শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০২:৩৪:১৩

‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’, কী পরিকল্পনা, কী সেই প্ল্যান তারেক রহমানের?

‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’, কী পরিকল্পনা, কী সেই প্ল্যান তারেক রহমানের?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দেশে ফিরেই ভিন্নধর্মী বক্তব্য দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর পূর্বাচলে ৩০০ ফিট এলাকায় আয়োজিত এক বিশাল গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশ্ববিখ্যাত কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের ঐতিহাসিক উক্তি ‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’-এর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।

দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশের মাটিতে পা রেখে দেওয়া বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘মার্টিন লুথার কিংয়ের যেমন মানুষের জন্য একটি স্বপ্ন ছিল, তেমনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য তারও একটি পরিকল্পনা রয়েছে, আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি।’ তার এই বক্তব্যের পর জনমনে নতুন করে কৌতূহল তৈরি হয়েছে—কে ছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এবং কী রয়েছে তারেক রহমানের পরিকল্পনায়?

‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান’ বলতে তারেক রহমান সত্যিকার অর্থে কী বুঝিয়েছেন—সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি কালবেলাকে বলেন, ‘তারেক রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে অনেক বিষয় উঠে এসেছে। ‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান’-এর মধ্য দিয়ে তিনি একটি সুদূরপ্রসারী রাষ্ট্র পরিচালনার কথাকেই বুঝিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছেন। তা ছাড়া অতীতে বিভিন্ন সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে।’

এ্যানি আরও বলেন, “বিএনপি জনগণের সমর্থনে আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ড, কর্মসংস্থান তৈরি, বেকার যুবকদের জন্য ভাতা প্রদানসহ বিভিন্ন অঙ্গীকারের কথা তারেক রহমান বলেছেন। তা ছাড়া একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করছেন তিনি। মূলত ‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান’ এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি এসব বিষয়কেই বুঝিয়েছেন।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান কালবেলাকে বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে জাতিকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তার পরিকল্পনায় একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার রূপরেখা আছে, এতে কোনো সংশয় নেই। কেননা, বিএনপি এরই মধ্যে তাদের নীতি ও কর্মপরিকল্পনা নতুনভাবে সাজিয়েছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলটি এমন একটি নীতিনির্ভর ও জ্ঞানভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেছে, যা আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে পারলে তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তাই বিএনপি প্রস্তুত করেছে আটটি বিশেষ খাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্রীড়া, পরিবেশ, কর্মসংস্থান এবং ধর্মীয় নেতাদের উন্নয়ন সেবা—যার প্রতিটিই মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। তারেক রহমান পরিকল্পনার কথা বলতে এগুলোকেই বুঝিয়েছেন।’

২০২৩ সালের ১৩ জুলাই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করেন। এই রূপরেখা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ঘোষিত ‘১৯-দফা’, বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত বিএনপির ‘ভিশন-২০৩০’-এর আলোকে এবং তারেক রহমানের ঘোষিত ২৭ দফা কর্মসূচির সংশোধিত ও সম্প্রসারিত রূপে প্রণীত হয়েছে।

মার্টিন লুথার কিং কে? মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন ব্যাপটিস্ট ধর্মযাজক ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা। ১৯২৯ সালের ১৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় এক পাদরি পরিবারে তার জন্ম। যুক্তরাষ্ট্রে যখন বর্ণবৈষম্য চরম পর্যায়ে পৌঁছায় এবং কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর দমন-পীড়ন চলছিল, তখন অধিকারহীন মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত এক বিশাল সমাবেশে তিনি তার ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সেই ভাষণের মূলমন্ত্র ছিল—‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’। ভাষণে তিনি বলেন, তার একটি স্বপ্ন আছে, একদিন এই জাতি জেগে উঠবে এবং মানুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করবে। তিনি আরও বলেন, তার চার সন্তান এমন এক দেশে বাস করবে, যেখানে তাদের গায়ের রং দিয়ে নয়, বরং চরিত্রের গুণাবলি দিয়ে বিচার করা হবে। এই ভাষণ বিশ্বজুড়ে মুক্তিকামী মানুষের চেতনাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।

মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত মার্টিন লুথার কিং অহিংস আন্দোলনে বিশ্বাস করতেন। কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার ও সামাজিক মর্যাদা আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যান। এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৬৪ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। সে সময় তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী। তবে তার জীবনাবসান ঘটে মর্মান্তিকভাবে। ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল মেমফিস শহরের একটি হোটেলের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে