বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৬, ০৬:০৩:৪৪

প্রস্তুতি সম্পন্ন, বিএনপিতে আসছে পরিবর্তন

প্রস্তুতি সম্পন্ন, বিএনপিতে আসছে পরিবর্তন

মাহমুদ আজহার : কাউন্সিলের দুই দিন আগে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গুলশান কার্যালয়ে আজ রাত সাড়ে ৮টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে দলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চূড়ান্ত করা হবে দলের গঠনতন্ত্র।

তা ছাড়া সাংগঠনিক কাঠামোয় বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। গঠনতন্ত্রে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ক্ষমতা ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা হবে। সর্বস্তরের কমিটিতে থাকছে ‘এক নেতার এক পদ’। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

আগামী রবিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধন করবেন বিএনপির সদ্য পুনর্নির্বাচিত চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়া। দ্বিতীয় অধিবেশনও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনেই হবে। স্থানসংকুলান না হওয়ার শঙ্কায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কিছু অংশ চেয়েছে বিএনপি।

কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ দেশের সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভারত, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়া থেকেও সরকারি দলের প্রতিনিধিরা কাউন্সিলে আমন্ত্রিত হয়ে আসছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ঢাকায় অবস্থান নেওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কাউন্সিল সামনে রেখেই স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া কাউন্সিল সফল করতে নানা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।’

দলীয় সূত্রমতে, বিএনপির ১১টি সাংগঠনিক বিভাগে একজন করে সম্পাদক ও একজন করে সহ-সম্পাদক পদ থাকবেন। এরই মধ্যে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে সাংগঠনিক বিভাগ ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ ছাড়া ১৭টি সেক্টরভিত্তিক ‘বিশেষ কমিটি’ থাকবে। ওই কমিটির সম্পাদক থেকে সদস্যরা নির্বাহী কমিটির সদস্য হতেও পারেন, নাও হতে পারেন। বিএনপি সমর্থিত সংশ্লিষ্ট সেক্টরে দক্ষরাই বিষয়ভিত্তিক কমিটির প্রধান হবেন। একজন করে সহ-সম্পাদক ও ১০ জন সদস্য থাকবেন কমিটিতে। বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক সচিবের পদও সৃষ্টি করা হতে পারে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, কাউন্সিলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব সুনির্দিষ্টকরণ, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বেশ কিছু পদের সংখ্যা বৃদ্ধি, দলের উপদেষ্টামণ্ডলী গঠনসহ বেশ কিছু সাংগঠনিক পদ সৃষ্টির জন্য গঠনতন্ত্রে সংশোধন প্রস্তাবের খসড়া চূড়ান্ত করছে গঠনতন্ত্র সংশোধনী উপকমিটি। ওইসব প্রস্তাব নিয়েই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে।

জানা যায়, কাউন্সিল ঘিরে বিএনপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। বিএনপি বাংলাদেশ ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। বিএনপি কাউন্সিল ব্লগ স্পট ডট কম নামে একটি ব্লগ খোলা হয়েছে। বিএনপি লাইভ ডটকম কাউন্সিল অধিবেশন সরাসরি সম্প্রচার করবে। এসএমএসের মাধ্যমে তৃণমূল বিএনপির নেতাদের কাছে সার্বক্ষণিক তথ্য প্রদান করা হচ্ছে।

বিএনপির কমিউনিকেশন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ফয়সাল আলিম বলেন, কাউন্সিলের কার্যক্রম প্রচারে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিএনপি কাউন্সিল-২০১৬ নামে নতুন আরেকটি ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। সম্মেলনের সামগ্রিক তথ্য নেতা-কর্মীসহ সবাইকে জানাতে ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে সব খবর সংযুক্ত করা হচ্ছে।

বিএনপির কাউন্সিল প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‘ডেমোক্রেটিক সোসাইটিতে রাজনৈতিক প্র্যাকটিস থাকাটাই স্বাভাবিক। আমি আশা করি, কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাউন্সিল হবে, যোগ্যরা নেতৃত্বে আসবেন। সুস্থ রাজনীতির অঙ্গীকার করবেন নেতা-কর্মীরা। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিসহ সব ভেদাভেদ ভুলে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হবেন। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর মধ্যে আস্থার সংকট কাটাতে হবে। দলকে গণতান্ত্রিকভাবে এগিয়ে নিতে নেতা-কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নূরুল আমিন বেপারী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে— এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে সরকারও দলটিকে তার স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে দেয়নি। একটি রাজনৈতিক দল সাংগঠনিক ভিত্তির পাশাপাশি আন্দোলনের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ায়। কিন্তু বিএনপি কোনোটাতেই পারেনি। তাই কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে কোনো ভুল করা যাবে না। ভুল হলে দলে আরও বিপর্যয় নেমে আসবে। আর নেতৃত্বে শুধু নবীনদের কিংবা শুধু প্রবীণদের নিয়ে এলে চলবে না। দুটোরই সমন্বয় থাকতে হবে। কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপিতে নবযৌবন ফিরে আসবে বলে প্রত্যাশা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

প্রধানমন্ত্রীকে কাউন্সিলের আমন্ত্রণ খালেদা জিয়ার : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের দাওয়াত দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। দলের চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে বিএনপির সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকাল বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে এ আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন।

শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফের পক্ষে আমন্ত্রণপত্র দুটি গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীম ও মাসুদুল হাসান। বিএনপি প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন কেন্দ্রীয় সহদফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহীন ও যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম। এ সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে তাদের চা-বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়িত করা হয় বলে জানান আবদুল লতিফ জনি। -বিডি প্রতিদিন

১৭ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে