শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:১৫:১২

ক্ষতিয়ে দেখা হবে, শোকজ-বদলির পর চাকরিও চলে যেতে পারে অনেক শিক্ষকের

ক্ষতিয়ে দেখা হবে, শোকজ-বদলির পর চাকরিও চলে যেতে পারে অনেক শিক্ষকের

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। এমনকি স্কুল তালা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। মন্ত্রণালয় সতর্ক করার পরও আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষকরা।

এসব শিক্ষকদের প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে ইতিমধ্যে শোকজ করা হয়েছে।

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন শিক্ষককে ভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের নেপথ্যে কারা ছিলেন বা কারা উসকানি দিয়েছেন বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে। 

গত বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষকদের কাজে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কাজে ফিরে না গেলে শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালা ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা জারির রাতে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের একটি অংশ। ওই দিন রাতে এক যৌথ ভার্চুয়াল মিটিং শেষে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ ও ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর পক্ষ থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

তবে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ৫ নেতাসহ ৪২ সহকারী শিক্ষককে অন্য জেলায় বদলি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আদেশে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষকদের প্রত্যেককে পাশের জেলায় বদলি করা হয়েছে। ফলে নিজের কর্মস্থলের জেলায় থাকতে পারবেন না এসব শিক্ষকরা।

এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায়, উপজেলায় পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের শোকজ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় আছে নোয়াখালী জেলা। জেলার ২৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে নোয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এসব প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষককে শোকজ নোটিশ দিয়েছে।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ২ ডিসেম্বর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা চলছে। একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পরীক্ষা নেননি। বরং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছেন এবং বিদ্যালয়ে তালা লাগানো হয়েছে, যা দায়িত্বহীন আচরণ।

নোটিশে আরো বলা হয়, এমন আচরণ সরকারি কর্মচারী আইন ২০১৮ এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে বিষয়ে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বদলি, শোকজের মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিবৃতি দিয়ে আন্দোলন স্থগিতের কথা জানান সহকারী শিক্ষকরা। আগামী ৭ ডিসেম্বর (রবিবার) থেকে পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষকদের তালিকা করা হচ্ছে। কোনো শিক্ষককে আন্দোলনে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছে কিনা বা কোথাও বার্ষিক পরীক্ষাগ্রহণে বাধা দেওয়া হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। কোনো শিক্ষক বা শিক্ষক নেতা যদি চাকরি আইন বা আচারণবিধি লঙ্ঘন করেন তবে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শাস্তির বিধান
সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলাভঙ্গ বা শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রমাণে সর্বনিম্ন শাস্তি তিরস্কার এবং সর্বোচ্চ চাকরি থেকে বরখাস্তের বিধান রয়েছে।

চাকরি আইনের দশম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীর আচরণ এবং শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বিধান অনুসরণক্রমে কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা রুজু ও পরিচালনা করতে পারবে।

এই আইনের শাস্তিতে বলা হয়েছে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, বিভাগীয় কার্যধারায় দোষী সাব্যস্ত কোনো কর্মচারীকে এতদসংক্রান্ত বিধির বিধান সাপেক্ষে, নিম্নবর্ণিত এক বা একাধিক লঘু বা গুরুদণ্ড আরোপ করতে পারবে, যথা—

লঘু দণ্ডসমূহ—তিরস্কার; নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিতকরণ; বেতন স্কেলের নিম্নধাপে অবনমিতকরণ; কোনো আইন বা সরকারি আদেশ অমান্যকরণ অথবা কর্তব্যে ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণে সরকারি অর্থ বা সম্পত্তির ক্ষতি সংঘটিত হইলে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায়।

গুরুদণ্ডসমূহ—নিম্ন পদ বা নিম্নতর বেতন স্কেলে অবনমিতকরণ; বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান; চাকরি হইতে অপসারণ; চাকরি হইতে বরখাস্ত।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে