বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৬, ১১:২১:০২

বাংলাদেশে রাজকোষ চুরির ঘটনা নতুন মোড় নেবে ফিলিপাইনে!

 বাংলাদেশে রাজকোষ চুরির ঘটনা নতুন মোড় নেবে ফিলিপাইনে!

নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজকোষ চুরির ঘটনা কি ফিলিপাইনে নতুন কোন মোড় নেবে! এ ঘটনার ‘মূল নায়ক’ হিসেবে যে কিম ওংকে সন্দেহ করা হচ্ছে তিনি সিঙ্গাপুর থেকে ফিলিপাইনে ফিরেছেন। বলেছেন, পাচার হওয়া প্রায় ১০০ কোটি পেসো তার কোম্পানির একাউন্টে জমা করেছিলেন চীনা এক জুয়াড়ি। তবে ওই জুয়াড়ির নাম তিনি প্রকাশ করেন নি। আগামী ২৯শে মার্চ সিনেটে যে শুনানি আছে তাতে তিনি উপস্থিত থাকবেন এবং সব তথ্য প্রকাশ করে দেবেন। তার বিরুদ্ধে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) জুপিটার শাখার বরখাস্তকৃত ম্যানেজার মায়া সান্তোস দেগুইতো যে অভিযোগ এনেছেন তা অস্বীকার করেছেন কিম ওং। ইতিমধ্যে ফিলিপাইনের এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) চীনা বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী কিম ওং ও ওয়েইকাং সুুর নামে মামলা করেছে। ফিলিপাইনের সাংবাদিক র‌্যামোন তুলফোর সঙ্গে কিম ওং বুধবার ফোনে কথা বলেছেন। এ সময় তিনি বলেছেন, এ অর্থ পাচার সংক্রান্ত যত তথ্য তিনি জানেন তা প্রকাশ করে দেবেন। কিম ওং একজন রেস্তোরাঁ মালিক ও জাঙ্কেট অপারেটর। তিনি ফোনে বলেছেন, আমি কোথাও পালাই নি। উল্লেখ্য, অর্থ পাচারের বিষয়টি ধরা পরার পর কিম ওং সিঙ্গাপুরে চলে যান। তাকে সিনেট ব্লু রিবন কমিটিতে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তার আইনজীবি কমিটিকে জানান, তার মক্কেল কিম ওং চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন। তার সিঙ্গাপুর যাওয়ার এই সময়কাল নিয়েও বেশ সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তিনি অসুস্থ এমন কথা এর আগে কেউ বলেন নি। তাহলে হঠাৎ করে কি এমন হলো যে তাকে চিকিৎসা নিতে সিঙ্গাপুর যেতে হলো! গুজব ওঠে, তিনি আইনের হাতকে ফাঁকি দিতে পালিয়ে গেছেন সিঙ্গাপুর। ফিলিপাইনে সিনেট ব্লু রিবন কমিটি, এএমএলসির তদন্ত অনুযায়ী বাংলাদেশের চুরি যাওয়া অর্থ জমা হয়েছিল কিম ওংয়ের একাউন্টে। এখন তিনি কি সে দায় থেকে নিজেকে মুক্ত করতে ‘চীনা জুয়াড়ি’র আশ্রয় নিচ্ছেন! এমন নানা প্রশ্ন চারদিকে। কেউ বলছেন, তিনি সিঙ্গাপুরে বসে এতদিন নিজেকে রক্ষার কৌশল এঁটেছেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘চীনা জুয়াড়ি’র প্রসঙ্গ এনেছেন। ওদিকে কিম ওং বলেছেন, তিনি পালান নি। কিম ওং ও ওয়েইকাংয়ের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হ্যাকিং করে চুরি করার অভিযোগ করেছে ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস। এ নিয়ে আগামী ২৯শে মার্চ স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় শুনানি হবে সিনেটে। সেখানে কিম ওংকে তলব করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ফিলিপাইন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পিআর ৫১০-এ করে রোববার স্থানীয় সময় বিকাল চারটায় সিঙ্গাপুর থেকে ফিলিপাইনে পৌঁছেছেন। সিঙ্গাপুরে তিনি এক্সিকিউটিভ মেডিকেল চেকআপ করাতে গিয়েছিলেন। কিম ওং বলেন, আমি (অর্থ পাচার সম্পর্কে) যা জানি তার সবই বলব। কোন গোপনীয়তা রাখবো না। আরসিবিসির জুপিটার শাখার বরখাস্তকৃত ম্যানেজার মায়া সান্তোস দেগুইতো তার বিরুদ্ধে চার জনের নামে একাউন্ট খোলার যে অভিযোগ এনেছেন তাও অস্বীকার করেন কিম ওং। দেগুইতো আরও অভিযোগ করেছেন, কিম ওং আরসিবিসির জুপিটার শাখায় ব্যবসায়ী উইলিয়াম সো গোর জন্য আরেকটি একাউন্ট খুলেছেন। কিম ওং ও উইলিয়াম সো গো বন্ধুৃ। এ কথা স্বীকার করেছেন কিম ওং। তবে দু’জনের মধ্যে প্রায় ১০ বছর দেখাসাক্ষাত নেই বলে দাবি কিম ওংয়ের। এ বিষয়ে মায়া সান্তোস দেগুইতোর দিকে প্রশ্ন ছোড়েন কিম ওং। তিনি বলেন, আরসিবিসি থেকে পাচার করা অর্থের অংশ বিশেষ উইলিয়াম সো গোকে উত্তোলন করতে দেয়ার অনুমতি যখন দেয়া হয়েছিল তখন কেন এত বিশাল অংকের অর্থ উত্তোলনের রিপোর্ট এএমএলসিতে করেন নি দেগুইতো? কিম ওং আরও বলেন, পাচার হওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার থেকে ১৩৭ কোটি ৪০ লাখ পেসো স্থানান্তর হয়েছে সোলাইর ক্যাসিনোতে। এ টাকা এনেছিলেন তার একজন ক্লায়েন্ট। তিনি চীনের একজন উচ্চ পর্যায়ের জুয়াড়ি। কিম ওং বলেছেন, তিনি ইস্টার্ন হাওয়াই লিজার কোম্পানি লিমিটেডের মালিক। এ কোম্পানির একাউন্টে ১০০ কোটি পেসো স্থানান্তরিত হয়। সেই অর্থ ম্যানিলায় মাইডাল হোটেলের ক্যাসিনোতে ব্যবহৃত হয়েছে। কিম ওং বলেন, ইস্টার্ন হাওয়াই লিজারের একাউন্টে যাওয়া অর্থ দিয়ে তার কিছুই করার ছিল না। কারণ, ওই অর্থ এনেছেন চীনের একজন জুয়াড়ি।
উল্লেখ্য, কিম ওং বেশ কয়েকটি পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, এসব পাসপোর্ট ভানুয়াতু, চীন ও তাইওয়ানের। এগুলো বিনিয়োগ সংক্রান্ত পাসপোর্ট।  এসব পাসপোর্টে আলাদা নাম ব্যবহার করা হয় নি। সবগুলোতেই আমার নাম কিম ওং লেখা আছে। যদি আমি ক্রিমিনাল হতাম তাহলে এক একটি পাসপোর্টে এক এক রকম নাম লেখা থাকতো।-এমজমিন
২৪ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে