শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:৩৭:৫৯

রেকর্ড দাম কমলো পাম অয়েলের!

রেকর্ড দাম কমলো পাম অয়েলের!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের মাসিক দাম পর্যালোচনা পদ্ধতি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে নতুন মূল্যসীমা না আসায়, খুচরা বিক্রেতারা এখনও সে সময়ের দাম মেনেই বিক্রি করছেন, যখন বিশ্ববাজারে দাম ছিল বেশি।

বিশ্ববাজারে পাম অয়েলের দাম রেকর্ড কমে এলেও সরকারের দেরিতে দাম সমন্বয়ের কারণে দেশের ভোক্তারা এখনও এর সুফল পাচ্ছেন না।

গত এক মাসে পাইকারি বাজারে এর দাম মণপ্রতি ৪৫০ টাকার বেশি কমলেও, খুচরা দাম প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার নতুন দাম ঘোষণা করতে দেরি করায় খুচরা বিক্রেতারা পুরোনো দাম মেনে চলতে বাধ্য হচ্ছেন।

গত ১২ আগস্ট সরকার ঢালা পাম অয়েলের খুচরা দাম লিটারপ্রতি ১৬৯ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে।

সে সময় আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত পাম অয়েলের (সিপিও) বুকিং মূল্য ছিল টনপ্রতি ১,০২৬ থেকে ১,০৪৫ ডলারের মধ্যে, যা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্থিতিশীল ছিল।

কিন্তু নভেম্বর নাগাদ এই বুকিং মূল্য টনপ্রতি ৯৫০–৯৮০ ডলারে নেমে আসে। অক্টোবরে গড় বুকিং মূল্যের তুলনায় ২৮ নভেম্বর দাম ৭৫ ডলার কম ছিল। ৮ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বরের মধ্যে কয়েক দফা কমায় দাম টনপ্রতি ৯৫৩ ডলারের নিচে নেমে যায়, যা সাম্প্রতিক বছরে অন্যতম সর্বনিম্ন।

আন্তর্জাতিক বাজারের এই বড় ব্যবধান এবং সরকারের সর্বশেষ খুচরা দাম নির্ধারণের সময়ের বাজারদরের মধ্যে অমিলের কারণেই পাইকারি দাম কমলেও এর প্রভাব ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছায়নি।

এক মাস আগে পাম অয়েল পাইকারিতে মণপ্রতি ৬,১০০ টাকায় বিক্রি হতো। নভেম্বর মাসে এটি কমে ৫,৭৭০ টাকায় দাঁড়ায়—যা সাম্প্রতিক সময়ে সর্বনিম্ন। তবুও সরকারি খুচরা মূল্য এখনও লিটারপ্রতি ১৫০ টাকাতেই আটকে আছে।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে খুচরা বাজারে পাম অয়েল ১৫২–১৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগস্টের পর থেকে দাম সমন্বয় না হওয়ায় সরকারি নির্দেশনার সঙ্গে বাস্তব খুচরা দামের অমিল রয়েছে।

শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের মাসিক দাম পর্যালোচনা পদ্ধতি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে নতুন মূল্যসীমা না আসায়, খুচরা বিক্রেতারা এখনও সে সময়ের দাম মেনেই বিক্রি করছেন, যখন বিশ্ববাজারে দাম ছিল বেশি।

মৌসুমি কারণও প্রভাব ফেলছে। শীত শুরু হলে পাম অয়েল জমতে থাকে, ফলে পাইকারি বাজারে এসও (সাপ্লাই অর্ডার) লেনদেনে ধীরগতি দেখা দেয়। আবার চীনসহ শীতপ্রধান দেশের চাহিদা কমে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে দাম আরও কমেছে, যা দেশের পাইকারি বাজারেও প্রভাব ফেলেছে।

মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বোর্ডের (এমপিওবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে সিপিও উৎপাদন ১১.০২% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০.৪৩ লাখ টনে। একই সময়ে সিপিও মজুত ১৬.৫৫% বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৪.৭৩ লাখ টনে। উৎপাদন ও মজুত উভয়ই বাড়ায় বৈশ্বিক সরবরাহচাপ আরও বেড়েছে, ফলে বুকিং মূল্য ৪,৫০০ রিঙ্গিত থেকে ৪,০০০ রিঙ্গিতে নেমে এসেছে।

দেশের সবচেয়ে বড় ভোজ্যতেল বাজার খাতুনগঞ্জের পাইকাররা বলছেন, এ সময়ে সাধারণত দেশে পাম অয়েলের চাহিদা কম থাকে, ফলে দামও কমে। তবে সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্য বেশি থাকায় পাইকারি দামের পতন ভোক্তা বাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে না।

তারা আরও বলেন, পাইকারি এসও (সাপ্লাই অর্ডার) দামের পতন হলেও নগদে কেনা পাম অয়েল সস্তা হয়নি। শীতে পাম অয়েল জমে যাওয়ায় লেনদেনও ধীর হয়েছে।

খাতুনগঞ্জের এক পাম অয়েল এসও ব্যবসায়ী মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, 'সয়াবিন তেলের বুকিং মূল্য গত কয়েক মাস ধরে স্থিতিশীল, কিন্তু পাম অয়েলের বুকিংমূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। কয়েক দিন আগেই বুকিং মূল্য সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছিল। যদিও এখন দাম কিছুটা বেড়েছে, তবুও বর্তমান হারে আমদানি করলে খুচরা বিক্রেতারা প্রতিযোগিতামূলক দামে বিক্রি করতে পারবে।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকারের এখনই দাম সমন্বয় করা উচিত এবং রমজানের আগে পর্যাপ্ত আমদানি ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।'

বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মাওলা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)- বলেন, 'ভোজ্যতেলের মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া কার্যত অকার্যকর হয়ে গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি মাসে দাম পর্যালোচনা করার কথা। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমদানিকারকরা কমাতে চান না, তবে দাম বাড়লে তারা বাড়ানোর চাপ দেন। অন্যদিকে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে।'

তিনি বলেন, 'ফলে সরকার যে দামই নির্ধারণ করুক, আমদানিকারকরা ঢালা পাম অয়েল, সুপার পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলের দাম নিজেদের আমদানি ব্যয়ের ভিত্তিতে ঠিক করে নেন।'

তিনি আরও বলেন, 'বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমার সময় তা সমন্বয় না করলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। দীর্ঘ বিলম্ব ও দুর্বল বাজার তদারকির কারণে সরকারি মূল্যসীমার সুফল ভোক্তারা খুব কমই পান।'

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে