বুধবার, ০৯ মার্চ, ২০১৬, ০১:৪৬:১১

বিএনপিতে সম্মেলন নিয়ে মাতামাতি

বিএনপিতে সম্মেলন নিয়ে মাতামাতি

মাহমুদ আজহার : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে এখন আর তেমন তোড়জোড় নেই। দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সবাই এখন মহাব্যস্ত কাউন্সিল নিয়ে। বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষীদের দৃষ্টিও সেদিকে। কাউন্সিলের আগেই চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন।

এটা অবশ্য আগে থেকেই জানতেন নেতা-কর্মীরা। তবে দলের মহাসচিব কে হচ্ছেন, স্থায়ী কমিটিতে নতুন মুখ আসছেন কারা, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদটি পাচ্ছেন কে— এ নিয়েই আলোচনা এখন দলের সর্বত্র। অবশ্য দলের নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশই মনে করেন মহাসচিবের পদটি প্রাপ্য মির্জা ফখরুলেরই। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল হয়।

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রমনা গ্রিনে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করেন। তার মৃত্যুর পর ১৯৮৪ সালে তার সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া দলের হাল ধরেন। ইউপি নির্বাচন নিয়ে গঠিত বিএনপির কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের নেতারাও এখন কাউন্সিলের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কাউন্সিল উপলক্ষে বিভিন্ন উপ-কমিটিতে দেখা যায় ওই নেতাদের। একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনে কেন্দ্রের কাজ শেষ হয়ে গেছে।

তা ছাড়া ইউপির ফলাফল কী হবে— অনেকটাই জানা। তাই এ নিয়ে মাতামাতির কিছু নেই। ইউপির আগেই হচ্ছে বিএনপির কাউন্সিল। নেতাদের কার অবস্থান কোথায় যায়, তা নিয়েই সবাই টেনশনে। বিএনপির সব ভাবনা এখন কাউন্সিল ঘিরে। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, নির্বাহী কমিটিতে এবার বেশকিছু চমক থাকবে। মূল নির্বাহী কমিটির আকার ছোট হতে পারে। সাবজেক্ট কমিটি হতে পারে। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কমিটিও হতে পারে।

প্রত্যেক উপ-কমিটিতে বেশকিছু সদস্য থাকবেন। যার পদমর্যাদা হবে নির্বাহী কমিটির সদস্য। স্থায়ী কমিটিতে বেশ কয়েকজন নতুন মুখ আসবেন। তারা অপেক্ষাকৃত তরুণ। নির্বাহী কমিটিতে এবার দুঃসময়ে ত্যাগীদের প্রাধান্য থাকবে। নিষ্ক্রিয়দের সাইডলাইনে রাখা হবে। অনেকটা গোপনীয়ভাবেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও লন্ডনে অবস্থান নেওয়া সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাহী কমিটির তালিকা তৈরি করছেন।

জানা যায়, কাউন্সিলের লোগো ও স্লোগান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এবারের স্লোগান— ‘দুর্নীতি, দুঃশাসন হবে শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’। ১৯ মার্চ সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী এ কাউন্সিলের উদ্বোধন করবেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া ছাড়াও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তৃতা প্রচার করা হবে। এ ছাড়া কাউন্সিলে সরাসরি স্কাইপির মাধ্যমে কথা বলবেন তারেক রহমান।

কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রতিটি অঙ্গ-সংগঠনের জন্য পৃথক স্লোগান তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে মহিলা দলের জন্য স্লোগান করা হয়েছে, ‘চেতনায় নারী, বিপ্লবী নারী, আমরাই গণতন্ত্র ফেরাতে পারি।’ মুক্তিযোদ্ধা দলের স্লোগান হচ্ছে, ‘মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র, ফেরাতে হবে গণতন্ত্র।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘শুধু প্যান্ডেলের কাজ ছাড়া মোটামুটিভাবে সব কাজই প্রায় শেষ পর্যায়ে। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সবগুলোই কাজ করে যাচ্ছে। আজ থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে সম্মেলন উপলক্ষে পোস্টার টানানো হবে। ৬ লাখ পোস্টার প্রস্তুত। লিফলেট তৈরি করা হচ্ছে। বিএনপি ছাড়াও অঙ্গ-সংগঠনগুলোর ব্যানারে পোস্টার তৈরি করা হচ্ছে। বিএনপির নিজস্ব ওয়েবসাইট, ইউটিউব, ফেসবুকসহ সামাজিক সব গণমাধ্যমে বিএনপির কাউন্সিলের প্রচারণা চালানো হবে। কাউন্সিল উপলক্ষে আলাদা আরেকটি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। তবে এবার কাউন্সিলের কোনো থিম-সং থাকছে না।’

কাউন্সিল সামনে রেখে গত কয়েক দিন ধরেই নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের  কার্যালয়ে ব্যস্ত নেতারা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের পদচারণায় মুখরিত পার্টি অফিস। কাউন্সিল উপ-কমিটির বৈঠক হচ্ছে নিয়মিত। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলার অনেক নেতা-কর্মীও উপস্থিত হচ্ছেন দলীয় কার্যালয়ে। সরগরম হয়ে উঠেছে নয়াপল্টন এলাকা।

জানা যায়, ১৯ মার্চ সকাল ১০টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে হবে মধ্যাহ্নভোজ। এরপর বেলা ৩টা থেকে শুরু হবে কাউন্সিলরদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক। দুই ধাপের আলোচ্য সূচিতে থাকছে— শোক প্রস্তাব উপস্থাপন, দলের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির রিপোর্ট পেশ, মহাসচিবের সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এবং দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা, দলের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংশোধন এবং দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটির সদস্যদের নির্বাচন।

কাউন্সিলের সামগ্রিক প্রস্তুতি সম্পর্কে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপি নতুন নেতৃত্ব আসার অপেক্ষায়। কাউন্সিলের সব প্রস্তুতিই সম্পন্ন। কাউন্সিলর ও ডেলিগেট তালিকা তৈরি করা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা তাকিয়ে আছেন ১৯ মার্চের দিকে।’ সুষ্ঠুভাবে কাউন্সিল সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চান তিনি। -বিডি প্রতিদিন

৭ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে