বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৬, ০৫:৫৭:১৮

তিন মাসেও দায়িত্ব পায়নি পুলিশের বিশেষ ইউনিট

তিন মাসেও দায়িত্ব পায়নি পুলিশের বিশেষ ইউনিট

আনিস রহমান : কোনো থানাই হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না মামলা তদন্তের কর্তৃত্ব। ফলে বিশেষায়িত বাহিনী হয়েও সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর একটিও তদন্ত করতে পারছে না বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

এ প্রসঙ্গে পিবিআই কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংস্থাটির জন্মই হয়েছে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করে চলার জন্য। একটি বিধিমালার জন্য স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘ লড়াই করতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠার প্রায় ২৬ মাস পর গত ৫ জানুয়ারি পুলিশের তদন্তকাজে বিশেষজ্ঞ এই ইউনিটের বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু তিন মাসেও পুরোপুরি দায়িত্ব পায়নি পিবিআই।

এর আগে পিবিআই যাত্রা শুরু করেছিল ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর। কিন্তু নতুন একটি ইউনিটের বিশেষ ধরনের কাজগুলো আটকেছিল এই বিধিমালার অভাবে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিধিমালা হলেও গুরুত্বপূর্ণ বা চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো তদন্ত করতে পারছে না। এখন পিবিআই যে মামলাগুলো তদন্ত করছে তার প্রায় সবগুলোই এসেছে আদালতের নির্দেশে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, থানায় পর্যাপ্ত জনবল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা চাহিদা অনুযায়ী না থাকায় এবং নানা ধরনের কাজে সব সময় ব্যস্ত থাকায় যথাযথ মনোযোগ ও একনিষ্ঠতায় তদন্ত কার্যক্রমের প্রত্যাশিত মান অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। তাই কার্যকর তদন্তের জন্য প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি গ্রহণে সক্ষম প্রশিক্ষিত বিশেষায়িত পৃথক তদন্ত ইউনিট পিবিআই গঠন করা হয়। যার উদ্দেশ্য তদন্তের মান বৃদ্ধি এবং মামলায় সাজারহার বাড়ানো।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পিবিআই নিজস্ব বিধিমালা পেলেও এখন মামলা পাওয়া যাচ্ছে না। মামলার জন্য এখন যুদ্ধ করতে হচ্ছে বিভিন্ন থানা পুলিশের সঙ্গে। কারণ থানা-পুলিশ কোনো মামলাই হাতছাড়া করতে চায় না। ফলে বিশেষায়িত এই বাহিনী আদালতের নির্দেশে পাওয়া কিছু মামলা তদন্ত করছে। এর বাইরে পুলিশ সদর দফতর থেকে কয়েকটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পিবিআই।

পিবিআই সূত্র জানায়, পুলিশের এই ইউনিট তিন হাজার ৬৫৭টি মামলা তদন্তের জন্য পেয়েছে। এর মধ্যে জিআর মামলার সংখ্যা এক হাজার ১৩২টি আর সিআর মামলা দুই হাজার ৫২৫টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে দুই হাজার ৬৪টি। এর মধ্যে জিআর মামলা ৩৬৯ ও সিআর মামলা এক হাজার ৬৯৫টি। তদন্তাধীন আছে এক হাজার ৫৯৩টি মামলা। পিবিআই বিধিমালায় বলা হয়েছে পিবিআই আগাগোড়াই একটি তদন্ত ইউনিট। তাদের কাজের সুনির্দিষ্ট সিডিউল আছে। সিডিউল মতো তারা নিজেরাই স্বউদ্যোগে মামলা তদন্তের জন্য গ্রহণ করতে পারে। বিধিতে পিবিআইকে ১৫ ধরনের মামলা তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে খুন, ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, চোরাচালান ও কালোবাজারি, মানব পাচার, সাইবার ক্রাইম, ধর্ষণ, অস্ত্র এবং বিস্ফোরক দ্রব্য সংক্রান্ত মামলা। কর্মকর্তারা বলেন, বিধিমালা জারির আগেই পিবিআই দেশের সব মহানগর, বিভাগীয় শহর বৃহত্তর জেলাগুলোতে তাদের আঞ্চলিক অফিস স্থাপনের কাজ শেষ করে। তাদের অফিসারদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রায় বছর খানেক ধরে পিবিআই আদালতের নির্দেশে বেশকিছু মামলার তদন্ত সম্পন্ন করেছে।

নরসিংদী জেলার এক আদালত থেকে নির্দেশিত হয়ে ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি পিবিআই তাদের ইতিহাসের সর্বপ্রথম মামলাটি তদন্তের জন্য গ্রহণ করে। তাদের তদন্তের মান, ধরন ও আদালতে উপস্থাপিত পুলিশ প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট আদালত সন্তুষ্ট হয়ে একাধিক আদালত তাদের অর্ডার সিটে পিবিআইর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। রংপুর পীরগঞ্জ থানার একটি নারী নির্যাতনের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে গেলে ট্রাইব্যুনাল তা তদন্ত করার জন্য পিবিআইর রংপুর অফিসকে দায়িত্ব দেন।

আদেশটিও ছিল মনে রাখার মতো। আদালতের আদেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পিবিআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল উক্ত অভিযোগটি অফিসার-ইনচার্জ, পীরগঞ্জ থানার মাধ্যমে নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দিতে। এ ধরনের দায়িত্ব অর্পণ প্রমাণ করে আদালত পিবিআই নামক তদন্ত সংস্থাটির প্রতি বেশ আস্থাশীল। এর বাইরেও থানা পুলিশ বা পুলিশের অন্য ইউনিট থেকে দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজিজনিত অনেক মামলাই অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পিবিআইকে। -বিডি প্রতিদিন

১৭ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে