মঙ্গলবার, ০৮ মার্চ, ২০১৬, ০২:৩৯:০৯

‘বিএনপি নেতাদের সাজা দিয়ে ২০১৭ সালে নির্বাচন হতে পারে’

‘বিএনপি নেতাদের সাজা দিয়ে ২০১৭ সালে নির্বাচন হতে পারে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনএর আহবায়ক ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেছেন, ২০১৬ সালের বিএনপির সিনিয়ন নেতাদের সাজা দিয়ে ২০১৭-১৮ সালে আরেকটি নির্বাচন হতে পারে। ২০১৬ সালে বিএনপির বড় বড় নেতারা কারাগারে যাবেন। জেল হয়ে যাবে তাদের। এরপরও বিএনপি জনপ্রিয় দল হিসেবে ২০১৭ সালের নির্বাচনে অংশ নেবে।

যেভাবে মামলা চলছে, এভাবে চলতে থাকলে সরকারের মনোভাবে সাজা হয়ে যেতে পারে। উচ্চ আদালতে যেতে যেতে নির্বাচন হয়ে যেতে পারে। ২০১৭ সালের সম্ভাব্য নির্বাচন নিয়ে গতকাল এসব কথা বলেন তিনি। এসব কথা তার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন বলেও দাবি করেন সাবেক এই যোগাযোগমন্ত্রী।

ব্যারিস্টার হুদা বলেন, সেই নির্বাচনে বিএনপি ৯০ থেকে ১০০টি আসন পেতে পারে। ওই সংসদও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। সেখানে জাতীয় পার্টি থাকবে। জাপা ও বিএনপি মিলে বিরোধী দলে যাবে। আমরা যদি জাতীয় জোট হিসেবে ১৪ দলে গিয়ে সরকার গঠন করি, তাহলে সেই সরকারটা হবে সব রাষ্ট্রের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য সরকার ও সংসদ।

নাজমুল হুদা বলেন, আমার কাছে মনে হয়, ২০১৭-১৮ সালে নির্বাচন হয়ে যাবে। কারণ হচ্ছে, ১৭ সালে এ সরকার এ জন্যই নির্বাচন দেবে, তারা হয়তো ২০২২ সাল পর্যন্ত তাদের মেয়াদ বাড়াবে। যাতে ২০২১ সালে তারা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে পারে। আমরা যাই বলি না কেন, বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সারাবিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ। আর ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক বিশ্ব তখন বলবে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। যদিও তারা সরকারকে নানাভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। তারা সবাই জানে, সরকার যে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় তা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। সে জন্য ৫০ বছরের পূর্তিতে সরকার তাদের আমন্ত্রণটি সহজভাবে দিতে পারবে না।

২০১৯ সালের যদি তারা একটি নির্বাচন দেয়, তাহলে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হবে। অথবা এমন অবস্থায় দেশ চলে যাবে, যাতে  ২০২১ সালে সেই পূর্তি অনুষ্ঠান না-ও হতে পারে। ২০১৭ সালে দিলে পরে ২০২২ পর্যন্ত তারা মেয়াদ বাড়াতে পারবে। তখন ২১ সালে ৫০ বছর উদযাপন ভালোভাবে করতে পারবে। ২০১৭ সালের নির্বাচন তারা যদি ভালোভাবে করতে পারে, তাহলে আশা করা যায়, কিছুটা হলেও তারা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারবে।

ব্যারিস্টার হুদা বলেন, আমরা বর্তমান ১৪ দলীয় সরকারকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করব। ১৪ দলীয় জোটের পাশে থাকব। তবে আপাতত জোটে যোগদানের কথা ভাবছি না। এটা আমাদের ফোরামে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে। আমরা জয়েন করব কি না করব, তার সিদ্ধান্ত হতে হবে। তবে সম্প্রতি দুই মন্ত্রী আমাদের এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। এ নিয়ে তারা অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আহ্বান জানাননি।

