এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : অভিযুক্ত ফয়সালইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ঘটনার পরপরই ভারতে পালিয়ে গেছে। সর্বশেষ পাওয়া গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, সে বর্তমানে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে অবস্থান করছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গুলি চালানোর ঘটনার মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই দেশ ছাড়ে ফয়সাল। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ আলামতও গায়েব করা হয়।
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ফিলিপের দুই সহযোগীর জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত দিয়ে ফয়সাল ও তার এক সহযোগী ভারতে পালিয়ে যায়।
সময় টিভির হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী, শ্যুটার ফয়সালের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের আইপি অ্যাড্রেস ট্র্যাক করে দেখা গেছে, বুধবার তার অবস্থান ছিল ভারতের মহারাষ্ট্রে। সে সেখানে ভারতের রিলায়েন্স কোম্পানির একটি মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করে যোগাযোগ বজায় রাখছে।
এদিকে প্রধান দুই আসামি এখনও পলাতক থাকলেও তদন্তে পুরো হত্যাকাণ্ডের নকশা উন্মোচিত হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত জুলাই মাসে দেশে ফিরে ফয়সাল করিম মাসুদ কবির, কামাল, রুবেল ও মাইনুদ্দিনকে নিয়ে একটি ‘কিলিং মিশন’ শুরু করে। তদন্তে জানা গেছে, তারা সবাই বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নেতা।
যেভাবে পরিচালিত হয় ‘কিলিং মিশন’
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ ডিসেম্বর রাত ৮টা ১৮ মিনিটে ফয়সাল ও তার সহযোগী কবির বাংলামোটরের ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে আসে। প্রায় ছয় মিনিটের সেই বৈঠক ছিল হাদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরির প্রথম ধাপ। ওই বৈঠকে ফয়সাল হাদির সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেয়।
এরপর ৯ ডিসেম্বর রাতে ফয়সাল আবারও ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে আসে। এ সময় তার সঙ্গে কবির না থাকলেও নতুন সহযোগী হিসেবে আলমগীর উপস্থিত ছিল। ওই বৈঠকে নির্বাচনী প্রচারণার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে হাদির টিমে প্রবেশ করে ফয়সাল।
পরদিন ১২ ডিসেম্বর সেগুনবাগিচায় হাদির নির্বাচনী প্রচারণায় সরাসরি অংশ নেয় ফয়সাল। প্রচারণায় অংশ নেওয়ার পরই হাদিকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে সে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নরসিংদী, সাভার ও মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় রেকি চালায় ফয়সাল।
১১ ডিসেম্বর মিশনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সে পশ্চিম আগারগাঁওয়ে বোনের বাসায় ওঠে। হামলার দিন ভোরে উবারে করে যায় হেমায়েতপুরের একটি রিসোর্টে।
রিসোর্টের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার ভোর ৫টা ২২ মিনিটে ফয়সাল ও আলমগীরের গাড়ি গ্রিন জোন রিসোর্টে প্রবেশ করে। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া ও তার বোন। সেখানে হাদির একটি ভিডিও দেখিয়ে ফয়সাল জানায়, সে হাদির মাথায় গুলি করার পরিকল্পনা করেছে এবং এতে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হবে। ঘটনার পর তার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখার নির্দেশও দেয় ফয়সাল।
পরে উবারের মাধ্যমে বান্ধবীকে বাড্ডায় নামিয়ে দেয় সে। বেলা ১১টা ৫ মিনিটে আগারগাঁওয়ের বাসা থেকে মোটরসাইকেলে বের হয় ফয়সাল ও আলমগীর। তারা সরাসরি হাদির সেগুনবাগিচার প্রচারণাস্থলে যায় এবং সকাল পৌনে ১২টার দিকে সেখানে পৌঁছে।
প্রচারণা শেষে দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে হাদি মতিঝিলের উদ্দেশে রওনা হলে ফয়সাল ও আলমগীর পেছন থেকে তার অটোরিকশা অনুসরণ করতে থাকে। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে হাদিকে বহনকারী অটোরিকশা মতিঝিলের জামিয়া দারুল উলুম মসজিদের সামনে পৌঁছায়। সেখানে আলমগীর মোটরসাইকেল পার্ক করে এবং দুজনই আবার প্রচারণায় যুক্ত হয়।
হাদি ওই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে সেখানে প্রচারণা চালানোর কথা ছিল। সেই প্রচারণায় অভিযুক্তরাও অংশ নেয়। দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে হাদি সেখান থেকে রওনা হলে ফয়সালরা আবারও পিছু নেয়। মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে দৈনিক বাংলা মোড় ঘুরে তারা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে প্রবেশ করে।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা সুবিধাজনক স্থান খোঁজার পর দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে খুব কাছ থেকে হাদিকে লক্ষ্য করে পরপর দুটি গুলি ছোড়ে ফয়সাল।