কৃষকের উৎপাদন খরচ উঠবে না।'
গতকাল পাইকারি বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৯ থেকে ১২ টাকা দরে, যা গত দুই সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কম। তিনি বলেন, 'বাজার দরের এই পরিস্থিতি কৃষকদের পরবর্তী মৌসুমে আলু চাষে নিরুৎসাহিত করবে।'
লালমনিরহাটের লোকমান হোসেন জানান, তিনি বৃহৎ পরিসরে আলু চাষ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
লোকমান হোসেন এ বছর তিন একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। তার উৎপাদন খরচ ছিল প্রতি কেজিতে ১৮ টাকা এবং বিক্রির আশা করেছিলেন ২৫ টাকা দরে।
কিন্তু ফসল তোলার সময় তাকে অর্ধেক আলু ১৫ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। বাকি অর্ধেক কোল্ড স্টোরেজে রাখেন, সেগুলো ভালো দামে বিক্রির আশা করছিলেন।
'কিন্তু এখন কোল্ড স্টোরেজের আলুও ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই আমার উৎপাদন খরচই উঠছে না। আলু চাষ করে আমি এখন হতাশ,' লোকমান বলেন।
বিশেষজ্ঞরা আলু চাষিদের বর্তমান সংকটের জন্য সরকারকেই দায়ী করছেন। তাদের মতে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) কৃষকদের অতিরিক্ত চাষের বিষয়ে আগেভাগে সতর্ক করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এছাড়া সরকারের ঘোষিত কোল্ড স্টোরেজের ন্যূনতম দর (প্রতি কেজি ২২ টাকা) এবং ৫০ হাজার টন আলু কেনার পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হয়নি।