বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:১৯:৫৩

হাদি হত্যা: সুপরিকল্পিত নেটওয়ার্কের তথ্য পেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

হাদি হত্যা: সুপরিকল্পিত নেটওয়ার্কের তথ্য পেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির পরপরই খুনিদের নিরাপদে সীমান্ত পার করে দেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত নেটওয়ার্কের তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তদন্তে উঠে এসেছে, পালানোর ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মিরপুর এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে বাপ্পী। তাকে সহযোগিতা করেন ভগ্নিপতি আমিনুল ইসলাম।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ইতোমধ্যে আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে হাদি হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত পুলিশ ও র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন মোট ১১ জন।

পালানোর নেপথ্য ব্যবস্থাপনা
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাদি হত্যাকাণ্ডের পরপরই প্রধান শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর শেখকে সীমান্ত পার করার বিষয়টি আগে থেকেই পরিকল্পিত ছিল। ফয়সাল ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এবং আলমগীর আদাবর থানা যুবলীগের কর্মী।

এখন পর্যন্ত তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে, ঘটনার রাতেই ফয়সাল ও আলমগীর ঢাকা ছাড়েন এবং একাধিক যানবাহন পরিবর্তন করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্তে পৌঁছান। সেখান থেকেই তারা অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যান। এই সীমান্ত পারাপারের পুরো ব্যবস্থাটি সমন্বয় করেন যুবলীগ নেতা তাইজুল। তিনি তখন নিজে ভারতে অবস্থান করলেও দূর থেকেই নির্দেশনা দেন।

ফোনকল, টাকা ও দালাল
হালুয়াঘাট সীমান্ত এলাকায় টাকার বিনিময়ে অবৈধ পারাপারের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন দালালের সক্রিয়তা রয়েছে। তাদের একজন ফিলিপ স্নাল। তার বাড়ি সীমান্তসংলগ্ন ভুটিয়াপাড়া গ্রামে।

তদন্তে পাওয়া তথ্যমতে, শহীদ হাদিকে গুলি করার কিছুক্ষণ পর তাইজুল তার ভগ্নিপতি আমিনুলকে ফোন করে জানান, তিনি ভারত থেকে ফিলিপের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তখন আমিনুলকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যেন দ্রুত ফিলিপের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানানো হয়, ওই রাতেই দুই ব্যক্তিকে সীমান্ত পার করাতে হবে।

আমিনুল ফিলিপের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে বার্তাটি পৌঁছে দেন এবং পরে বিষয়টি তাইজুলকে নিশ্চিত করেন। এরপর তাইজুলের নির্দেশে আমিনুল তাৎক্ষণিকভাবে ফিলিপকে ৫ হাজার টাকা পাঠান। সেই অর্থের বিনিময়েই ফয়সাল ও আলমগীরকে সীমান্ত পার করানো হয়।

প্রযুক্তির সহায়তায় সূত্রের খোঁজ
হত্যাকাণ্ডের পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ফয়সাল ও আলমগীরের অবস্থান শনাক্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের শেষ অবস্থান হালুয়াঘাট সীমান্তের আশপাশে পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে ফিলিপের দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, যাদের সীমান্ত পার করানো হয়েছে, তারা ঢাকায় বড় ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে এসেছে—এ বিষয়টি তারা পরে টেলিভিশনের সংবাদ দেখে বুঝতে পারেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে ফিলিপ আত্মগোপনে চলে যান।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, ফিলিপের সঙ্গে ঘটনার দিন কারা যোগাযোগ করেছিলেন, সেটি অনুসন্ধান করতে গিয়ে ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা আমিনুল ইসলামের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর তাকে আটক করা হয়।

গ্রেপ্তার ও রিমান্ড
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ফয়সাল ও আলমগীরকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে আমিনুল ইসলামকে মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আমিনুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

তদন্তে আরও জানা গেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যপ্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে ঘটনার দিন আমিনুলের সঙ্গে ফিলিপ ও তাইজুলের একাধিক ফোনালাপের তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, আমিনুল চোরাই মুঠোফোন কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত।

পরিবারের বক্তব্য
আমিনুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা বলেন, তার স্বামী আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। চাকরি ছেড়ে গত ছয় মাস ধরে তিনি মোবাইলের ব্যবসা করছেন। কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

হত্যাকাণ্ডের পটভূমি
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে আসছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে রিকশায় থাকা অবস্থায় তার মাথায় গুলি করা হয়। হামলার পর আততায়ীরা মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়।

আহত অবস্থায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলে সেখানে ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। গত রোববার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ-সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিস্থলের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

সূত্র : প্রথম আলো

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে