এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : জুলাই বিপ্লবের অন্যতম অগ্রনায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির রক্তের কসম খেয়ে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ভারত যদি শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল এবং শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে না দেয়, তবে দেশে অবস্থিত ভারতীয় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলা হবে।
সোমবার বিকেলে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বানে আয়োজিত সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকারকে অবিলম্বে দেশে কর্মরত সব ভারতীয় নাগরিকের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করতে হবে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের ১৬ মাস পেরিয়ে গেলেও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। ভারতে নিরাপদ আশ্রয়ে বসে শেখ হাসিনা দেশব্যাপী সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের টার্গেট কিলিংয়ে জড়িত রয়েছে। অথচ এসব হুমকি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দক্ষতা, সক্ষমতা ও তৎপরতার ঘাটতি স্পষ্ট।
তিনি বলেন, শুধু রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ওপর নির্ভর করে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের এই সংগঠিত হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে সর্বস্তরে জননিরাপত্তার নিজস্ব কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
এ লক্ষ্যে তিনি আগামীকাল থেকে দেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার গণকমিটি’ গঠনের আহ্বান জানান। এসব কমিটির দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন—
এক. ফ্যাসিস্ট রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও তাদের সহযোগীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে ঝুঁকিপূর্ণদের আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। কোনোভাবেই আইন নিজের হাতে নেওয়া যাবে না এবং শারীরিক নির্যাতন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
দুই. স্থানীয় প্রশাসনের ওপর কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে, কারণ পতিত সরকারের বহু সহযোগী এখনো গোপনে সক্রিয় রয়েছে। কোনো সন্দেহভাজন অপরাধী যেন ছাড় না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
তিন. স্থানীয় আদালতগুলোর আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে যেন কোনো অপরাধীর জামিন বা মামলা দুর্বল করার চেষ্টা না করা হয়। একই সঙ্গে আদালতের সার্বিক কার্যক্রমের ওপরও নজরদারি রাখতে হবে।
মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশের আদালতে প্রমাণিত সবচেয়ে বড় অপরাধী, মহাসন্ত্রাসী ও দুর্ধর্ষ খুনি শেখ হাসিনাকে ভারত যেভাবে আশ্রয় দিয়েছে, তা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। তাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা না গেলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
তিনি অভিযোগ করেন, বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও নাগরিকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অপরাধ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ভারত প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছে এবং বর্তমানে তারা এই ঘাতককে আড়াল করছে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা না গেলে ভবিষ্যতে প্রতিটি নির্বাচিত সরকার ভারতীয় ব্ল্যাকমেইলের শিকার হবে। তাই ভারত সরকারকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে—আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিতে হবে।
তিনি আজ থেকেই সারা দেশে সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ শুরুর আহ্বান জানান এবং ঘোষণা দেন, ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
ভারতের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কার্যত অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কোনো দেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সহায়তা করলে তা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এ কারণে অবিলম্বে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে মাহমুদুর রহমান বলেন, যারা মনে করেন ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়া বা টিকে থাকা সম্ভব নয়, তাদের স্মরণ রাখা উচিত—ভারতের সঙ্গে তথাকথিত বন্ধুত্ব থাকলেও শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছে।