বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ, ২০১৬, ০২:৩৭:৫৩

মীর কাসেমের ফাঁসি কবে?

মীর কাসেমের ফাঁসি কবে?

আহমেদ আল আমীন : যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কবে? কবে নাগাদ ফাঁসিতে ঝুলবেন তিনি? এর জন্য আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে? ৮ মার্চ সুপ্রিমকোর্টে তার ফাঁসির আদেশ বহালের পর এই জিজ্ঞাসা এখন মানুষের মুখে মুখে। জনে জনে।

পথে-ঘাটে-মাঠে গতকাল সবার প্রশ্ন ছিল একটাই— মানবতাবিরোধী অপরাধী মীর কাসেমের ফাঁসির রায় কার্যকরের আইনি প্রক্রিয়া আর কী বাকি আছে? তবে আইনজীবীরা বলছেন, সব কিছু ঠিক থাকলে, একাত্তরের এই ঘাতককে ফাঁসিতে ঝোলাতে আরও কিছু আইনি প্রক্রিয়া পার হতে হবে।

এগুলো হচ্ছে— আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ, আসামিপক্ষের রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন, সেই আবেদনের নিষ্পত্তি ও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গ। এ ক্ষেত্রে আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় বাস্তবায়নের আগের প্রক্রিয়াগুলো দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মীর কাসেমের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে আপিল বিভাগের মতামত জানা গেছে ৮ মার্চ। ওইদিন তার ফাঁসি বহল রেখে রায় দেন আদালত। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি এখনো। কোন গ্রাউন্ডে সাজা বহাল রেখে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, কোন বিবেচনায় তাকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে, আবার কোন বিবেচনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে— এসব বিষয়ে সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালতের বক্তব্য জানা যায়নি।

তাই এ সম্পর্কে জানতে পূর্ণাঙ্গ রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। এরই মধ্যে আসামিপক্ষ রায় রিভিউ বা পুনর্বিবেচনার আবেদন করবে বলে জানিয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আপিল বিভাগে এই আবেদন করবে আসামিপক্ষ। পুনর্বিচেনার আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকর করা যাবে না। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সুপ্রিমকোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আপিল বিভাগে রিভিউয়ের শুনানি ও নিষ্পত্তি হবে।

তবে রিভিউ আবেদন কখনই আপিলের সমতুল্য নয়। রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, আশা করছি শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ রায় পেয়ে যাব। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আসামি চাইলে রিভিউ আবেদন করতে পারবেন। মীর কাসেমের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা রিভিউ আবেদন দায়ের করব। আশা করি রিভিউ আবেদনে মীর কাসেম নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে মীর কাসেম আলীকে ৮ মার্চ মৃত্যুদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। এর ফলে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতেই হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর এই কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্যকে। দলটির আর্থিক খাতের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে পরিচিত মীর কাসেম ১৯৭১ সালে ছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক সংগঠন আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান। পরে তিনি ইসলামীর ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

বিচারিক আদালতে প্রমাণিত দশ অভিযোগের মধ্যে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যার একাদশ অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয় আপিল বিভাগে। এ ছাড়া দ্বিতীয়, তৃতীয়, সপ্তম, নবম, দশম ও চতুর্দশ অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মোট ৫৮ বছরের দণ্ড বহাল রাখেন আদালত। তবে চতুর্থ, ষষ্ঠ ও দ্বাদশ অভিযোগ থেকে রায়ে খালাস পান তিনি। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেফতার হন মীর কাসেম।

পরে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। ২০১৩ সালের ১৬ মে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর তার বিচার শুরু হয়। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল যুক্তিতর্ক শুরু করে প্রসিকিউশন। মামলাটি ট্রাইব্যুনালে রায়ের অপেক্ষায় রাখা হয় ওই বছরের ৪ মে। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ নভেম্বর মীর কাসেম আপিল করেন।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি আপিলের শুনানি শুরু হয়ে তা শেষ হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মীর কাসেমের বিচার হয় ১৪ অভিযোগে। তবে বিচারিক ওই আদালতে প্রমাণিত হয় দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ ও চতুর্দশ; এই ১০টি অভিযোগ। এর মধ্যে একাদশ অভিযোগে সর্বসম্মতভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও দ্বাদশ অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয় মীর কাসেমকে। প্রমাণিত অন্য আট অভিযোগে মোট ৭২ বছরের দণ্ড পান তিনি।

এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে আপিল বিভাগে চতুর্থ, ষষ্ঠ ও দ্বাদশ অভিযোগ থেকে খালাস পান মীর কাসেম। অন্য সাত অভিযোগ প্রমাণিত হয় আপিল বিভাগে। এসব অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডও বহাল রাখেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। একাদশ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও তৃতীয়, সপ্তম, নবম ও দশম অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয় মীর কাসেমকে। আর দ্বিতীয় অভিযোগে ২০ বছর এবং চতুর্দশ অভিযোগে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় বিচারিক আদালতে। -বিডি প্রতিদিন
১০ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে