সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:৪৮:৩৮

হাদিকে গুলি করা দুজন দেশ ছাড়েন কখন, কোন সীমান্ত দিয়ে?

হাদিকে গুলি করা দুজন দেশ ছাড়েন কখন, কোন সীমান্ত দিয়ে?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যদের চোখে যেন ধুলো দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাচেষ্টায় জড়িত প্রধান দুই সন্দেহভাজন। তাদের ধরতে অর্ধকোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা, সীমান্তে সতর্কতা আর পাসপোর্ট ব্লক করার খবরের মধ্যেই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ দুই আততায়ী ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ও আলমগীর হোসেনের দেশ ছাড়ার তথ্য মিলেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এ দুজনের পালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও পুলিশের পক্ষ থেকে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয়নি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) গভীর রাতে ময়মনসিংহের সীমান্তঘেঁষা উপজেলা হালুয়াঘাটের একটি দুর্গম সীমান্ত পথ পাড়ি দিয়ে ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে যায় ফয়সাল ও আলমগীর। তাদের সীমান্ত পারাপারে সহায়তায় জড়িত দুই মানব পাচারকারীকেও আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই আততায়ীর একজন রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করে। পরদিন পুলিশের পক্ষ থেকে গুলি ছোড়া ফয়সালের ছবি প্রকাশ করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ফয়সাল গুলি করে, আর মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিল আলমগীর। রোববার পুলিশ সেই মোটরসাইকেল উদ্ধারের কথা জানিয়েছে।

হাদি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী। সংকটাপন্ন অবস্থায় রোববার পর্যন্ত রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলেছে। তবে আজ সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার কথা রয়েছে মাথায় গুলি লাগা হাদিকে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে রোববার রাতে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেস উইং জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে গতকাল সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. জাফর ও ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি টেলিফোন কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হাদির ওপর হামলার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূল সন্দেহভাজন হিসেবে ফয়সাল ও আলমগীরকে শনাক্ত করে এবং প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের গতিবিধি অনুসরণ করতে থাকে। তবে সন্দেহভাজনরা তাদের ডিজিটাল ডিভাইসগুলো (মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য প্রযুক্তি সামগ্রী) সচল রাখলেও সেগুলো নিজেরা বহন করেনি। এসব ডিভাইস অন্য কোনোভাবে চালু রেখে বারবার সেগুলোর জায়গা পরিবর্তন করানো হচ্ছিল। পুলিশ যখন তাদের ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর অবস্থান ধরে ধরে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছিল, তখন তারা রাজধানী থেকে নিরাপদে বের হয়ে ময়মনসিংহ হয়ে হালুয়াঘাট পৌঁছায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে হাদিকে গুলি করার পরই তারা পল্টনের কালভার্ট রোড থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে নয়াপল্টন হয়ে শাহবাগ, বাংলামটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট হয়ে আগারগাঁও এলাকা দিয়ে মিরপুরে পৌঁছায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ময়মনসিংহ সীমান্তের স্থানীয় সূত্র বলছে, ফয়সাল ও আলমগীর সেখান থেকে প্রাইভেটকারে করে আশুলিয়া হয়ে গাজীপুর দিয়ে সড়কপথে ময়মনসিংহ যায়। ময়মনসিংহের ব্রিজের পাড় থেকে বাহন পরিবর্তন করে আরেকটি প্রাইভেটকার নিয়ে হালুয়াঘাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। প্রাইভেটকারটি হালুয়াঘাটের ধারাবাজারের একটি পেট্রোল পাম্পে গিয়ে থামে। সেখান থেকে তিনজন যুবক এসে তাদের দুজনকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে হালুয়াঘাটের ভুটিয়াপাড়ায় নিয়ে যায়। রাত আড়াইটা পর্যন্ত থেকে ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম গারো পাহাড় জেলার একটি পৌরসভা এলাকার তুরায় পৌঁছায়। গতকাল পর্যন্ত তারা সেখানেই ছিল বলে জানা গেছে।

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িতদের বিষয়ে তথ্য জানাতে রোববার সংবাদ সম্মেলনে আসেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তদের কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছে কি না—এমন কোনো তথ্য এখনো ইমিগ্রেশন ডাটাবেজে পাওয়া যায়নি। ফয়সাল করিম মাসুদের সর্বশেষ বিদেশ যাত্রার তথ্য অনুযায়ী, তিনি গত জুলাই মাসে থাইল্যান্ড থেকে দেশে প্রবেশ করেন। এরপর তার দেশত্যাগের কোনো রেকর্ড নেই।’

তবে পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, শেরপুরের নালিতাবাড়ী থেকে সীমান্ত পার করে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করানো চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এদের পাশাপাশি হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির মালিক আব্দুল হান্নানকে র‌্যাব-২-এর একটি দল গ্রেপ্তার করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের সবাইকে আমরা শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

পুলিশ জানায়, হালুয়াঘাটের সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার দুজন হলো সিবিয়ন দিও ও সঞ্চয় চিসিম। গত শনিবার ময়মনসিংহের সীমান্ত উপজেলা হালুয়াঘাট, ফুলপুর, ধোবাউড়া এবং হালুয়াঘাট লাগোয়া পশ্চিমে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় অভিযান চালায় ডিএমপির রমনা বিভাগের একটি দল। নালিতাবাড়ী উপজেলা থেকে সীমান্ত পারাপারে জড়িত অভিযোগে সিবিয়ন দিও ও সঞ্চয় চিসিমকে আটক করা হয়।

ওই অভিযানে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আটক দুজন ফয়সাল ও আলমগীরকে সীমান্ত পার করিয়ে দিয়েছে। আটকের পরে তাদের মাধ্যমেই পার হওয়া দুজনকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়; কিন্তু এতে ফল পাওয়া যায়নি।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে