বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:৪২:১১

বিএনপির ২০০ নেতা ঢাকায়, দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টায় আওয়ামী লীগ

বিএনপির ২০০ নেতা ঢাকায়, দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টায় আওয়ামী লীগ

মহিউদ্দীন জুয়েল, চট্টগ্রাম থেকে : এক মাস ধরে চট্টগ্রামে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বিরত রয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলীয় কাউন্সিলকে ঘিরে হঠাৎ করে সাংগঠনিক তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় শীর্ষ পদে ঠাঁই পেতে এ মুহূর্তে ঢাকায় অবস্থান করছেন দলটির অন্তত ২০০ নেতা।

অন্যদিকে তার বিপরীত চিত্র নগর আওয়ামী লীগে। বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাপ ছড়ানো মহিউদ্দিন চৌধুরী ও এমপি লতিফের দ্বন্দ্ব দিন দিন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। প্রকাশ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামে দলের এমপি ও মন্ত্রীরা। নগর বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, এ মুহূর্তে চট্টগ্রামে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই দুর্বল। বিশেষ করে মহানগর কমিটিতে।

সর্বশেষ মেয়র নির্বাচনের সময় বিএনপির নেতাদের একসঙ্গে কাজ করতে দেখা গেছে। ঢাকায় কেন্দ্রীয় কমিটির স্থায়ী সদস্য, ভাইস  চেয়ারম্যান, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিবসহ একাধিক পদে জায়গা করে নিতে চট্টগ্রাম থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেছেন অনেক নেতা। যদিও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলেও এখনও ঘোষণা করা হয়নি বিএনপির নতুন মুখ।

চট্টগ্রাম থেকে স্থায়ী কমিটিতে এবার দেখা যাওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর। তাদের জায়গায় আরেক ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খানের নাম শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত দুইজনকে বেছে নেয়া হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। এই মুহূর্তে দলীয় পদের জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন বিএনপির আরও অনেক নেতা।

পাশাপাশি বিএনপি নেতা মীর নাছির ভাইস চেয়ারম্যান, দক্ষিণ জেলার সভাপতি জাফরুল ইসলাম চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক গিয়াস কাদের যুগ্ম মহাসচিব, নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনকে স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক, আসলাম চৌধুরীকে সহ থেকে পূর্ণাঙ্গ সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জায়গা দেয়া হতে পারে বলে আলাপ-আলোচনা চলছে চট্টগ্রামে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আমি এখন ঢাকায় আছি। স্থায়ী কমিটির বিষয়ে কিছু জানি না। কখনো পদের জন্য রাজনীতি করিনি। তবে বিগত সময়ে  দেশের বিভিন্ন নির্বাচনসহ একাধিক কর্মসূচিতে কেমন কাজ করেছি তা নেত্রী জানেন। উনি যোগ্য মনে করলে হয়তো দেবেন।’

অন্যদিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দলের দুঃসময়ে আমি নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে ছিলাম। অনেক মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। আপনারা যা শুনেছেন আমিও তাই শুনেছি। বেশি কিছু জানি না। চট্টগ্রাম বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন, দলীয় শীর্ষ পদে এখান থেকে সিনিয়র নেতাদের জায়গা হলে ঝিমিয়ে পড়া দলীয় কর্মকাণ্ড হয়তো আবার চাঙ্গা হবে। সুসংগঠিত হয়ে মাঠে আবারও তৎপর হতে পারে দলটি। তবে পুলিশি হয়রানি ও পুরনো মামলায় কতটুকু আন্দোলন জমবে তাই নিয়ে শঙ্কা অনেকের।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমপি লতিফ ও মহিউদ্দিন চৌধুরীর দ্বন্দ্ব দিন দিন ঘনীভূত হওয়ায় বিরোধ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। তবে মহিউদ্দিনের পক্ষ নিয়ে এমপি লতিফের বিরুদ্ধে দায়ের করা একাধিক মামলা থেকে তাকে রেহাই দিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একটি দল পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে একজন নেতা জানান।

যদিও মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, এই ঘটনায় লতিফকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। নইলে আন্দোলন চলবে। চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃত করার ঘটনায় সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এমএ লতিফ ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর দ্বন্দ্বে ইমেজ সংকটে পড়েছে আওয়ামী লীগ। দুই নেতাকে নিয়ে শিগগিরই দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বৈঠক করতে পারেন বলে গুঞ্জন চলছে বন্দর নগরীতে।

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে লতিফ ইস্যুকে ঘিরে আবারও প্রকাশ্যে বিভেদ দেখা গেলো। এই অবস্থায় দলটির কেন্দ্র থেকে ইতিমধ্যে পরিস্থিতি নিরসনে এমপি লতিফ ও মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের দুইজন শীর্ষ নেতা জানান, গত একমাসেরও বেশি বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করার ঘটনা নিয়ে একের পর এক যা হচ্ছে তাতে বিব্রত আওয়ামী লীগ। বিষয়টি সভানেত্রী শেখ হাসিনার কানেও গেছে। তিনি ঘটনাটি শুনেছেন।

এই বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতারা ফোন করেছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী ও এমএ লতিফকে। তাদের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে মহিউদ্দিন চৌধুরী কিছুতেই লতিফের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে সরবেন না। অন্যদিকে লতিফের পক্ষে ৭ জন এমপি দাঁড়িয়ে যাওয়ায় দিন দিন কাদা ছোড়াছুড়ি অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা তাদের। -এমজমিন
২৩ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে