মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০১৬, ০১:০৬:০৭

যে আশঙ্কা করেছিলাম তা শতভাগ সত্য বলে প্রমাণিত : রিজভী

যে আশঙ্কা করেছিলাম তা শতভাগ সত্য বলে প্রমাণিত : রিজভী

নিউজ ডেস্ক : প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে ইউপি ভোটের প্রথম দফা ৭১৭ টিতে ভোট চলছে। এই ভোটে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যে আশঙ্কা করেছিলাম -তা শতভাগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন তার সাংবিধানিক শক্তি দিয়ে কাজ করলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। চাকরি ও ক্ষমতার লোভে মানুষ যে কত নিচে নামতে পারে তা তাদের না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। অথচ প্রশাসনের মাধ্যমে শাসকদলের সন্ত্রাসীদের দমাতে পারলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হতে পারতো।

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা এবং সরকারের প্রতি ‘আনুগত্য থাকার নীতি’র কারণেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেন তিনি।

রিজভী বলেন, ইসি সরকারের ইচ্ছে পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। সেজন্য বারবার লিখিত অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও বিষয়গুলো তারা আমলে নেয়নি। মুলত ইসি জনগণের জনগণের সঙ্গে রসিকতা করছে। এর পরিণতি একদিন ভয়ঙ্কর হবে। কারণ তারা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কবরে শায়িত করেছে।

রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে যে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না তা আবারো প্রমাণিত হলো। তিনি নির্বাচন কমিশনে তার দলীয় আস্থাভাজন লোক বসিয়েছেন।

নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হতে হলে প্রধানমন্ত্রীর জায়গায় অবশ্যই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন এমন ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়ে এবং ইসিকে নিরপেক্ষ লোক বসাতে হবে বলেও দাবি করেন বিএনপির এই নেতা।

রিজভী অভিযোগ করেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সোমবার নোয়াখালীতে ফজলে রাব্বি রাজীব এবং ওয়াসিম নামের দু’জন ছাত্রদল নেতাকে হত্যা করেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।

এই ঘটনার জন্য ইসিকে দায়ী করে ভবিষ্যতে এজন্য জবাবদিহিতা করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ইসি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পারলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতো না।

রিজভী জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র বিএনপির প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপরে হামলা, ভোট জালিয়াতি, কেন্দ্র দখল, মারধর করা হচ্ছে।

এসময় রিজভী সারাদেশের সহিংসতার খণ্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, ঝালকাঠি জেলাধীন সদর উপজেলার ৩ নং নবগ্রাম ইউনিয়নে গতকাল মাগরিবের পর আওয়ামী লীগের কর্মীরা সশস্ত্র অবস্থায় হোন্ডা নিয়ে এসে ধানের শীষের প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছে।

২ নং বিনয়কাঠি ইউনিয়নের সকল ভোটকেন্দ্র গতকাল সন্ধ্যার পর দখল করে নিয়েছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। প্রশাসনকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। পুরো ঝালকাঠি জেলার ৪টি উপজেলার সকল ইউনিয়নেই একই অবস্থা।

রিজভী বলেন, মুন্সীগঞ্জ জেলাধীন সিরাজদিখান উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী কর্মীরা ভোটকেন্দ্রগুলি দখলে নিয়ে ব্যালট পেপারে দেদারসে সিল মারছে। সেখানে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী ও এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে এলাকাগুলোতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। এলাকাগুলোতে চরম থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে।

তিনি দাবি করেন, ভোলা জেলাধীন চরফ্যাশন উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির এজেন্টদেরকে ভোটকেন্দ্র থেকে অস্ত্রের মুখে বের করে দেয়া হয়েছে। মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নেরও একই অবস্থা। বোরহানউদ্দিন উপজেলার ৭টি এবং দৌলতখান উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের সবকটিতে সকল ভোটকেন্দ্র দখল করে নিয়েছে আওয়ামী কর্মীরা।

তিনি জানান, দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউপি নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থী ও ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আলম মেম্বারের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে তাকে গুরুত্বর আহত করেছে আওয়ামী কর্মীরা। গুরুত্বর আহত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

রিজভী বলেন, বরিশাল জেলাধীন গৌরনদী ও আগৈলঝরায় ১২টি ইউনিয়নের সমস্ত ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের জোর করে বের করে দিয়েছে আওয়ামী কর্মীরা। প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই। মুলাদী, হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সবকটি ভোটকেন্দ্র দখল করে নিয়েছে আওয়ামী কর্মীরা। ভোটকেন্দ্রগুলো থেকে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। প্রশাসন প্রতিকারের পরিবর্তে উল্টো সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করছে।

রিজভীর দাবি, বাগেরহাট জেলাধীন মংলা, রামপাল, স্মরণখোলা, ফকিরহাট, মোড়েলগঞ্জ, কচুয়া ও সদর উপজেলার সবকটি ইউপি নির্বাচনে সকল ভোটকেন্দ্র দখল করে নিয়েছে আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। ভোটকেন্দ্রগুলো থেকে বিএনপি’র এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। স্মরণখোলা উপজেলাধীন রায়েন্দা ইউপি নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী মানিকের বাসার সামনে এবং ইউনিয়ন বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এনায়েতের বাসার সামনে গতরাতে বোমা ফাটিয়েছে আওয়ামী কর্মীরা। এলাকায় চরম ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে।

তিনি বলেন, পিরোজপুর জেলাধীন মঠবাড়িয়া উপজেলার ১০টি ইউপি নির্বাচনে গতরাত থেকেই সবকটি ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে ব্যালট পেপারে সিল মারছে আওয়ামী কর্মীরা। ভোটকেন্দ্রগুলো থেকে বিএনপি’র এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় এলাকাগুলোতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ব চরম আকার ধারণ করেছে।

রিজভীর অভিযোগ, যশোরের মনিরামপুর উপজেলার প্রায় সবকটি ইউপি নির্বাচনে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র দখল করে নিয়েছে আওয়ামী কর্মীরা । সে সমস্ত ভোটকেন্দ্রে বিএনপি এজেন্টদের এবং সমর্থক ভোটারদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।

এ সময় সিইসির পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, প্রশাসনের কাঙ্খিত সহযোগিতা পাচ্ছি না। যদি তাই হয় তাহলে জনগণের প্রশ্ন আপনারা (নির্বাচন কমিশন) পদত্যাগ করছেন না কেন?

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম প্রমুখ।
২২ মার্চ ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে