এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
হাদির মৃত্যুর খবরের পরপরই যশোর বিক্ষোভ মিছিল করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা— ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘যে ভারত খুনি পালে, সেই ভারত ভেঙে দাও’, ‘ভারতীয় আধিপত্য ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ছাত্রলীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব-জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘আপোষ না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’ এবং ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’— এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইএসটি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ওসামা, জিইবিটি বিভাগের শিক্ষার্থী জালিস মাহমুদ, পিইএসএস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাফি এবং আইপিই বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম মিনহাজ।
এ সময় ছাত্র নেতারা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ভারত পরিকল্পিতভাবে এ দেশের ওপর আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে শরিফ ওসমান হাদিকেও পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আগামী দিনে কেউ যদি বাংলাদেশকে ভারতের কলোনি বানাতে চায়, তবে বাংলাদেশের যুবসমাজ কখনো তা মেনে নেবে না। দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে বাংলাদেশিদের বাংলাদেশ— এখানে কোনো ভিনদেশি আধিপত্য চলবে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে জড়ো হয় বুদ্ধিজীবী চত্বরে। এরপর সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি সাহেব বাজারে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় তারা স্লোগান দেন ‘দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা-ঢাকা।’ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আলুপট্টি ও সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
সমাবেশে রাবি শাখা ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘ওসমান হাদির হত্যাকারীদের ধরতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। ভারতে পালিয়ে থাকা অপরাধীদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে দিয়ে বিচারের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক ও ব্যবসায়ীক চুক্তি বাতিল করতে হবে।’
রাকসুর সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘এক হাদি শহীদ হয়েছে, লক্ষ হাদি রাজপথে নেমে এসেছে। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অফিস ঘেরাও করা হবে।’
এর আগে, হাদির মৃত্যুর খবরে সাহেব বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এনসিপির জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাকর্মীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরাও।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত সোয়া এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বড়তলা মোড়ে জড়ো হন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বিভিন্ন হল সংলগ্ন রাস্তা ঘুরে শহীদ মিনারে সমাবেশ করেন তারা। এসময় জাকসুর ভিপি আব্দুর রশিদ জিতুর নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা শপথ বাক্য পাঠ করেন।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই শহীদ কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’; ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’; ‘আমরা সবাই হাদি হবো, গুলির মুখে কথা কবো’; ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’; ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’; ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি লড়াই করে’; ‘বিচার বিচার বিচার চাই, হাদি হত্যার বিচার চাই’— ইত্যাদি স্লোগান দেন।
সমাবেশে জাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক আহসান লাবিব বলেন, ‘আজ আমরা এখানে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে আসিনি, আমরা এসেছি প্রতিবাদ জানাতে, প্রতিরোধের ঘোষণা দিতে। আমাদের ভাই ওসমান হাদিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এটি চলমান দমন-পীড়ন ও আধিপত্যবাদী রাজনীতিরই অংশ।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, হাদির রক্ত বৃথা যাবে না। যারা ভেবেছে একজনকে হত্যা করলে আন্দোলন থেমে যাবে, তারা ভুল করেছে। এক হাদির জায়গায় হাজার হাদি জন্ম নেবে। এই মৃত্যু প্রমাণ করে, জুলাইয়ের বিপ্লব এখনও শেষ হয়নি, লড়াই এখনও চলমান।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাদির হত্যাকারীরা এখনও ধরা পড়েনি। সরকার ব্যর্থ, প্রশাসন নীরব। এই ব্যর্থতার দায় এড়ানো যাবে না। খুনিদের আশ্রয়দাতা ও মদদদাতাদের বিরুদ্ধেও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’
জাতীয় ছাত্রশক্তি জাহাঙ্গীরনগর শাখার সভাপতি জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে হাদি যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, সেই সংগ্রাম থামবে না। এই লড়াই কেবল একজনের নয়, এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সম্মান ও ভবিষ্যতের লড়াই।’