এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : চট্টগ্রামে লাগামহীনভাবে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। অর্থাৎ দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি। খুচরা বাজারে ভালোমানের পেঁয়াজ ১২০-১২৫ টাকার কমে মিলছে না।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা বলছেন, সরবরাহ সংকট বা বিদেশ থেকে পেঁয়াজের আমদানি না থাকায় হু হু করে বাড়ছে দাম। পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দাম বেড়েছে মাছেরও। তবে কিছুটা স্বস্তিতে সবজির বাজার। বাজারে শীতকালীন সবজি আসায় দাম কিছুটা কমেছে।
চট্টগ্রামে বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে দিন দিন অস্থির হয়ে পড়ছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। কোনো পণ্যের দাম কমার লক্ষণ নেই। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমে থাকলেও বাজারের কোথাও এ দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। এছাড়াও আটাসহ নানা পণ্যের দাম বেড়েছে। বাড়তি দামে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে। এ অবস্থায় বেকায়দায় নিম্ন আয়ের লোকজন।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়ছে। পাইকারি বাজারে ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১২ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল ৭৫-৮০ টাকা। এই মানের পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়। মাঝারি মানের দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০৫ থেকে ১০৮ টাকায়। আগে ছিল ৭০ টাকার কমে। এই মানের পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকায়। খুচরা বাজারে আগে ছিল ৮০ টাকার কমে। আরও নিম্নমানের পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। ১৫ দিন আগে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ টাকার কমে। এই মানের পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার বেশি দামে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের আড়ত থেকে খুচরা বাজার-সবখানেই ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের বাজার। অক্টোবর মাসজুড়ে খুচরা পর্যায়ে মানভেদে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল পেঁয়াজ। কিন্তু চলতি নভেম্বরের শুরু থেকেই মানভেদে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে এই মুহূর্তে আমদানি পেঁয়াজ নেই বললেই চলে।
অক্টোবর পর্যন্ত বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ থাকলেও এখন কমে গেছে। দেশি পেঁয়াজের মৌসুমও শেষ। এ কারণেই বেড়েছে দাম। নভেম্বর জুড়ে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে। কেননা ডিসেম্বরে বাজারে আগাম পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। বিভিন্ন সময়ে দেশের অন্তত ৩শ ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানি করলেও বর্তমানে অনুমতি না থাকায় তারা প্রস্তুতি নিয়েও আমদানি করতে পারছেন না।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস যুগান্তরকে জানান, এখনো দেশি পেঁয়াজ দিয়ে বাজার চলছে। বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজ নেই। দেশি পেঁয়াজই বিক্রি হচ্ছে। আমদানির অনুমতি মিললে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়বে। দামও কমবে। তবে নভেম্বরজুড়ে পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা খুব কম।
চট্টগ্রামে নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৯৫ টাকায় বিক্রি করার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ২০০ বা তারও বেশি দামে। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেলও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
১৩ অক্টোবর ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে ব্যবসায়ীরা ১০ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের মাত্র এক টাকা বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল। পরে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয় নতুন দাম। নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মূল্য ৬ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ থেকে বেড়ে ১৯৫ টাকা, খোলা সয়াবিনের দাম ৩ টাকা বাড়িয়ে ১৭৭ এবং পাম তেলের দাম ১৩ টাকা বাড়িয়ে ১৬৩ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৪৫ টাকা। এটা ১৪ অক্টোবর কার্যকর হয়। এখন ব্যবসায়ীরা এই নির্ধারিত দামও মানছেন না। বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন লিটারপ্রতি ২০০ থেকে ২০৩ টাকায়। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন ১৮০ টাকার বেশি দামে। ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন ৯৫৫ টাকার বেশি দামে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় আরও বেশি দামে বিক্রি করছেন।
দুই সপ্তাহ বাজারে খোলা আটার দাম বেড়ে খুচরায় প্রতি কেজি ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। প্যাকেট আটা এখনো আগের দরই রয়েছে। দাম বেড়ে দেশি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে, যা বাজারে দীর্ঘদিন ১৪০ টাকায় স্থির ছিল। বাজারে রসুনের দাম এখন কিছুটা কম। আমদানিকরা রসুন প্রতি কেজি ১৬০-১৮০ টাকা এবং দেশি রসুন ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট দেশি রসুন ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। সরু মসুর ডাল ১৩০ থেকে ১৭০, নেপালি মসুর ১৪০, ছোট মুগডাল ১৩০-১৪০, খেসারির ডাল ১০০, বুটের ডাল ১১০, মাষকলাই ডাল ১৮০, ডাবলি ৬০, ছোলা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার দর
চট্টগ্রামে কাঁচাবাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি আসতে শুরু করেছে। ফলে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। শিম, ফুলকপি-বাঁধাকপি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, মুলা ৫০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে। লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০-১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে প্রতিকেজি ভারতীয় টমেটো ১২০, দেশি টমেটো ১২০-১৪০ টাকা, দেশি গাজর ৮০, চায়না গাজর ১৫০-১৬০ টাকা, দেশি শসা ৫০ টাকা, করলা, কাঁকরোল, ঢেঁড়স, পটোল, ৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। চিচিঙ্গা ৬০, ধুন্দল ৮০, ঝিঙা ৮০, বরবটি ৬০, কচুর লতি ৬০, কচুরমুখী ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। বাজারে লইট্যা ১৮০- ২০০, কোরাল ৭০০-৯০০ টাকা, আইড় ৬০০-৭৫০, চিংড়ি প্রকারভেদে ৭৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া, খাল-নদী ও চাষের মাছের মধ্যে রুই ও কাতলা ৩৫০-৪৫০ টাকা, ছোট আকারের পাবদা ৪০০, মাঝারি সাইজের ৫০০ থেকে ৬০০, শিং ৪০০-৫০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৭০০, পুঁটি ২০০-২৫০, সরপুঁটি ৩০০-৪৫০, তেলাপিয়া বড় সাইজের ২৫০-৩০০, নাইলোটিকা ২২০-২৮০, কৈ ২০০-২২০ এবং পাঙাশ ও সিলভার কার্প ১৮০-২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।