প্রবীণ এই আইনজীবী আশা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে এ উপলব্ধি আনা, জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে একদিন না একদিন ফিরিয়ে দিতেই হবে। সেটা একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমেই হতে হবে। গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উপলব্ধি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাকে গণতন্ত্রে ফিরে আসতেই হবে। সে রকম একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে এক নম্বর ধাপ শেখ হাসিনা অতিক্রম করেছেন। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেছেন। হরতাল, বিক্ষোভসহ রাজপথ অহেতুক উত্তপ্ত ছিল, সেই অবস্থা থেকে তিনি দেশকে একটি স্থিতিশীল অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। এখন তার উপলব্ধির সময়। পাশাপাশি ব্যাপকভাবে তিনি উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছেন।

শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে নাজমুল হুদা বলেন, উন্নয়নের মাধ্যমে তিনি দেশের জনগণের আস্থার পাত্র হচ্ছেন। তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। যখন তার মধ্যে এই উপলব্ধিটা আসবে, জনগণ তাকে ভালোভাবে গ্রহণ করেছে, তখন তিনিই কিন্তু দেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে করা যায়, তার এককভাবে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। তিনি সেই ক্ষমতার অধিকারী এখন। আমরা তাকে এই সিদ্ধান্তে আসতে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করতে চাই। আমাদের যে ধ্যান ধারণা, চিন্তাভাবনা, সেটা যদি আলোচনার মাধ্যমে তার সামনে নিয়ে আসতে পারি, সেটাই তার সিদ্ধান্তকে অনুকূলে নিয়ে আসার জন্য যথেষ্ট সাহায্য করবে। এটাই হবে সুষ্ঠু রাজনীতিতে আমাদের বিরাট বড় একটি অবদান। আমরা সুষ্ঠু রাজনীতি ও সুশাসনে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্র উন্নয়নে তাদের সঙ্গে যাওয়া উচিত, যারা সরকারে থাকেন। আমরা জাতীয় জোট একলা চিন্তা করলে লাভ হবে না।

বিএনপির সাবেক এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে গিয়ে কথা বললে কোনো লাভ হবে না। আমাদের কথা বলতে হবে, তাদের কাছে, যারা সিদ্ধান্ত দেবে, ক্ষমতার অধিকারী, যারা দেশের স্বার্থে এখন কথা বলছে, কাজ করছে। তাদের সঙ্গে আমরা আমাদের চিন্তাধারা যুক্ত করতে চাই। তাদের সাহায্য করতে চাই। তারা যাতে একসময় উপলব্ধি করে, এদেশে গণতন্ত্রই হচ্ছে সবচেয়ে বড় তন্ত্র। স্বৈরশাসনে মানুষের কল্যাণ হয় না। গণতন্ত্রেই কল্যাণ। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।

তিনি বলেন, এখন গণতন্ত্র উপস্থিত নেই। গণতন্ত্র আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ সৃষ্টি করছেন। এই যে রাস্তাঘাটে বিক্ষোভ, হরতাল, সবই গণতন্ত্রের পরিপন্থী কাজ। এটা মানুষের অধিকার হরণ করে, ক্ষতি করে। এর জন্য যত কঠোরই হোক না কেন, যত অগণতান্ত্রিকভাবেই হোক না কেন, তিনি কিন্তু একটা স্থিতিশীল অবস্থা নিয়ে এসেছেন। এখন মানুষ চিন্তা করতে পারে, ভবিষ্যতে তাদের অধিকার আরও সুনিশ্চিত হবে। আস্তে আস্তে বর্তমান সরকারের উপলব্ধি হবে। সবচেয়ে বড় হচ্ছে ভোটের অধিকার। যা নিশ্চিত করতে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজন আছে। জনগণই সেসব ক্ষমতার উত্স—এটা এই সরকারই প্রমাণ করবে।

সামগ্রিক বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে কথা হয়েছে কি না— এমন প্রশ্নে নাজমুল হুদা বলেন, এটা নিয়ে আমি এখন বলতে চাই না। এ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ এর আগে নির্বাচন দিতে চান না। কিন্তু আমার বদ্ধমূল ধারণা, ২০১৭-১৮ সালে আরেকটি নির্বাচন অবশ্যই হবে। এই যুক্তিগুলো যদি তার মাথায় থাকে। আমি তাকে অনুরোধও করেছি। ২০১৯ সালে নির্বাচন হলে বিএনপি না যেয়ে পারবে না। আমাদের নতুন জোটকে তিনি স্বাগতও জানিয়েছেন। -বিডি প্রতিদিন

৮ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে