মঙ্গলবার, ০৮ মার্চ, ২০১৬, ০৬:০০:১০

সংশোধন হচ্ছে বিএনপির গঠনতন্ত্র

সংশোধন হচ্ছে বিএনপির গঠনতন্ত্র

মাহমুদ আজহার : বিএনপির নবনির্বাচিত সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানকে কো-চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব দিয়েছেন দলের যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান। রাজনৈতিক উপদেষ্টার পাশাপাশি ‘বিশেষ উপদেষ্টা পরিষদ’ গঠনের প্রস্তাব ভারতের শিলংয়ে থাকা দলের আরেক যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের।

১৫ জন ভাইস চেয়ারম্যানের ওপরে স্থায়ী কমিটির পদমর্যাদায় বিশেষ উপদেষ্টাদের স্থান করে দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। শুধু এ দুই নেতাই নন, দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনে বিএনপির সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে নির্বাহী কমিটিসহ কাউন্সিলররা শতাধিক লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে ‘এক নেতার এক পদ’ রাখতে প্রায় সব নেতাই মত দিয়েছেন।

গতকাল বিকালে গঠনতন্ত্র উপকমিটির বৈঠকে সব কটি প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কমিটির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ৩২টি প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রস্তাবগুলো নিয়ে কাজ করতে সাত সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়।

এ কমিটির সদস্য  হলেন— বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও আসিফা আশরাফি পাপিয়া। এসব প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ নিয়ে আজ তারা বৈঠকে বসবেন। এরপর আগামী শনিবার তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আবারও বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

এরপর তা বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে তোলা হবে। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে তা গঠনতন্ত্রে সংযোজন করা হবে। সহধর্মিণী হাসিনা আহমেদের মাধ্যমে সালাহউদ্দিন আহমেদ তার লিখিত প্রস্তাবে বলেন, ১০ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ সৃষ্টি করা উচিত। থাকতে হবে বিভাগওয়ারি দুজন করে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। উপসম্পাদকের পদ সৃষ্টি করতে হবে, যার মর্যাদা হবে নির্বাহী কমিটির সদস্যের সমান।

মন্ত্রণালয়ভিত্তিক উপকমিটির আহ্বায়ক, সম্পাদক, সহসম্পাদক ও সদস্যসচিব পদ থাকবে। অঞ্চলভিত্তিক আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদকের পদ সৃষ্টির দাবিও করেন তিনি। লিখিত প্রস্তাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিষয়ভিত্তিক সাবজেক্ট কমিটি গঠন করা জরুরি। যুগ্ম-মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু বলেন, রাজশাহী মহানগরকে ৪৬টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও ৮ থানায় রূপান্তর করতে হবে।

বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক কাজী আসাদুজ্জামান আসাদ তার প্রস্তাবে বলেন, প্রশিক্ষণ বিষয়ে প্রিন্সিপাল নিয়োগ করতে হবে, যার পদমর্যাদা থাকবে উপদেষ্টা পর্যায়ের। সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ে একাধিক পদ সৃষ্টি করতে হবে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ জেড এম জাহিদ হোসেন তার প্রস্তাবে বলেন, অন্তত দুটি সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক পদ সৃষ্টি করতে হবে।

এ ছাড়া একটি পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক, দুটি সহ-পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক, একটি খাদ্য ও পুষ্টি উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক, দুটি সহ-খাদ্য ও পুষ্টিবিষয়ক সম্পাদকের পদ তৈরি করা জরুরি। আরেক উপদেষ্টা এস এম হালিম বলেন, নির্বাহী কমিটির আকার বাড়িয়ে ৪০৫ করা উচিত। স্থায়ী কমিটির সদস্যসংখ্যা করা উচিত ২৫। উপদেষ্টা পরিষদ করা উচিত ৫০ সদস্যের।

চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা আবদুল মান্নান বলেন, ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেবে উপজেলা ও জেলার সুপার ফাইভ। ভাইস চেয়ারম্যান পদে কমপক্ষে তিনজন মহিলা থাকতে হবে। কোষাধ্যক্ষের পদ হবে যুগ্ম-মহাসচিবের মর্যাদায়। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা সম্মেলনের জন্য তিন সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করতে হবে। বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রস্তাব করেন, প্রাথমিক সদস্যের চাঁদা ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা করা উচিত। প্রতি বছর পদ নবায়ন ও প্রতিটি ইউনিটে ১০ ভাগ নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে হবে।

পৌর, উপজেলা, জেলা, মহানগরসহ সব কমিটিতে সহ-সভাপতি ১৫, যুগ্ম-সম্পাদক ৭, ইউনিটপ্রতি একজন সম্পাদক/কর্মকর্তা বৃদ্ধি করা জরুরি। আহ্বায়ক কমিটি বিশেষ প্রয়োজনে তিন মাসের জন্য ৫১ সদস্যবিশিষ্ট করতে পারবেন চেয়ারপারসন। নির্বাহী কমিটি থেকে শুরু করে ইউনিট কমিটি পর্যন্ত এক নেতার এক পদ থাকতে হবে। অঙ্গসহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদাধিকারবলে বিএনপির নির্বাহী কমিটি থেকে শুরু করে ওয়ার্ড কমিটি পর্যন্ত সব ইউনিটের সদস্য মনোনীত হবেন।

জেলা ও মহানগর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদাধিকারবলে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হবেন। দল থেকে মনোনীত সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ এলাকায় নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থিত হয়ে জবাবদিহি করবেন।

নির্বাহী কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মকে সহযোগী সংগঠন করা জরুরি। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সাবেক এমপি তার লিখিত প্রস্তাবে বলেন, উপজেলা কিংবা জেলা কমিটির সম্মেলনের ১৫ দিনের মধ্যে অনুমোদন দিতে হবে। ইউনিয়ন কমিটি ৭১ থেকে বাড়িয়ে ৮১ করতে হবে। প্রস্তাব এসেছে যুব মহিলা দল গঠনের। তৃণমূল বিএনপিকে গঠনতন্ত্রে সংযোজন করার প্রস্তাবও করেছেন কেউ কেউ।

তিন উপকমিটির বৈঠক : কাউন্সিল উপলক্ষে গতকাল তিনটি উপকমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। চিকিৎসাসেবা উপকমিটির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয় অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে। কাউন্সিলকে সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাংস্কৃতিক উপকমিটির বৈঠকে নেতৃত্ব দেন বিএনপির সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। প্রকাশনা উপকমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বিএনপির কাউন্সিলের স্লোগানও চূড়ান্ত : বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের স্লোগান চূড়ান্ত করা হয়েছে। ‘দুর্নীতি, দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’— এই স্লোগান নিয়ে আগামী ১৯ মার্চ দলের কাউন্সিল করতে যাচ্ছে বিএনপি। লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হবেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্লোগানের সঙ্গে লোগো এবং ১৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় কাউন্সিলের সময়সূচিও চূড়ান্ত করেছে দলটি। সেদিন সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে জাতীয় কাউন্সিল উদ্বোধন করবেন খালেদা জিয়া। ২০০৯ সালে পঞ্চম কাউন্সিলে দলটির স্লোগান ছিল— ‘নানা মানুষ নানা মত, দেশ বাঁচাতে ঐক্যমত’।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানান, ‘জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে ‘থিম সং’ চূড়ান্ত হয়েছে। আলাদা ওয়েবসাইটও চূড়ান্ত করা হয়েছে। সারা দেশে নেতা-কর্মীসহ জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। সব উপ-কমিটি রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে।

এসব প্রস্তাব প্রসঙ্গে বিএনপির গঠনতন্ত্র উপকমিটির সদস্য নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ‘অনেক প্রস্তাব এসেছে। আমরা এগুলোর সারসংক্ষেপ করছি। এ নিয়ে আরেকটি সাব কমিটিও হয়েছে। সংযোজন-বিয়োজন করে আমরা একটি যুগোপযোগী গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে চাই।’ -বিডি প্রতিদিন
৮ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে