শনিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৬, ০২:৩৮:৫৫

জেলার কর্তৃত্ব হারাচ্ছেন বিএনপির অর্ধশত নেতা

জেলার কর্তৃত্ব হারাচ্ছেন বিএনপির অর্ধশত নেতা

মাহমুদ আজহার : গঠনতন্ত্রে এক নেতার এক পদের বিধান যুক্ত হওয়ায় জেলার নেতৃত্ব হারাচ্ছেন বিএনপির অর্ধশত নেতা। তৃণমূলে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ বিধান চালু করছেন। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাঙ্গা মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে।

তবে পদছাড়া নেতাদের বড় একটি অংশের মধ্যে শঙ্কাও বিরাজ করছে। জেলার দায়িত্বে না থাকলে তৃণমূল হাতছাড়া হয়ে যায় কি না—তা নিয়ে সংশয়ে একাধিক পদধারীরা। গঠনতন্ত্রে যুক্ত হওয়ার আগে এ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেন বিএনপি প্রধান। সবার সম্মতি নিয়েই এ বিধান চালু করা হচ্ছে।

এক নেতার এক পদ কার্যকর প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গঠনতন্ত্রে এ বিধানাবলি চালু হওয়ার পর থেকেই বিষয়টি কার্যকর হবে। যারা একাধিক পদে আছেন, তারা একটি রেখে বাকি পদগুলো থেকে পদত্যাগ করবেন। এতে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে। দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে আরও গতি আসবে। গত ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করা হয়।

দলের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তনের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল ‘এক নেতার এক পদ।’ সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কোনো নেতা এক পদের  বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় কোনো নেতা কোনো অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কিংবা জেলা বা মহানগর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে থাকতে পারবেন না। তবে চেয়ারপারসন বিশেষ বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম অনুমোদন করতে পারবেন। সেটা হবে সাময়িক, সংখ্যায় খুবই কম।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি ও কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকা মহানগর বিএনপির এক নম্বর সদস্য। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুও ঢাকা মহানগর কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক। দলের ভাইস  চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী পটুয়াখালী  জেলার সভাপতি।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি, শামসুজ্জামান দুদু কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জ জেলার সভাপতি, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান টাঙ্গাইল জেলার সভাপতি, এম এ মান্নান ঢাকা জেলার সভাপতি, অধ্যাপক মাজিদুল ইসলাম খুলনা জেলা সভাপতি পদে রয়েছেন। যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর কমিটিতে যুক্ত।

মিজানুর রহমান মিনু রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও মোহাম্মদ শাজাহান নোয়াখালী জেলার সভাপতি। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন গাজীপুর জেলার সভাপতি, অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশাল মহানগরের সভাপতি, মসিউর রহমান ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি এবং আসাদুল হাবিব দুলু লালমনিরহাট জেলার সভাপতি পদে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে থাকা নেতাদের মধ্যে বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা রাজশাহী জেলা সভাপতি, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক সেনবাগ উপজেলার সভাপতি।

যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুবদলের সভাপতি। স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোর জেলার সভাপতি। শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন নরসিংদী জেলার সভাপতি। স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক হাবিব-উন নবী খান সোহেল ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি। ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী আহমেদ রুমী কুষ্টিয়া জেলার  সভাপতি। স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক আবদুল হাই মুন্সীগঞ্জ  জেলা সভাপতি। শিল্পবিষয়ক সম্পাদক এ কে এম মোশাররফ হোসেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা সভাপতি।

সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূঁইয়া লক্ষ্মীপুর জেলা সভাপতি। সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা মহানগর সভাপতি। সহসাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আহ্বায়ক। সহশিল্পবিষয়ক সম্পাদক জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া ফরিদপুর জেলার সভাপতি। সহপল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক মোজাহার আলী প্রধান জয়পুরহাট জেলার সভাপতি। সহআইনবিষয়ক সম্পাদক তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ  জেলা সভাপতি। অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী মাগুরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক।

কেন্দ্রীয় সহকৃষিবিষয়ক সম্পাদক আমিন উর রশীদ ইয়াসিন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক। সহশিল্পবিষয়ক সম্পাদক এম এ মালেক জাসাস সভাপতি। সহমহিলাবিষয়ক সম্পাদক নুরী আরা সাফা মহিলা দলের সভানেত্রী। সহমহিলাবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা। সহমুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।

এ প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এক নেতার এক পদ গঠনতন্ত্রে যুক্ত হওয়ায় দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা সহজ হবে। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা নিয়ে তৃণমূলে যে বিরোধ রয়েছে, তাও অনেকটা কমে যাবে। নানা কারণে যারা এতদিন দলের সামনের সারিতে জায়গা পাননি এবার তাদের মূল্যায়ন করা হবে। যোগ্যতা অনুসারে তাদের পদ-পদবি দেওয়া হবে।

রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা বলেন, দলকে শক্তিশালী করতে এর বিকল্প নেই। দলে এখন অনেক যোগ্য নেতারা রয়েছেন। তাদের জায়গা করে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। এক নেতার এক পদ গঠনতন্ত্রে যুক্ত হওয়ায় দলের মূল প্রোডাক্ট ছাত্রদল যুবদলের সাবেক নেতারা গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন। -বিডি প্রতিদিন

২৬ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে