এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : নেপাল থেকে আরও অন্তত ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি শীতকালে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় ওই সময়ে নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানির সম্ভাবনাও নতুন করে গুরুত্ব পেয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ–নেপাল যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির ৭ম সভা বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধিদল পারস্পরিক বিদ্যুৎ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে।
বাংলাদেশের পক্ষে সভায় নেতৃত্ব দেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ, আর নেপালের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সে দেশের বিদ্যুৎ, পানি সম্পদ ও সেচ সচিব চিরঞ্জীবী চাটৌট।
পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শামীম হাসান জানান, বৈঠকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা অংশে বিদ্যমান ‘এইচভিডিসি’ সিস্টেম ব্যবহার করে নেপাল থেকে আরও ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে ভারত হয়ে নেপালের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহের ক্ষেত্রে এইচভিডিসি ইন্টারকানেকশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এছাড়া বৈঠকে নেপালে বেসরকারি খাতে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের সম্ভাব্য বিনিয়োগ নিয়ে আলাপ হয়। নেপালের জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে দীর্ঘমেয়াদে শক্তি নিরাপত্তা জোরদার করার ওপর জোর দেয় উভয় দেশ।
শীতকালে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা উৎপাদন সক্ষমতার নিচে নেমে যায়—এই প্রেক্ষাপটে সভায় বাংলাদেশ থেকে নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানির সম্ভাবনাও আলোচনা করা হয়েছে। এতে আঞ্চলিক জ্বালানি বাণিজ্যের সুযোগ আরও বাড়তে পারে বলেও মত দেন কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, গত বছরের নভেম্বর থেকে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। তবে এই বিদ্যুৎ সারা বছর পাওয়া যাবে না। গ্রীস্মে নেপালের উদ্বৃত্ত উৎপাদনের সময়ই কেবল এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করবে নেপাল। ভারতের উপর দিয়ে ওই বিদ্যুৎ আমদানির ফলে ভারতকে সঞ্চালন চার্জের পাশাপাশি ইউনিট প্রতি নির্দিষ্ট মুনাফাও দিতে হয় বাংলাদেশকে।
সভায় বাংলাদেশ ও নেপালের যৌথ বিনিয়োগে নেপালে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, আন্তঃসংযোগ গ্রিড লাইন ব্যবহার করে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পরিবহন ভারতের ভূখণ্ড অতিক্রম করবে বিধায় এ বিষয়টি বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করার বিষয়ে মত প্রকাশ করেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা।
বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি বিদ্যুতের বিশেষ আইন বাতিল করেছে। সে মোতাবেক ভারতের জিএমআর গ্রুপ কর্তৃক নেপালে বাস্তবায়িতব্য আপার কার্নালি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি সম্পর্কীয় এলওআই (লেটার অব ইনটেন্ট) বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিষয়টি এ বছরের ২৮ আগস্ট জিএমআরকে জানিয়েছে বলে তা উপস্থাপন করা হয় বৈঠকে।
সভায় বাংলাদেশ ও নেপালে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও দক্ষতা বিনিময়ে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। এ ছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া রূফটপ সোলার প্রোগ্রামের আওতায় প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের অভিজ্ঞতা বিষয়েও নেপালের প্রতিনিধি দলের সাথে আলোচনা করেন কর্মকর্তারা। অন্যদিকে জ্বালানি দক্ষতা ও জ্বালানি অডিট সংক্রান্ত কার্যক্রমে নেপাল সরকারকে সহযোগিতা প্রদানের বিষয়টি আলোচিত হয়।
জেএসসি সভায় বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের কার্যক্রম গ্রহণের বিষয়ে উভয় দেশ সম্মতি প্রকাশ করে। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিপিএমআই এর প্রশিক্ষণ সক্ষমতার বিবরণ তুলে ধরার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ এবং বাংলাদেশ-ভারত ও নেপালের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক সমঝোতার বিষয়েও আলোচনা করা হয়।
বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত বাংলাদেশ-নেপাল জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটি ও জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের ৬ষ্ঠ সভা গতবছর নেপালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কমিটির পরবর্তী ৮ম সভা আগামী অক্টোবর, ২০২৬-এ নেপালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।